এস এইচ এম তরিকুল, রাজশাহী

  ০৭ নভেম্বর, ২০১৯

রাজশাহীতে মাদক কেনাবেচা নিয়ন্ত্রণহীন

জিরো টলারেন্সের ধারাবাহিকতা নেই

সীমান্তবর্তী অঞ্চল রাজশাহীতে ছড়িয়ে পড়েছে মাদক। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মাদক কারবারি ও মাদকসেবীর সংখ্যা। কেনা-বেচাও হচ্ছে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে। এখান থেকে মাদক চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন রুটে। এসব কাজে জড়িয়ে পড়েছে যুবসমাজ। সবমিলে রাজশাহী অঞ্চলে মাদক এখন নিয়ন্ত্রণহীন। বিপুল মাদকের জোগানের কারণে হাত বাড়ালেই যে কেউ পেয়ে যাচ্ছে মাদক। মাদক পরিবহনের কাজে দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বেকার যুবক এবং অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে হিজড়াদের। এ ক্ষেত্রে রাজশাহীতে সরকারের জিরো টলারেন্সনীতির ধারাবাহিকতা না থাকায় মাদক নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম কোনো কাজেই আসছে না বলে মনে করেন অনেকে। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে কয়েকজন মাদক কারবারি নিহত হলে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে তারা।

বেসরকারি একটি সংস্থার জরিপ মতে, শতাধিক হিজড়া গোষ্ঠী বর্তমানে মাদকদ্রব্য পরিবহনে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হয়ে গেছে। আর বাকি দুই শতাধিক হিজড়া তাদের এ কাজে সহযোগিতা করছে। তারা নিজেরাও মাদক সেবন করে থাকে আর অন্য মাদকসেবীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করারও অভিযোগ রয়েছে। এতে মরণব্যাধি এইডসসহ নানা ধরনের রোগ ছড়ানোরও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার টাঙ্গন, ইউসুফপুর, পিরোজপুর, রাওথা মীরগঞ্জ ও গোদাগাড়ী উপজেলার চরআষাড়িয়াদহ, চরভুবনপাড়া, চরকানাপাড়া, আমতলা, কোদালকাটি কদমহাজীর মোড়সহ অন্যান্য পয়েন্ট হল মাদকদ্রব্য আসার রুট। এক শ্রেণির দালাল প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চোরাচালানিদের অবৈধ মালামাল পাচারে সহযোগিতা করে থাকে। যে কারণে মাদক ব্যবসা বা পাচার কোনোভাবেই বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিমত রয়েছে। এর প্রভাবে যুবসমাজ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ায় অভিভাবকরা রয়েছেন চরম উদ্বেগে। চোখের আড়ালে প্রিয় সন্তান যখন নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে, তখন আর কিছুই করার থাকে না। তাই মাদক বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি করেছেন রাজশাহীর সর্বস্তরের অভিভাবকরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মাদক কারবারি জানায়, গোদাগাড়ী ও চারঘাট-বাঘা এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি। প্রায় সারা দেশের মাদকের জোগান দিতে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অথবা ম্যানেজ করে মাঠপর্যায়ে মাদকের পাচারের কাজ চালিয়ে থাকে। মাদক কারবার থেকে পিছিয়ে নেই চা-স্টল ও মুদি দোকানিরাও। হাত বাড়ালে সেখানেও মেলে মাদক। নিত্যপণ্য বিক্রির আড়ালে চলে মাদক বিক্রি। দিন দিন বাড়ছে প্রাপ্তবয়স্কের পাশাপাশি অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর-বালকরাও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। বর্তমানে স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যেও অবাধে বিক্রি হচ্ছে মাদক। তরুণ-তরুণী, শিক্ষার্থী, শ্রমিকসহ সর্বস্তরেই ছড়িয়ে গেছে মাদকের ব্যবহার। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে পথের টোকাইরাও মাদকের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। সূত্র মতে, রাজশাহী নগরীর গুড়িপাড়া, কাশিয়াডাঙ্গা, ভাটাপাড়া রেললাইন বসতির অলিগলি থেকে শুরু করে অভিজাত এলাকার সর্বত্রই ঘটেছে মাদকের বিস্তার। এমন কোনো পাড়া-মহল্লা নেই যেখানে মিলবে না মাদকদ্রব্য। পুলিশ প্রশাসনের অসাধু কর্তাবাবুদের ম্যানেজ করেই চলছে মাদক ব্যবসা ও সেবন কার্যক্রম চলছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। মাদকের বিস্তার রোধে আইনশৃঙ্খলা কমিটির প্রতিটি মিটিংয়েই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও উল্লেখযোগ্য ফলাফল নেই বললেই চলে। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের সঙ্গে সাপ্তাহিক বা মাসিক চুক্তির বিনিময়ে মাদক ব্যবসায়ীরা অনেকটা নিরাপদেই চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ব্যবসা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close