কলকাতা প্রতিনিধি

  ১৫ জুলাই, ২০১৯

এরশাদের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ পশ্চিমবঙ্গের দিনহাটা

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর খবর পেয়ে শোকস্তব্ধ পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার দিনহাটা। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের আগে এই শহরে ছোটবেলা কেটেছিল তার। দিনহাটা স্কুলের ছাত্র ছিলেন এরশাদ। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন সেখানে। এরপর ১৯৪৬ সালে রংপুরে কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হন।

দেশভাগের পর কোচবিহার ভারতে যুক্ত হলে এরশাদের বাবা মুহম্মদ মকবুল হোসেন দিনহাটার পৈতৃক ভিটা ছেড়ে চলে যান পাকাপাকিভাবে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রংপুর জেলায়।

এরশাদের একমাত্র বাল্যবন্ধু জীবিত সুধীর সাহা। এদিন স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন, সকালে ওর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে খুব খারাপ লাগছে। আমি ছিলাম ওর (এরশাদ) সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। দেশ ছেড়ে চলে গেলেও নিয়মিত আমায় চিঠি লিখত। ফোন করে কথা বলত। ২০১৭ সালে ও দিনহাটায় এলো। আমি এরশাদকে আনতে চ্যাংরাবান্ধা সীমান্তে গিয়েছিলাম। আমাকে দেখে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘তোর জন্যই দিনহাটায় এলাম।’ পরের দিন অনেক উপহার নিয়ে আমার বাড়িতে এসেছিল। আমরা ছোটবেলার গল্প করেছিলাম।

তিনি বলেন, আমরা একসঙ্গে দিনহাটা হাইস্কুলে পড়তাম। একবার লুকিয়ে পুটিমারি বলে একটা বাগানে কুল চুরি করতে গিয়েছিলাম। সেটা জানতে পেরে মকবুল কাকা (এরশাদের বাবা) আমাদের দুজনকে খুব শাসন করেছিলেন। খুব ভালো ফুটবল খেলত এরশাদ। ফরওয়ার্ড আর গোলকিপার দুটোতেই ভালো খেলত। আমার থেকে দুই বছরের ছোট হলেও এরশাদ ছিল আমার একমাত্র প্রিয় বন্ধু।

প্রয়াত রাষ্ট্রপতির দিনহাটার বাড়িতে এখন থাকেন তার চাচাতো ভাই মোসাব্বর হোসেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোচবিহার জেলা আইনজীবীর পদ থেকে অবসরপ্রাপ্ত। তিনি বলেন, আমাদের পরিবারের প্রধান চলে গেলেন। তিনি সারা বিশ্বে আমাদের বংশের নাম উজ্জ্বল করেছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হয়ে। ছোটবেলায় খুব দুরন্ত ছিলেন। ডাকনাম ছিল পেয়ারা। এই নামেই দিনহাটার সবাই তাকে চেনে। দাদার জন্ম অবিভক্ত রংপুরের কুড়িগ্রামে মামার বাড়িতে। জন্মের পর দাদাকে নিয়ে মকবুল জ্যাঠা চলে আসেন দিনহাটায়। আজ আমাদের কাঁদিয়ে চলে গেলেন। আল্লাহ তাকে বেহশত নসিব করুন। আমার ছেলে আহসান হাবিব তার প্রয়াণের খবর পেয়ে আজ সকালেই বাংলাদেশ গেছে।

এরশাদের পাশের বাড়িতে থাকেন সাবেক ছিটমহল আন্দোলনের নেতা ও বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির রাজ্যনেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, ছিটমহল বিনিময়ের আন্দোলনে তার ভূমিকা অতুলনীয়। সব সময় তিনি আমায় ব্যক্তিগতভাবে পরামর্শ দিতেন। তার প্রয়াণে দেশভাগের আরো একটা স্মৃতি মুছে গেল। দীপ্তিমান বলেন, তার বাবা মকবুল হোসেন ছিলেন কোচবিহারের রাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ ভূপবাহাদুরের অ্যাডভোকেট। আর আমার দাদু ধীরেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ছিলেন রাজার কবিরাজ। দিনহাটা শহরের ফুলদীঘির ডানদিকে তার বাড়ি আর বামদিকে আমাদের বাড়ি। দিনহাটার প্রাচীনতম পাওনিয়ার ক্লাবের সক্রিয় সদস্য ছিলেন এরশাদ চাচা, যা তৎকালীন সময়ে রাজার ক্লাব বলে পরিচিত ছিল। তার প্রয়াণে আজ দিনহাটা শোকস্তব্ধ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close