মো. নূর ইসলাম নয়ন, দিনাজপুর

  ২৫ অক্টোবর, ২০১৯

মৃত্যুর আগে ক্ষোভের চিঠি

রাষ্ট্রীয় মর্যাদাহীন দাফন সম্পন্ন বীর মুক্তিযোদ্ধার

‘জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হঠাৎ যদি আমার মৃত্যু হয়, আমাকে যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন না করা হয়। কারণ এসিল্যান্ড, ইউএনও, এডিসি, ডিসি যারা আমার ছেলেকে চাকরিচ্যুত, বাস্তুচ্যুত করে পেটে লাথি মেরেছে, তাদের সালাম/স্যালুট আমার শেষ যাত্রার কফিনে আমি চাই না। ভুলত্রুটি ক্ষমা করিও। উল্লিখিত বক্তব্য আমার কথা মতো টাইপকৃত।’ হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপির বরাররে এমন একটি চিঠি লেখার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাইল হোসেন। তিনি সদর উপজেলার ৬নং আউলিয়াপুর ইউনিয়নের যোগীবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা। তার চিঠিতে লিখে যাওয়া শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা (গার্ড অব অনার) ছাড়াই দাফন করা হয়েছে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের শেষ বিদায়ের সময় সেখানে বিগউলে বাজেনি বিদায়ের সুর। জানাজার পূর্ব মুহূর্তে ম্যাজিস্ট্রেট মহসীন উদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশ প্রশাসনের চৌকশদল গার্ড অব অনার জানাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। ওই মুক্তিযোদ্ধার লাশ জাতীয় পতাকায় আচ্ছাদিত হয়নি। মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাইল হোসেন পিতৃ ¯েœহে চিঠিতে যা লিখে গেছেন তার মূল কথা হচ্ছে, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপির সুপারিশে ছেলে নুর ইসলামের নো ওয়ার্ক নো পে ভিত্তিতে গাড়িচালক হিসেবে চাকরি হয়। নুর ইসলাম সদর এসিল্যান্ডের গাড়ি চালাতেন। কর্মস্থলে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয় সে। এ নিয়ে তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হুইপ ইকবালুর রহিম এমপির কাছে বিষয়টি অবগত করেন। হুইপকে বিষয়টি অবগত করায় প্রশাসন থেকে প্রথমে নুর ইসলামকে তার বসবাসরত খাস পরিত্যক্ত বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে এসিল্যান্ড সদরের মিসেস নুর ইসলামকে বাথরুম পরিষ্কার ও মাংস রান্না করতে বলেন। মাংস রান্না ঠিক না হওয়াসহ বিভিন্ন অজুহাতে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। পরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকারিয়াকে নিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করতে গেলে জেলা প্রশাসকও ক্ষিপ্ত হয়ে যান। এ ছাড়াও নুর ইসলাম তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে মাফ চাওয়ার জন্য এসিল্যান্ডের স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে ৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও দেখা করতে পারেনি। পরে ফের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপির সঙ্গে দেখা করেন তারা। এতে প্রশাসনের কর্মকর্তারা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে যান। বর্তমানে তার ছেলেটি চাকরিচ্যুত ও বাস্তচ্যুত হয়ে স্ত্রী পুত্র পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তিনি আরো লিখেছেন, ‘জীবন বাজি রেখে অস্ত্র হাতে নিয়ে করা স্বাধীন দেশে আমার ছেলের রুজি রোজগারটুকুও অন্যায়ভাবে কেড়ে নেওয়া হল। গত ২১.১০.২০১৯ থেকে এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি আছি, এই পত্রটি তোমার কাছে লিখছি। তোমার কাছে আমার আকুল আবেদন তুমি ন্যায় বিচার কর। ঠুনকো অজুহাতে আমার ছেলেটিকে চাকরিচ্যুত করায় তাকে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা কর। আমার বয়স প্রায় ৮০ বছরের কাছাকাছি। ছেলেটি হঠাৎ করে চাকরিচ্যুত হওয়ায় শারীরিকভাবে অসুস্থ তারপর মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছি। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হঠাৎ যদি আমার মৃত্যু হয় আমাকে যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন না করা হয়। কারণ এসিল্যান্ড, ইউএনও, এডিসি, ডিসি যারা আমার ছেলেকে চাকরিচ্যুত, বাস্তুচ্যুত করে পেটে লাথি মেরেছে, তাদের সালাম/স্যালুট আমার শেষ যাত্রার কফিনে আমি চাই না।’পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২২ অক্টোবর চিঠিটিতে তিনি স্বাক্ষর করে ডাক যোগে ঢাকায় জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপির বরাবরে প্রেরণ করেন। পরের দিন ২৩ অক্টোবর বেলা ১১টার সময় হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন আবস্থায় মারা যান। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না। মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর খবর পেয়ে প্রশাসন থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করতে যাওয়ার পর বিষয়টি অবগত হই। তিনি বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করতে না দেয়ায় তা প্রদান করা সম্ভব হয়নি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close