নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৪ অক্টোবর, ২০১৯

ক্যাসিনোপণ্য আমদানি

এলসিতে প্রচলিত নিয়মও মানেনি ব্যাংকগুলো

বাংলাদেশের সংবিধানে জুয়া নিষিদ্ধ থাকলেও মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে ‘ক্যাসিনোর সরঞ্জাম’ নাম করে আধুনিক জুয়া ক্যাসিনোর পণ্য আমদানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে চারটি ব্যাংক। শুধু তাই নয়, ‘ক্যাসিনোপণ্য’ নামে আমদানির জন্য ওই ব্যাংকগুলো ঋণপত্র খোলার (এলসি) সময় প্রচলিত নিয়মও মানেনি। এলসি সংক্রান্ত ফাইলপত্র খতিয়ে এই তথ্য উদ্ঘাটন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া, আরো কয়েকটি ব্যাংকের এলসি সংক্রান্ত ফাইলপত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

সম্প্রতি পরিদর্শনে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা এই চার ব্যাংকের মাধ্যমে ক্যাসিনোর পণ্য আমদানি করা চার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পেয়েছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো পুষ্পিতা এন্টারপ্রাইজ, এ থ্রি ট্রিড এন্টারপ্রাইজ, নিনাদ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও এএম ইসলাম অ্যান্ড সন্স। এ ছাড়া, আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে এলসি খুলে ক্যাসিনোসামগ্রী আমদানি করেছে। তদন্তের স্বার্থে ব্যাংকগুলোর নাম প্রকাশ করছেন না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এলসি খোলার সময় ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সতর্ক ছিলেন না। ফলে নামে-বেনামে ক্যাসিনোসামগ্রী আমদানি করা সম্ভব হয়েছে। যেসব ব্যাংকের মাধ্যমে ক্যাসিনো পণ্য আমদানি হয়েছে, তাদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হতে পারে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘চারটি ব্যাংক ছাড়াও আরো অন্তত ছয় থেকে সাতটি ব্যাংককে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এলসি খোলা হয়েছে। এজন্য ব্যাংকগুলোকে সতর্কতার সঙ্গে এলসি খোলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

জানা গেছে, প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কোনো পণ্যের এলসি খোলার সময় পণ্যের নাম, এর শনাক্তরণ নাম্বার, কী কাজে ব্যবহৃত হবে এসব তথ্য উল্লেখ করতে হয়। কিন্তু ক্যাসিনোর আমদানিকারকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খেলাধুলার উপকরণ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব পণ্য আনা হয়েছে চীন থেকে।

রাজধানীর কমলাপুরে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ও বেনাপোল কাস্টম হাউস দিয়েই এসব ক্যাসিনোপণ্য খালাস করা হয়। এদিকে এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে শুল্ক কর ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের দামি ক্যাসিনোসামগ্রী আমদানি করা হয়েছে। ক্যাসিনো মেশিন আমদানি করায় অন্তত ২০ প্রতিষ্ঠানকে তলব করেছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে ক্যাসিনোতে ব্যবহৃত পণ্য আমদানি স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি ২০০৯ থেকে এখন পর্যন্ত ক্যাসিনোসামগ্রীর যন্ত্রপাতি কারা আমদানি করেছে, তা খুঁজে বের করা হচ্ছে। এ ছাড়া, ক্যাসিনোর সরঞ্জাম কিংবা জুয়া খেলার সামগ্রী যাতে বন্দর দিয়ে খালাস না হতে পারে, সেজন্য দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে তা কার্যকর করতে বলেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, এরই মধ্যে ক্যাসিনো পণ্য আমদানি যেন না হয়, সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যারা মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে খেলার সামগ্রী ও বিভিন্ন নামে ক্যাসিনো মেশিন আমদানি করেছে, এবং যেসব ব্যাংক কর্মকর্তা এসব ক্যাসিনো মেশিন আমদানির জন্য এলসি খুলেছেন, তাদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।’ এ ছাড়া, আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর থেকে কাস্টমস, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জে বেশ কিছু ক্যাসিনোসামগ্রী জব্দ করেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close