নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৯ নভেম্বর, ২০১৯

ছিঁচকে চোর থেকে সন্ত্রাসী হাত বাড়ালেই অবৈধ অস্ত্র

নদীতে গোসলের নামে অস্ত্রের আমদানি

আইনশৃঙ্খলা কড়াকড়ির মধ্যেই দেশে ঢুকছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। চলে যাচ্ছে নানা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে। এক অবৈধ অস্ত্র কারবারি জানায়, এখন অবৈধ অস্ত্রের চাহিদা কিছুটা কম থাকলেও নির্বাচনসহ বিভিন্ন উপলক্ষে কখনো কখনো বাড়ে। পুলিশ বলছে, অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার রোধ করতে না পারার বিষয়টি ভাবাচ্ছে তাদেরও। তবে নজরদারি অব্যাহত আছে। ছিঁচকে চোর থেকে বড় সন্ত্রাসী, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র সবার হাতেই। যেগুলোর বেশির ভাগই বিদেশি।

সূত্র বলছে, সীমান্তে কড়াকড়ির পরও প্রতিবেশী দেশ থেকে ঢুকে যাচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র। সময় সংবাদের কথা হয় এমন এক অবৈধ অস্ত্র কারবারির সঙ্গে। সীমান্তবর্তী যশোরের পুটখালির ছোট্ট ইছামতি নদী দিয়ে কীভাবে আসে অস্ত্রের চালান। কীভাবে আসে রাজধানী পর্যন্ত- পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি। তিনি জানান, একসময় সীমান্তে গরু ব্যবসা করতেন। সেই সূত্রে পরিচয় হয় কয়েকজন ভারতীয়ের সঙ্গে। পুটখালির এক প্রভাবশালী ব্যক্তির মাধ্যমে প্রস্তাব পান অবৈধ অস্ত্র ব্যবসার।

তিনি আরো বলেন, ঢাকা থেকে পিস্তল কেনার প্রস্তাব পাই। প্রথমে আমি রাজি হয়নি। কিন্তু টাকা বেশি দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে অস্ত্র নেয়। প্রতিটি ছোট আগ্নেয়াস্ত্র ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় কিনে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। টাকার লেনদেন হয়েছে স্থানীয় মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে। নদীর এপার বাংলাদেশ, ওপারে ভারত। সেখানে গাছের পাতার নিচে অস্ত্র আছে। সেখান থেকে আনা-নেওয়া শুরু।

পুলিশ বলছে, অবৈধ অস্ত্রের বাজার বিষয়ে সতর্ক তারা। সম্প্রতি এক অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। প্রয়োজনে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে তথ্য বিনিময়ের কথাও জানালেন। গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ভারত থেকে নিয়ে আসা। টাকা-পয়সা দেওয়া, পরিবহন করে নেওয়া বেশ কয়েকজন জড়িত আছে। আমরা তাদের গ্রেফতার করার জন্য অভিযান চালাব। পুলিশ আরো বলছে, অবৈধ অস্ত্র একদিকে যেমন জননিরাপত্তার জন্য হুমকি; অপরদিকে এসবের ব্যবহারে অপরাধীরা নষ্ট করছে সামাজিক স্থিতি। তাই এ ব্যাপারে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুর মডেল থানার কোরিয়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সামনে থেকে অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মো. হাফিজুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগের একটি টিম। এ বিষয়ে মশিউর বলেন, গত সোমবার দুপুরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছে থাকা চারটি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১৭ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার হাফিজুর রহমান তার সহযোগী মো. হাবিবুর রহমান বিশ্বাস ও জিল্লুরের মাধ্যমে ভারত থেকে বেনাপোল হয়ে চোরাই পথে অবৈধ অস্ত্র-গুলি বাংলাদেশে আমদানি করত।

তিনি আরো বলেন, অস্ত্র-গুলি প্রথমে বিহার থেকে কলকাতার অস্ত্র ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় যেকোনো গোপন স্থানে রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের প্রয়োজন মতো ও দর কষাকষি চূড়ান্ত হলে কলকাতার উত্তর চব্বিশ পরগনা আংরাইল নামক সীমান্তবর্তী গ্রাম ও বাংলাদেশের বেনাপোল পুটখালী গ্রামের নদীতে গোসল করার কৌশলে অবৈধভাবে অস্ত্র নিয়ে আসা হয়। তারপর সুযোগ বুঝে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী অস্ত্রগুলো সীমান্তের গোপন স্থান থেকে বের করে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে পৌঁছে দেয়।

মশিউর বলেন, তাদের এ অস্ত্র সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, জঙ্গিগোষ্ঠী, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিসহ নানা ধরনের নাশকতামূলক বা সন্ত্রাসী কার্যকলাপে ব্যবহার হয়ে থাকে। হাবিবুরের মাধ্যমে ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনার বনগ্রাম গ্রামের জাহাঙ্গীর নামক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করলে জাহাঙ্গীর প্রত্যেকটি অস্ত্রের জন্য ৩০ হাজার করে টাকা নিয়ে থাকে। যার বিনিময়ে জাহাঙ্গীর ভারত থেকে অস্ত্র-গুলি সরবরাহ করে থাকে। সরবরাহ করা অস্ত্র বাংলাদেশে এনে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে উচ্চদামে বিক্রয় করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close