কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি

  ২৭ জুলাই, ২০১৯

ঐতিহ্যবাহী গোগবাজার এখন বালুমহাল

শতবর্ষ আগের কথা, সে সময় নেত্রকোনার সাইডুলী ও পাটখোরা নদী ছিল খরস্রোতা। ওই নদী দুটির তীরে গড়ে উঠেছিল নেত্রকোনা কেন্দুয়ার কান্দিউড়া ইউনিয়ন বোর্ডের (বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ) ঐতিহ্যবাহী ‘গোগবাজার’ পাটের হাট। এই ঐতিহ্যবাহী হাট থেকে পাট ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসতেন বেপারি ও পাট বিক্রেতারা। বেচাকেনা হতো সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। দেশি-বিদেশি পাট বেপারিরা তাদের কেনা পাট বড় বড় নৌকা বোঝাই করে নদী পথে নিয়ে যেত সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, আশুগঞ্জ, ভৈরবসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এখন সেসবই স্মৃতি, সেখানে স্থানীয় প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছে বালুমহাল। এই পাট মোকামকে কেন্দ্র করে এবং দূরদূরান্ত থেকে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য গোগবাজারে গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন খাদ্যের দোকান। রোববার পাটের হাট বন্ধ থাকত। সে সময় স্থানীয়রা গোগবাজারে আয়োজন করত দেশি-বিদেশি শিল্পীদের নিয়ে লোকসংস্কৃতি অনুষ্ঠান। পরিবেশিত হতো বাউলগান, জারিগান, সারিগান, ভাটিয়ালিগান, যাত্রাপালা, ঘেটুগান এবং নানা লোক সংস্কৃতির আয়োজন।কিন্তু কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী গোগবাজার পাটের হাট। প্রায় ৬০ থেকে ৭০ বছর আগেই বিলীন হয়ে যায়। বর্তমানে সেখানে স্থানীয় প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছে বালুমহাল। হাটের পুরোনো দোকানপাট, ঘরদোর আর নেই, পড়ে আছে শুধু ভিটেমাটি। নদীর গ্রাসে চলে গেছে হাটের একটি অংশ। তাই পুরোনো স্থান পরিবর্তন করে নদীর অপর প্রান্তে কেন্দুয়া-মদন সড়কের দুপাশে গড়ে উঠেছে কিছু দোকানঘর। সেটা পরিচিতি লাভ করেছে ছোট গোগবাজার নামে।একসময় পাটখোরা ও সাইডুলী দুই নদীর সঙ্গমস্থলে একসঙ্গে দুটি উঁচু তালগাছ ছিল, যা অনেক দূর থেকে দেখা যেত। দূরের নৌযাত্রীদের হাটের দিক নির্ধারণ করত ওই তালগাছ দুটি। বর্তমানে তালগাছ দুটিও আর নেই। গোগবাজারের পুরোনো ঐতিহ্য বলতে আর কোনো নিদর্শন নেই। ঐতিহ্যবাহী পাটের হাট সমন্ধে জানতে চাইলে গোগ গ্রামের ইদ্রিস মিয়া, মোসলিম উদ্দিনসহ আরো অনেকেই জানান, তৎকালে দুই নদীর মিলনস্থলে আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসত গোগবাজার পাটের হাট।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসতেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। ওই হাটে ১০ থেকে ১২টি বড় বড় পাটের গুদাম ছিল। হাটের মালিক ছিলেন মূলত স্থানীয় প্রতাবশালী হিন্দু জমিদার ও ব্যবসায়ীরা। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তারা সম্পত্তি ফেলে চলে যান। তার স্থান নেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তারা আরো জানান, ‘৪৭-এর দেশ বিভাগের পর থেকেই মূলত গোগবাজার পাটের হাটটি বিলুপ্ত হতে থাকে। পরে পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু রয়ে যায় গোগবাজার নামক একটি ছোট বাজার। যেখানে বর্তমানে স্থানীয় প্রভাবশালী সাইদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মিয়াসহ বেশ কয়েকজন বালুমহাল গড়ে তুলে ব্যবসা করছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close