খুলনা প্রতিনিধি

  ২৪ মার্চ, ২০১৯

খুলনায় আসন্ন রমজানের প্রভাব

মুরগি ও ডিমের দাম বাড়ছে পাল্লা দিয়ে

রমজান মাস যতই এগিয়ে আসছে, খুলনায় দেশি ও ফার্মের মুরগি ও ডিমের দাম ততই বাড়ছে। গত ২২ দিনের ব্যবধানে মুরগির মাংস কেজিতে বৃদ্ধি পেয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। হ্যাচারি মালিকদের খামখেয়ালিপনা ও স্থানীয় বাজারে মনিটরিং না থাকা ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতর-প্রশাসন কর্মকর্তারা সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় বাজারের এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

মুরগি ও ডিম ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত ২২ দিন আগে খুলনায় ব্রয়লার মুরগি পাইকারি কেজিতে বিক্রয় ছিল ১০০ টাকা। তা বেড়ে গিয়ে কেজিতে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়। এছাড়া কক ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকার পরিবর্তে ২২৫ থেকে ২৩০ টাকায় ও সোনালি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২১৫ টাকায়। আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১৫০ টাকা, কক ২৪৫ থেকে ২৫০ টাকায়। অর্থাৎ ডিম ৩৪ শতাংশ, ব্রয়লার মুরগি বেড়েছে ২৬ শতাংশ ও দেশি মুরগিতে বেড়েছে ১৯ শতাংশ। ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে সঠিক মনিটরিং না করা ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতর-প্রশাসনের বাজার তদারকি না থাকার কারণে অসাধু হ্যাচারি/ফার্ম মালিকরা ইচ্ছামতো মুরগির বাচ্চার দাম হাঁকানোর কারণে বাজারে এ পরিস্থিতি।

খুলনা পোল্ট্রি ফিশ ফিড ব্যক্তিত্ব এস এম সোহরাব হোসেন বলেন, মাস খানেক আগে একটি এক দিনের বাচ্চার দাম ছিল ৩২ থেকে ৩৪ টাকা। তা বর্তমানে হ্যাচারি মালিকরা ৭০ থেকে ৭২ টাকায় বিক্রি করছে। কেজিতে ১০ টাকা মুরগির দাম বাড়লে হ্যাচারি মালিকরা প্রতি বাচ্চায় ২০ টাকায় বাড়িয়ে দেয়। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে হ্যাচারি মালিকদের এক দিনের বাচ্চার দাম ব্রয়লার ৩০ টাকা ও লেয়ার (ডিম পাড়া) ৩২ টাকায় নির্ধারণ করে দেয়। পরবর্তীতে হ্যাচারি মালিকরা সরকারের এই নিদের্শনার ওপর হাইকোর্টে রিট করায় তা আদালত স্থগিত করেন। এরপর থেকে হ্যাচারি মালিকরা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এক দিনের বাচ্চা উৎপাদনের জন্য সর্বোচ্চ খরচ হয় ১৪ থেকে ১৫ টাকা। এর সঙ্গে ২৫ শতাংশ লাভ যোগ করলে প্রতিটি বাচ্চার মূল্য দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ২২ থেকে ৩০ টাকা। কিন্তু হ্যাচারি মালিকরা তাদের ইচ্ছামতো দাম বসিয়ে বাজারে বিক্রি করছে।

এদিকে পোল্ট্রি মুরগির বাচ্চা, মুরগির মাংস ও ডিমের মূল্য বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন খুলনা পোল্ট্রি ফিস ফিড শিল্প মালিক সমিতি। বিবৃতিদাতারা উল্লেখ করেন, বর্তমানে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি পাইকারি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, সোনালি ২১০ থেকে ১৫ টাকা ও প্রতিটি ডিমের মূল্য সাড়ে আট টাকা বিক্রি হলেও আগের তুলনায় বর্তমানে ডিমে বেড়েছে ৩৪ শতাংশ, ব্রয়লার মুরগি বেড়েছে ২৬ শতাংশ ও দেশি মুরগিতে বেড়েছে ১৯ শতাংশ দাম। এমন পরিস্থিতিতে বাজার মূল্য নির্ধারণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদফতর-প্রশাসন নিশ্চুপ ও নির্বিকার।

সুষ্ঠু নীতিমালা ও কার্যকর পদক্ষেপের অভাব এবং প্রশাসনের যথাযথ মনিটরিং না থাকায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে জরুরিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন পোল্ট্রি ফিশ ফিড ব্যক্তিত্ব এস এম সোহরাব হোসেন, খুলনা পোল্ট্রি ফিশ ফিড শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ মাওলানা ইব্রাহিম ফয়জুল্লাহ ও কোষাধ্যক্ষ আলহাজ মো. মামুনুর রহমানসহ নেতারা।

তারা বলেন, ক্ষুধা-দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান ও আমিষের যোগানদাতা পোল্ট্রি ও ডেইরি শিল্প দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় ব্যাপক অবদান রাখলেও বারবার তারা উপেক্ষিত। তাই খামারিদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, কৃষিজ ভিলেজ লাইভ স্টোক এলাকার আদলে স্বতন্ত্র পাইকারি পোল্ট্রি মার্কেট স্থাপন, খামারের বীমা প্রথা চালু, বাচ্চা-ডিম ও মুরগির মূল্য নির্ধারণ ও মনিটরিং জোরদার করার দাবি করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close