নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৬ জুলাই, ২০১৯

ডেঙ্গু : প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে নতুন রোগী

সব রেকর্ড ভেঙে ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে ডেঙ্গু রোগের। গত ছয় মাসে আক্রান্ত হয়েছে ৭ হাজারেরও বেশি। সারা দেশ ডেঙ্গু জ্বরে জবুথবু। দিন যতই এগোচ্ছে এই অবস্থার অবনতি হচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ৫৩৬ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছেন ১১ জন রোগী। সবমিলিয়ে ভর্তি হয়েছেন ৫৪৭ জন নতুন রোগী। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের দৈনিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। এতে গত বুধবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এই ২৪ ঘণ্টার হিসাব তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে জানানো হয়, মোট ৫৪৭ জন রোগীর মধ্যে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম বিভাগে ৯ জন, খুলনা বিভাগে একজন ও বরিশাল বিভাগে একজন রোগী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন।

ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৫৩৬ জন। এদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ১১২ জন, মিডফোর্ট হাসপাতালে ৫৮ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ২৭ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৬৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৩২ জন, বারডেম হাসপাতালে ১০ জন, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ১৮ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪২ জন ও পিলখানা বিজিবি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সাতজন রোগী।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র রায় বলেন, এ সময়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে কয়েক দিনেই ডেঙ্গু পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু থেকে বাঁচার মূল উপায় হলো সচেতনতা। বাড়ির আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখা, সময়মতো ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে ডেঙ্গু নিয়ে ভয়ের কিছু নেই।

ডেঙ্গু কীভাবে ছড়ায়Ñ প্রশ্ন করলে স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রশিক্ষক মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, ডেঙ্গু এডিস মশার কারণে হয়। ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড়ালে সেই ব্যক্তি চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। এবার এই আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোনো জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ালে সেই মশাটি ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এভাবে একজন থেকে অন্যজনে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে থাকে।

ডেঙ্গু কীভাবে চিনবÑ এ প্রশ্নে ডা. মাহমুদুন্নবী মাসুম বলেন, ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর এবং সেইসঙ্গে শরীরে প্রচ- ব্যথা হয়। জ্বর ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়। শরীরে বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা হয়। এছাড়া মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা হয়। গায়ে রেশ হতে পারে। এর সঙ্গে বমি বমি ভাব হতে পারে।

রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বিগত বছরগুলোতে যেখানে হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তির সংখ্যা ছিল ১০০ থেকে ৪০০ জন। কিন্তু চলতি বছরের শুধু জুলাই মাসে এর থেকে বেশি রোগী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। আর ভর্তি এই হার প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে রাজধানীর হাসপাতালগুলো।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। ঢামেক ও সেন্ট্রাল হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতাল দুটিতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বিগত যেকোনো বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। ওয়ার্ড এবং কেবিনে ডেঙ্গু জ্বরের রোগী দিয়ে পরিপূর্ণ। তাই ওয়ার্ড ও কেবিনের বাইরে ফ্লোরে রোগীদের জায়গা দিতে হচ্ছে।

ঢামেকের ৫০২নং ওয়ার্ডের বারান্দার ফ্লোরে দেখা যায়, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৫০ জনের বেশি রোগী। স্বজনরা কারো মাথায় পানি ঢালছেন। কারো হাতে স্যালাইন লাগানো। তবে জীবন বাঁচাতে হাসপাতালের ফ্লোরে আশ্রয় নেওয়া এসব রোগী ও তাদের স্বজনদের পোহাতে হচ্ছে নানা ভোগান্তি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিদিন যে পরিমাণে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী আসছেন তাতে আর ওয়ার্ড কিংবা কেবিনের বাইরেও জায়গা দেওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া ধারণক্ষমতার বাইরে রোগী আসায় চিকিৎসা সেবাও ব্যাহত হচ্ছে।

ঢামেক সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩২১ রোগী ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। যার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৫৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া চলতি মাসে চারজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। আর এখন পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা শেষে ছাড়া পেয়েছেন ৮৬১ জন।

এ বিষয়ে ঢামেকের ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. আজিজ আহমেদ খান বলেন, ঢামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ। প্রতিদিন নতুন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। বিগত বছরের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, গত বছর এ সময় ডেঙ্গু জ্বরের সিবিসি প্ল্যাটিলেট টেস্ট করতে ১০ থেকে ১৫ জন আসত। কিন্তু এখন প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ জন আসছেন। এছাড়া গত বছরের জুলাই মাসে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৪০০, কিন্তু এ বছর ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে। এতেই বুঝা যায় এ বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অন্য যেকোনো বছরকে ছাড়িয়ে গেছে।

সেন্ট্রাল হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরে এখন পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ৬৮৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। যা গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ৮২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close