নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৬ জুলাই, ২০১৯

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এরশাদ

রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) লাইফ সাপোর্টে থাকা বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থাতেই গতকাল শুক্রবার ভোরে এরশাদের ডায়ালাইসিস শুরু হয়। এদিকে এরশাদের চিকিৎসার জন্য ‘বি পজিটিভ’ রক্তের প্রয়োজনÑ এ সংবাদে শত শত মানুষ পল্লীবন্ধুকে রক্ত দিতে এগিয়ে এসেছেন। তারা নিজেরাই তালিকা করেছেন রক্তদাতাদের। ভিড় করেছেন সিএমএইচ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী অফিস এবং কাকরাইল অফিসে। অন্যদিকে এরশাদকে নিজের কিডনি দিতে চান বলে জানিয়েছেন সিলেটের ওসমানীনগরের মকবুল হোসেন। এছাড়া এখনো অসখ্য নেতাকর্মী এরশাদকে বাঁচাতে রক্ত দিতে যোগাযোগ করছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি রক্তের ব্যবস্থা চিকিৎসদের কাছে রয়েছে। তাই তার চিকিৎসার জন্য আর রক্তের প্রয়োজন নেই।এই অবস্থায় এরশাদের সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন তার ছোট ছেলে এরিক এরশাদ। গতকাল বিকালে সিএমএইচে বসে দলের যুগ্ম মহাসচিব এস এম ইয়াসিরের ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে দেশবাসীর কাছে বাবার সুস্থতার জন্য দোয়া চান তিনি।

এরিক এরশাদ বলেন, ‘প্রিয় দেশবাসী আসসালামু আলাইকুম। আপনাদের সবার কাছে আমার বাবা, এ দেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সাহেবের জন্য দোয়ার আবেদন করছি। আপনারা দোয়া করবেন, উনি যাতে লাইফ সাপোর্ট থেকে জীবিত ও সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন।’ এর আগে এরিক জুমার নামাজের পর মোনাজাতে তার বাবার রোগমুক্তির জন্য প্রার্থনা করেন।

এ সময় এরিক কান্নায় ভেঙে পড়েন।

গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এরশাদের চিকিৎসায় রক্ত প্রয়োজন- এমন সংবাদে দেশবাসীর অভূতপূর্ব সাড়ায় কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি, বিরোধীদলীয় উপনেতা এবং পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ এমপি এবং বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপি।

আর রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে এরশাদের ভাই ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, সার্বিকভাবে উনার (এরশাদের) অবস্থা আশঙ্কাজনক; তিনি শঙ্কামুক্ত নন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১১টায় উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের দয়ামীর গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মকবুল হোসেন এমন ইচ্ছা পোষণ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন।

মকবুল হোসেনের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো : ‘সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের চিকিৎসায় নিয়োজিত সম্মানিত শ্রদ্ধেয় চিকিৎসকবৃন্দের প্রতি আমার আকুল আবেদন, শুনেছি স্যারের কিডনি কাজ করছে না, আমার রক্তের গ্রুপ বি+। যদি আমার দুই কিডনি স্যারের দেহে লাগালে স্যার সুস্থ হয়ে যান তা হলে আমাকে বলবেন আমি এসে কিডনি দেব। আমার স্যার সুস্থ হোন, আমি স্যারের মুখের কথা শুনতে চাই, সারা বাংলার মানুষ, এরশাদ সেনারা এরশাদ সাহেবকে দেখতে চায়।’

জি এম কাদের জানান, এরশাদের শরীরে জমে থাকা প্রায় ২ লিটার পানি বের করা হয়েছে। গত আট ঘণ্টায় আট ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। গত ১০ দিনে ২৮ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যায় এরশাদের আরেক দফা ডায়ালাইসিস করা হয়। যদিও আগের চেয়ে তাকে একটু ভালো দেখা গেছে। তবে মনে রাখতে হবে, তার শ্বাস-প্রশ্বাসসহ সবকিছু চলছে কৃত্রিমভাবে।

মাইডোলিসপ্লাস্টিক সিনড্রোমে আক্রান্ত ৯০ বছর বয়সি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে গত ২২ জুন সকালে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারপর সেখানে চিকিৎসাধীন তার ফুসফুস ও কিডনিতে সংক্রমণ ধরা পড়ে। ওইদিন বিকালে তাকে লাইফ সাপোর্টে (কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র) নেওয়া হয়। আর সন্ধ্যায় দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, এরশাদের অধিকাংশ অঙ্গপ্রত্যঙ্গই কাজ করছে না।

বৃহস্পতিবার এরশাদের অবস্থার অবনতি ঘটলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে পাঠাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করাসহ এ-সংক্রান্ত প্রক্রিয়া শুরু করেন। কিন্তু দুপুর ২টার দিকে হাসপাতালে এরশাদকে দেখে স্ত্রী রওশন এরশাদ সিঙ্গাপুরে পাঠানোর ব্যাপারে অমত করেন। পরে সন্ধ্যায় জি এম কাদের ব্রিফিংয়ে বলেন, সিঙ্গাপুরে নেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা নেই এরশাদের।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close