রাজবাড়ী প্রতিনিধি

  ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

অত্যাচার সইতে না পেরে স্বামীকে খুন করেছি

স্ত্রীর স্বীকারোক্তি

কমলা দাস বিদেশ গিয়েছিলেন পরিবারের ভাগ্য বদলের আশায়। কিন্তু স্বামী ভুল বুঝলেন। অপবাদ দিলেন বিদেশে তার দেহ ব্যবসায় জড়িত থাকার। একপর্যায়ে ফিরলেন দেশে। কিন্তু প্রতিবেশীদের কান-কথায় গুরুত্ব দিয়ে স্বামী আর তাকে বিশ্বাস করেন না। করেন ঘৃণা, সঙ্গে অবহেলা ও অত্যাচার। পরিস্থিতি গড়ায় খারাপের দিকে। স্বামী টাকা রোজগারের জন্য কমলা দাসকে নামান পতিতা বৃত্তিতে। শেষতক মানবেতর অবস্থা সহ্য করেননি এই হতভাগ্য স্ত্রী। তার ঘরে স্বামী যে খদ্দেরদের পাঠাতেন, তাদের নানা ছলা-কলায় হাত করলেন। তাদের সঙ্গে সলাপরামর্শ করে বাড়ির পাশের মেহগনি বাগানে নিয়ে হত্যা করেন স্বামীকে। এ ঘটনা পাঁচ বছর আগের। সিআইডি তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এই তথ্য। স্বামী খুনের আসামি কমলা দাস ওই হত্যাকা-ের কথা আদালতের কাছেও স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, অত্যাচার সইতে না পেরে ‘ওকে’ মেরে ফেলেছি।

ঘটনার চার বছর পর রাজবাড়ী জেলা সিআইডির পরিদর্শক শেখ মো. আক্তারুজ্জামান নিহত ভ্যানচালক সুবির দাসের স্ত্রী কমলা দাসকে গত বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করে। পরে রাজবাড়ী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের ঠাকুর নওপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক সুবির দাস (৪০) হত্যা সম্পর্কে আদালতে এ চাঞ্চল্যকর জবানবন্দি দিয়েছেন নিহতের স্ত্রী কমলা দাস। নিহত সুবির দাস উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের ঠাকুর নওপাড়া গ্রামের সুধির দাসের ছেলে।

কমলা দাস স্বীকার করেন, আমার ছেলে প্রসেনজিৎ দাস, চিরঞ্জিত দাস ও মেয়ে লাবনী দাসকে বাড়িতে রেখে লিবিয়া অবস্থান করি। সেখানে থাকাবস্থায় আমার স্বামীকে কিছু লোক ভুল বোঝায় যে, তোর স্ত্রী সেখানে খারাপ কাজ করছে। এর এক বছর পর ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে আমাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনে। দেশে আসার পর স্বামী সুবির আমাকে ভুল বুঝতে থাকে ও অবিশ্বাস করতে থাকে। বিদেশে তুই অবৈধ কাজ করেছিস, এখানেও অবৈধ কাজ করে টাকা এনে দিবি বলে দাবি করেন। স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অবৈধ কাজে নামতে বাধ্য হই। বিদেশে যাওয়ার সময় বিল্লাল, আলাল, আজিজুলদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলেন কমলা দাসের স্বামী। তারা বাড়িতে আসতে থাকেন এবং তার স্বামী তাকে তাদের সঙ্গে অবৈধ কাজ করতে বাধ্য করেন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে স্বামীকে হত্যার জন্য আজিজুলদের সঙ্গে পরিকল্পনা করি।

পরিকল্পনামাফিক ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাতে স্বামীকে বলি একজন লোক আসবে কিছু টাকা দেবে। এ কথা বলে রাত ১২টার দিকে বাড়ির পাশের একটি মেহগনি বাগানে নিয়ে যাই। সেখানে পরিকল্পনা অনুযায়ী আমি পা চেপে ধরে রাখি, বিল্লাল হাত চেপে ধরে, আলাল বুকের ওপর উঠে বসে আর আজিজুল শ্বাসরোধে হত্যা নিশ্চিত করে। হত্যার পর গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে ওরা। এরপর বাড়িতে এসে তার ভাই প্রবীরকে জানাই তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। পরদিন মেহগনি বাগানে সুবিরের লাশ পাওয়া যায়। তখন নিহতের ভাই প্রবীর কুমার দাস বাদী হয়ে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর বালিয়াকান্দি থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর একাধিক তদন্ত কর্মকর্তার হাতবদলের পর এসআই জাকির হোসেন ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল আদালতে চার্জশিট দেন। চার্জশিটে মামলার বাদী প্রবীর কুমার দাস নারাজি দিলে মামলাটি সিআইডিেেত যায়। এ মামলার অন্যান্য আসামি পলাতক রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close