রাকিবুল রাকিব, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)

  ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

মুরগি পালনে ভাগ্যবদল

‘বছর খানেক আগের কথা। বেকারত্ব ঘোচাতে ঢাকায় মুরগি পালনের প্রশিক্ষণ নেই। প্রশিক্ষণ শেষে বাড়ি ফিরে দেশি মুরগির খামার দেই। প্রথম দিকে ২০ হাজার টাকায় ২০০ পিস দেশি মুরগি বাচ্চা তুলি খামারে। তিন মাস লালন-পালন করে বিক্রি করি ৬০ হাজার টাকা। সেই থেকে শুরু এরপর আমাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দেশি মুরগি আমার ভাগ্যবদল করে দিয়েছে।’

দেশি মুরগি পালন করে নিজের স্বাবলম্বী হওয়ার শুরুর দিকের গল্পটা এ প্রতিবেদকের কাছে এভাবেই বলছিলেন কে আই এগ্রো ফার্মের পরিচালক শামীম আলভী। তার বাড়ি গৌরীপুর পৌর শহরের কালীপুর মধ্যমতর‌্যফ এলাকায়। উপজেলা শহরে জমি ভাড়া নিয়ে দেশি মুরগির খামার করেছেন শামীম। তার খামার থেকে দেশি মুরগির বাচ্চা, ডিম ও মাংসের মুরগির উৎপাদন করে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হয়। গত রোবাবার দুপুরে কে আই এগ্রো ফার্মে গিয়ে দেখা যায় নেট ধারা আবৃত শেড ঘরে দেশি মুরগি লালন-পালন ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রথম শেডে ছোট মুরগির বাচ্চা। দ্বিতীয় শেডে ডিম পাড়া মুরগি। তৃতীয় শেডে মোরগ। তবে মোরগগুলো বিক্রির জন্য নয়, খামারের উন্নত মানের ডিম উৎপাদনের জন্য প্রজননের জন্য রাখা।

শামীম বলেন, খামারের ডিম খাওয়ার জন্য বিক্রি হয় না। এগুলো থেকে বাচ্চা উৎপাদনের জন্য বিক্রি হয়। প্রতিটি বীজ ডিম ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হয়। আর ডিম থেকে ফুটানো বাচ্চা প্রতি পিস ৪০ টাকা বিক্রি হয়। ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদনের জন্য নিজস্ব মেধা খাটিয়ে বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটর তৈরি করেছেন শামীম। খামারের ডিম ইনকিউবেটরে ফুটানোর পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে তিনি ইনকিউবেটর বিক্রি করেন। প্রতিটি ইনকিউবেটরের দাম ২৭ হাজার টাকা।

ইনকিউবেটরে ডিম থেকে ফুটানো বাচ্চা বিক্রির পাশাপাশি নিজ খামারে তিন মাস পালন করেন শামীম। খাওয়া ও পরিচর্যা বাবদ প্রতিটি বাচ্চার পেছনে ১১০ টাকার মতো খরচ হয়। কিন্তু বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।

শামীম বলেন, ব্রয়লার, সোনালি ও কক মুরগি পালনের চেয়ে দেশি মুরগি পালন অনেক সাশ্রয়ী। কারণ দেশি মুরগিগুলো আমাদের আবহাওয়ার সঙ্গে উপযোগী। তাছাড়া খুব বেশি রোগ-পীড়া হয় না। তাই খামরিদের আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা খুব কম থাকে। বছর খানেক আগে ২০ হাজার টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করা শামীমের খামারে এখন ২ লাখ টাকার ওপরে বিভিন্ন বয়সি মুরগি রয়েছে। পাশপাশি স্থানীয় ২৭টি খামারেও মুরগির বাচ্চা ও ডিম সরবরাহ করেন শামীম। প্রতি মাসে সব বাদ দিয়ে তার ৩০ হাজার টাকা লাভ হয়।

দেশি মুরগি পালন করে শামীমের স্বাবলম্বী হওয়ার বিষয়টি অনুপ্রাণিত করেছেন স্থানীয় অনেক বেকার যুবকে। তাদেরই একজন সহনাটি গ্রামের অনার্স পড়–য়া শিক্ষার্থী সাকিব আল হাসান। তিনি বলেন, শামীম ভাইয়ের পরামর্শে আমি বাড়িতে দেশি মুরগির খামার করে লাভের মুখ দেখেছি। এখন নিজেই নিজের পড়াশোনার খরচ চালাই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close