ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

  ২৯ অক্টোবর, ২০১৯

‘মা’ হলো ধর্ষণের শিকার ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী

ঠাকুরগাঁওয়ে ধর্ষণের শিকার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেয়ে সন্তানের মা হয়েছেন। ঠাকুরগাঁওয়ের মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা মাহফুজা বেগম বলেন, গত রোববার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ১৩ বছরের শিশুটি আমাদের এখানে ভর্তি হয়। সাড়ে ৬টার দিকে স্বাভাবিকভাবেই ওই শিশুটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দেয়। বর্তমানে মা ও মেয়ে দুজনই সুস্থ আছে। শিশুটির বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায়।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মা অভিযোগ করে বলেন, প্রতিবেশী প্রফুল্ল চন্দ্র সিংহের ছেলে মোহিন চন্দ্র সিংহ (২৩) আমাদের বাড়িতে যাতায়াত করত। ২০১৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর প্রতিবেশী মোহিন খেলার কথা বলে আমার মেয়েটিকে তার বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করে এবং বিষয়টি কাউকে না জানাতে হুমকি দেয়। ভয়ে মেয়েটি পরিবারের কাউকে কিছু জানায়নি।

সাত মাস পর বিষয়টি বুঝতে পেরে মেয়েকে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়। পরীক্ষা-নীরিক্ষা করার পর মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা বলে নিশ্চিত হন চিকিৎসকরা। এরপর বিষয়টি স্থানীয়দের জানানো হয়। স্থানীয়রা বিষয়টি নিয়ে চুপচাপ থাকার পরামর্শ দেন। কারণ ধর্ষকের পরিবার হিন্দু সম্প্রদায়ের। তারপরও ঘটনাটি নিয়ে ধর্ষকের পরিবারের কাছে যাই। মেয়েটির মা বলেন, তারা মোহিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সে কিশোরীকে বিয়ের আশ্বাস দেন। কিন্তু পরে বিষয়টি নানা অজুহাতে এড়িয়ে যান।

কিশোরীর গর্ভপাত করানোর জন্য চিকিৎসকের কাছে গেলে চিকিৎসক জানান, এ অবস্থায় গর্ভপাত ঘটালে কিশোরীর মৃত্যুর আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। পরে কিশোরীর বাবা গত ৫ আগস্ট বালিয়াডাঙ্গী থানায় মামলা করেন। মামলার পর মোহিন পালিয়ে যায়।

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে দুপুরে নবজাতককে নিয়ে কিশোরী মা নিজের বাবা-মাসহ বালিয়াডাঙ্গী থানায় হাজির হন। সে সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক আমজাদ হোসেন তাদের বলেন, ‘তোমরা বাচ্চাটিকে নিয়ে ভালো করে রাখো। আমি এর মধ্যে অভিযোগপত্র দিয়ে দেব।’ পরে তারা নবজাতককে নিয়ে বাড়ি চলে যান।

তিনি বলেন, এদিকে মেয়ের জীবনের কথা চিন্তা করে আমরা তার গর্ভের বাচ্চাটি রেখে দিয়েছিলাম। চোখলজ্জা ঢেকে গর্ভের বাচ্চাটিকে এই সুন্দর পৃথিবীর বিশুদ্ধ শ্বাস নিতে পারে তা চেয়েছি। এখন আমার শিশু সন্তানের কোলে আরেকটি মেয়ে শিশু জন্ম হয়েছে। আমরা এখন এই সদ্য জন্ম হওয়া শিশুটি ও আমার মেয়েকে ওই ধর্ষকের পরিবারের কাছে স্থায়ীভাবে দিতে চাই। আমার মেয়ে ও তার শিশু বাচ্চাকে তারা যদি মেনে না নেয় তাহলে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো পথ আমাদের নেই।

এ ঘটনায় ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট স্কুলছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে বালিয়াডাঙ্গী থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলায় মোহিন চন্দ্র সিংহ (২৩), তার ভাই বিদ্যা নাথ চন্দ্র সিংহ (২১), বাবা প্রফুল্ল চন্দ্র সিংহ (৪৮) ও মা শ্রীমতি মিলন বালাকে (৪৫) আসামি করা হয়।

পুলিশ অভিযান চালিয়ে ধর্ষকের বাবা প্রফুল্ল চন্দ্র সিংহকে গ্রেফতার করে। এরপর আদালত থেকে প্রফুল্ল ও তার স্ত্রী মিলন বালা জামিনে মুক্তি পায়। তবে এখন পর্যন্ত পুলিশ ধর্ষক মোহিন চন্দ্র ও তার ভাই বিদ্যা নাথকে গ্রেফতার করেনি। এ ছাড়াও মামলা দায়েরের দুই মাস অতিবাহিত হলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেনি বলে অভিযোগ ধর্ষিতার বাবার।

পঞ্চম শ্রেণির স্কুলছাত্রীর বাবা বলেন, ১৩ বছরের এক ছোট্ট শিশুর সঙ্গে এমন অমানবিক নিষ্ঠুর আচরণ করবে এটা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। নিষ্পাপ শিশুর সঙ্গে এমন আচরণের সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি করেন তিনি। অন্যদিকে তিনি অভিযোগ করেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আমজাদ হোসেন টাকার জন্য এখনো আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেনি।

মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু তোরাব মানিক বলেন, ঘটনাটি আসলেই হৃদয়ে নাড়া দিয়ে উঠে। একটি ছোট্ট শিশুর সঙ্গে এমন আচরণ আমরা কখনোই আশা করি না। আমরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির কঠোর শাস্তির দাবি জানাব বিচারকের কাছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বালিয়াডাঙ্গী থানার এসআই আমজাদ হোসেন বলেন, ঘটনার পর ধর্ষক মোহিন ভারতে চলে যায়। এজন্য তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তারপরও আমরা মূল আসামিকে গ্রেফতারের জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি। অন্যদিকে এই মামলার প্রতিবেদন দুই-এক দিনের মধ্যেই আদালতে দাখিল করা হবে বলে তিনি জানান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close