নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

প্রথম অংশ চালু হচ্ছে আগামী সেপ্টেম্বরে

আর্থিক সংকট কেটে যাওয়ায় গতি ফিরেছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজে। এক বছরের মধ্যে বিমানবন্দর থেকে বনানী অংশ চলাচলের জন্য খুলে দিয়ে আড়াই বছরের মধ্যে কুতুবখালী পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার সড়কের জন্য ২৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ৩১টি র‌্যাম্পসহ এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য হবে ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে। কিন্তু অর্থ সংকটসহ নানা জটিলতায় মাঝে দীর্ঘদিন কাজ আটকে থাকায় আট বছরে নির্মাণের অগ্রগতি মাত্র ২২ শতাংশ। অর্থ সংকট কেটে যাওয়ায় এখন দ্রুত কাজ চলছে জানিয়ে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক এ এইচ এম এস আক্তার বলেন, বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত প্রকল্পের প্রথম অংশের কাজের ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী বছরের সেপ্টেম্বর নাগাদ ওই অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া যাবে। আর ২০২২ সালের মার্চের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আমরা আশা করছি। সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, কয়েক দফা সময় বাড়লেও এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের ব্যয় আর বাড়বে না। একনজরে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য : বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত সড়কের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। ২৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ৩১টি র‌্যাম্পসহ মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।

তিন ধাপে কাজ : প্রথম ধাপে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত অংশের দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। দ্বিতীয় ধাপে বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত ৫ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার। তৃতীয় ধাপে মগবাজার রেলক্রসিং থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ৬ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে।

ব্যয় : প্রকল্পের মোট ব্যয় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দেবে ২ হাজার ৪১৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। বাকি টাকা দেবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।

টোল : বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসের টোল ১২৫ টাকা। যেকোনো এক প্রান্তে উঠে যেকোনো র‌্যাম্প ধরে নেমে গেলে সর্বনিম্ন টোল দিতে হবে ১০০ টাকা। বাসের টোল প্রাইভেট কারের টোলের দ্বিগুণ অর্থাৎ ২৫০ ও ২০০ টাকা। ট্রাকের টোল চার গুণ ৫০০ ও ৪০০ টাকা। ট্রেইলারের টোল হবে ছয় গুণ ৭৫০ ও ৬০০ টাকা।

প্রসঙ্গত, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি ইতাল-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির চুক্তি করে সেতু বিভাগ। ওই বছর ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপন করেন। কিন্তু এরপর ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতায় কাজ আটকে থাকে দুই বছর। নকশা পরিবর্তন ও মূল্যস্ফীতির কারণে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করতে হয়। চুক্তি সংশোধনের পর ওই বছরই শুরু হয় ভূমি জরিপ। ২০১৪ সালের ৩০ অক্টোবর এবং ২০১৫ সালের ১৬ আগস্ট দুই দফা এ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করতে না পারায় নির্মাণকাজ তা চলতে থাকে ঢিমেতালে।

প্রকল্প পরিচালক জানান, ইতাল-থাই এ প্রকল্পে দুটি প্রতিষ্ঠানকে অংশীদার হিসেবে নেওয়ার পর তাদের অর্থ সংকট কেটেছে। এখন এ প্রকল্পের ৫১ শতাংশের মালিকানা রয়েছে ইতাল থাইয়ের হাতে। চায়না শেনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কোম্পানি গ্রুপ লিমিটেড ৩৫ শতাংশ এবং সিনো হাইড্রোর ১৪ শতাংশ অংশীদারিত্ব নিয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটি এরই মধ্যে টাকা ছাড় করাও শুরু করেছে বলে এ এইচ এম এস আক্তার জানান। তিনি বলেন, চায়না শেনডং গত ৩১ জুলাই ১১ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন ডলার এবং সিনো হাইড্রো ৫ দশমিক ১৮ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে। এ মাসে এ দুটি প্রতিষ্ঠান ৪০ মিলিয়ন ডলার এবং আগামী মাসে ৭০ মিলিয়ন অর্থ দেবে। এর সঙ্গে ইতাল-থাইও তাদের অংশ দিচ্ছে।

অগ্রগতি : প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রথম ধাপের কাজ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ শেষ করে বনানী পর্যন্ত অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। দ্বিতীয় ধাপের প্রকল্প এলাকার জন্য জমি অধিগ্রহণ শেষ। বনানী থেকে মগবাজার পর্যন্ত বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার কাজও হয়েছে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে তাদের অ্যালাইনমেন্ট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ অংশে এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শুরু হবে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে। আর তৃতীয় ধাপের জন্য জমি অধিগ্রহণ শেষে শুরু হবে নির্মাণকাজ। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ জানায়, এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩৩৩টি পাইল, ৩০৭টি পাইল ক্যাপ, ৯৩টি ক্রস-বিম, ৪১৮টি কলামের মধ্যে ২০১টি সম্পূর্ণ ও ১৩১টি আংশিক, ১৮৬টি আই গার্ডার এবং ১৪টি স্প্যান নির্মাণ শেষ হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close