মনোহরদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি

  ০৪ মে, ২০১৯

সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনা

নিহতদের পরিবারে মাতম

সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মনোহরদীর তিনজনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। নিহতরা হলেন লেবুতলা ইউনিয়নের তারাকান্দী গ্রামের আবদুল মান্নান মাঝির ছেলে জামাল উদ্দিন মাঝি (৪০), একই ইউনিয়নের চকতাতারদী গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে এমদাদুল ইসলাম (২৫) এবং খিদিরপুর ইউনিয়নের ডোমনমারা গ্রামের আবদুল মান্নান শেখের ছেলে মো. আল আমিন (২৮)। নিহত এই তিনজনের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাদের লাশ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন পরিবারগুলো। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারের লোকজন এখন দিশেহারা। এছাড়া সরকারের কাছে আর্থিকভাবে সহযোগিতা পাওয়ার আবেদন জানিয়েছেন দরিদ্র এসব পরিবারের লোকজন।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে নিহত জামাল উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের আহাজারীতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠছে। চলছে কান্নার রোল। নিহত জামাল উদ্দিনের স্বজনরা জানান, জামাল চার মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের জনক। জামাল ছিল তার পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। দেশে থাকতে তরকারি বিক্রি করে কোনো রকম সংসার চালাতেন। গত এক মাস আগে সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য আনতে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা ধার-দেনা করে সৌদি আরব যান।

জামালের ছেলে আশিক জানান, বাবা গত এক মাস আগে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা ঋণ করে সৌদি আরব যান। সেখানে যাওয়ার পর এক দিনও তিনি কাজ করতে পারেননি। এরই মাঝে তিনি মারা যান। এখন আমরা এত বড় ঋণের বোঝা কিভাবে বহন করি?

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. নজরুল ইসলাম বলেন, জামালের লাশ দ্রুত দেশে পৌঁছানোর পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ দাবি করি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহত এমদাদুলের বাবা আবদুর রশিদ বলেন, আমি একজন অসহায় মানুষ। সহায়-সম্পত্তি বলতে তেমন কিছু নেই। সরকারের কাছে একটাই দাবি আমার ছেলেকে যেন দ্রুত দেশে ফিরিয়ে দেন। তাছাড়া আর কিছু চাই না।

একই ঘটনায় নিহত ডোমনমারা গ্রামের আল আমিনের মা পুদিনা বেগম বিলাপ করে বলেন, আমার বাবা কই গেল, এখন আমি কি করমু। আমি কার আশায় বাঁচমু। পৃথিবীতে বাবা বলে ডাকার আমার আর কেউ রইলনা। তাড়াতাড়ি আমার বাবার মুখটা দেখতে চাই।

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক মাকসুদ আলম মাসুম বলেন, আল আমিনের পরিবারটি খুবই দরিদ্র। প্রায় ২০ বছর আগে এক ছেলে ও চার মেয়ে রেখে তার বাবা মারা যান। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে চার ছেলেমেয়েকে বড় করেছেন। তাদের ভিটে বাড়িতে দুই শতাংশ জমি বাইরে কোনো জমি-জমা নেই। এক মাস আগে ৪ লাখ টাকা ঋণ করে আল আমিনকে বিদেশ পাঠান তার মা। দরিদ্র এই পরিবারটিকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই। মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাফিয়া আক্তার শিমু বলেন, নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া তাদের প্রিয়জনের লাশ দ্রুত দেশে আনতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব রকম সহযোগিতা করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close