নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১২ নভেম্বর, ২০১৯

‘ভবিষ্যৎ’ ঘোরে ফুটপাতে রেললাইনের ধারে

আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এই সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাও চায় মানুষের মতো মানুষ হতে। তারাও চায় পড়াশোনা করতে। অন্য ৮/১০টা শিশুর মতো তারাও হাসি খুশি থাকতে চায়। তাদেরও অনেক স্বপ্ন। কিন্তু তারা প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগ পাচ্ছে না। তবে পথশিশুদের পুনর্বাসনে কাজ করছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা। রয়েছে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প ও কার্যক্রম। তবুও পথেই দেখা যায় শিশুদের। এদিকে, এসব শিশু নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর কারো কাছে নেই সঠিক পরিসংখ্যান।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, পরিসংখ্যান ছাড়া প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সুফল পাবে না সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা। কখনো ফুটপাতে কখনো বা রেললাইনের ধারে আবার কখনো বা কোনো গাছের নিচেই আশ্রয় খুঁজে নেয় পথশিশুরা। সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশু আসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। কেউ পথ হারিয়ে আবার অনেকেরই রয়েছে জীবনের অন্যরকম গল্প। এ ধরনের শিশুদের জন্য সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম ও প্রকল্প থাকলেও অনেকেই বঞ্চিত এসব থেকে।

এসব শিশু অনেকে মাদকের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে জানে না। আর যখন তারা জানতে পারেন তত দিন পথশিশুদের মাদক গ্রাস করে ফেলে। মাদকে আসক্ত হয়ে যখন তাদের চিকিৎসা নেয়ার মতো টাকা থাকে না তখন করুণ মৃত্যু ঘটে। পথশিশুদের সঠিক সংখ্যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও বেসরকারি সংস্থা কারো কাছে তথ্য নেই।

তবে সোশ্যাল ইকোনমিক ইনহ্যান্সমেন্ট প্রোগ্রাম-সিপের উদ্যোগে টেরিডেস হোমস নেদারল্যান্ডস সংস্থার সূত্র মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ৭৯ লাখ। এদের মধ্যে ৪৫ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। এসব শিশু শ্রমিকের মধ্যে ৬৪ লাখ গ্রামাঞ্চলে এবং বাকি ১৫ লাখ শহরে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। তবে জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সূত্র মতে মাদকাসক্ত শিশুদের ৩০ শতাংশ ছেলে এবং ১৭ শতাংশ মেয়ে। ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সি ছেলে এবং মেয়ে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রচ- ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পথশিশুদের ৫১ ভাগ ‘অশ্লীল কথার শিকার’ হয়। শিশু নির্যাতনের শিকার হয় ২০ শতাংশ।

মহিলা ও শিশু অধিদফতর ৩ কোটি টাকা বাজেটে ২০১৬ সালে থেকে পথশিশু পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করে। এ কার্যক্রমের আওতায় রয়েছে দুটি শেল্টার হোম ও ৯টি উন্মুক্ত বিদ্যালয়। কর্তৃপক্ষ এখানে প্রতিদিন ৮০ জন শিশুর উপস্থিতির কথা জানালেও সরেজমিনে ৩৫ জন শিশুকে পাওয়া যায়। এদিকে, এ কার্যক্রমের পরিচালকের কাছে নেই পথশিশু বিষয়ক কোনো পরিসংখ্যান।

মহিলা ও শিশু অধিদফতরের ডিরেক্টর আবুল হোসেন বলেন, সারা দেশে ৫ হাজার প্লাস শিশু আছে। তার মধ্যে ঢাকাতেই বেশি। ৭ হাজার শিশু ২০১৬ সালে জানুয়ারি থেকে আমার কাছে এসেছিল।

আর পথশিশুদের পরিসংখ্যান ছাড়া কীভাবে এদের উন্নয়নে কার্যক্রম চলছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিশু ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পরিচালক আবদুস শহীদ মাহমুদ বলেন, শিশুরা যদি পথেই থাকে এই প্রকল্প কাগজে আছে বাস্তবে নেই। অথবা বাস্তবে আছে কিন্তু তার সফল নেই। এই প্রকল্পের কাজ কি এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।

শিশু ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদা বানু বলেন, যখন আপনার কোনো সংখ্যা নেই পরিসংখ্যান নেই আপনি জানেন না পথশিশুদের জন্য কত টাকা ব্যয় করবেন। তখন কোনো প্রকল্প ধার্য করা হচ্ছে সেই জায়গাটাতে আসলে অনেক ধরনের দুর্নীতি করার সুযোগ থাকে। দিন দিন এসব সুবিধাবঞ্চিতরা জড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের অপরাধ কর্মকা-ে। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা এসব পরিবারহীন শিশুদের সংখ্যা বেড়ে কয়েক গুণ হয়েছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close