প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৮ জুন, ২০১৯

বিবিসির প্রতিবেদন

ঢাকায় সাইকেলচালক নারী কম কেন?

রাজধানী ঢাকায় গত কয়েক বছরে সাইকেলের জনপ্রিয়তা বাড়ার কারণে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে সাইকেল চালানো শেখার হারও বেশ বেড়েছে। আর সাইকেল চালানো শেখা তরুণ-তরুণীদের মধ্যে নারীর সংখ্যা অনেক। কিন্তু চালানো শিখলেও রাস্তায় সাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে বিবেচনা করলে পুরুষদের তুলনায় নারীদের সংখ্যাটা খুবই কম। এ সংখ্যা কম হওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে পারিবারিক, ধর্মীয় বা সামাজিক প্রেক্ষাপটের পাশাপাশি আমাদের দেশের নারীদের মানসিকতাও দায়ী বলে মনে করেন সাইকেল চালানো শেখানোর কার্যক্রম পরিচালনার সঙ্গে জড়িতরা। ঢাকায় প্রায় চার বছর ধরে নারীদের সাইকেল চালানো শেখানোর কার্যক্রম পরিচালনা করছেন কানিজ ফাতেমা ছন্দা। তিনি জানান, গত চার বছরে তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৬০০ নারী সাইকেল চালানো শিখেছে। কিন্তু তাদের মধ্যে অধিকাংশই শেখার পর রাস্তায় সাইকেল নিয়ে খুব একটা বের হননি। ছন্দা বলেন, ‘আমার স্কুলের মাধ্যমে যারা সাইকেল চালানো শিখেছে, তাদের মধ্যে খুব বেশি হলে ১০ বা ২০ ভাগ নারী নিয়মিত বা মাঝেমধ্যে সাইকেল চালান। অধিকাংশই চালানো শেখার পর খুব বেশি দিন চালানোর অভ্যাসটা ধরে রাখেননি। অনেক নারীই সাইকেল চালানো শুরু করলেও নানা কারণে কয়েক দিনের মধ্যে ছেড়ে দিয়েছেন।’

যেসব কারণে সাইকেল চালান না নারীরা : খালেদা নুসরাত নামে এক নারী সাইকেল চালানো শিখলেও পারিপার্শ্বিক নানা কারণে নিয়মিতভাবে সাইকেল চালানোটা তার হয়ে ওঠেনি। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় সাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে নারী হিসেবে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাটা আমার হয়েছে, তা হলো রাস্তার মানুষজন, অন্যান্য গাড়ির চালকরা অতিরিক্ত কৌতূহল নিয়ে আপনার দিকে লক্ষ করবে, যা অধিকাংশ সময়ই বেশ অস্বস্তিকর।’

নুসরাত আরো বলেন, ‘একা সাইকেল চালানোর সময় আশপাশের সাইকেল, মোটরসাইকেল বা রিকশার চালক ও যাত্রীরা অনেক সময় নানা হয়রানিমূলক আচরণ করেছেন, যা বাংলাদেশে একটা মেয়ের সঙ্গে অন্যান্য সময়ও হয়ে থাকে। সাইকেল চালানোর সময় এ রকম হয়রানিমূলক আচরণের কারণে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।’ এ ছাড়া একা সাইকেল চালানোর সময় প্রায়ই মানুষজনের কটূক্তি শুনতে হয়েছে বলেও জানান তিনি। আর ব্যস্ত শহরের সড়কের বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টিও নিয়মিত সাইকেল না চালানোর একটি অন্যতম প্রধান কারণ। উৎসাহ নিয়ে সাইকেল চালানো শিখলেও শহরের নারীদের অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত রাস্তায় সাইকেল না চালানোর কারণ হিসেবে এ রকমই কিছু বিষয়কে চিহ্নিত করেন। তবে এসবের বাইরে আরো কিছু বিষয় নারীদের রাস্তায় সাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে করেন কানিজ ফাতেমা ছন্দা।

ছন্দা মনে করেন পারিবারিক, ধর্মীয় বা সামাজিক প্রেক্ষাপটের পাশাপাশি নারীদের আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং নেতিবাচক মানসিকতাও রাস্তায় নারী সাইক্লিস্টের সংখ্যা কম হওয়ার পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ। ‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও অনেক নারীই আমাকে বলেছেন যে, রোদে পুড়ে কালো হয়ে যাওয়ার ভয়ে তারা সাইকেল চালান না।’ ছন্দার মতে, নিয়মিত সাইকেলে যাতায়াত করার বিষয়টিকে অনেকেই সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন না। আর এ কারণেই অনেক নারী সাইকেল নিয়ে চলাফেরায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। ব্যবসায়িক কাজে সাইকেল চালিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ায় ‘কেন সাইকেল চালাই’ এ ধরনের প্রশ্ন শুনতে হয়েছে। গাড়ি বা মোটরসাইকেল না চালিয়ে সাইকেল চালানোর কারণে সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণœœ হয়Ñ এ রকম মানসিকতা পোষণ করেন অনেকেই।

আবার নারীদের সাইকেল চালানোর বিষয়টিকে অনেকে রক্ষণশীল ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সমর্থন না করাও একটি অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করেন ছন্দা। তবে সমাজ বা পরিবারের বাধাকে পাত্তা না দিয়ে, নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে শহরের রাস্তায় নিয়মিত সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছেন এ রকম নারীর সংখ্যাও কিন্তু আগের চেয়ে বেড়েছে। ঢাকার একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হাফসা সে রকমই একজন। রাস্তাঘাটের বিপদাপদের ভয় বা প্রতিবেশীদের বাঁকা কথা যাকে রাস্তায় সাইকেল নিয়ে নামা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। হাফসা বলেন, ‘আমি সাইকেল চালাই শুনে প্রতিবেশীরা আমার মাকে এ নিয়ে অনেক নেতিবাচক কথা বলেছে।’ তবে হাফসার মতে, এ ধরনের মানসিকতাকে প্রশ্রয় না দিয়ে নিজের ইচ্ছাপূরণের চেষ্টা চালিয়ে গেলে একপর্যায়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে শুরু করবেন নারীরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close