বিবিসি বাংলা
বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে হয়রানির মুখে মাদ্রাসা শিক্ষক
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় তৃতীয় শ্রেণির এক মাদ্রাসা ছাত্রীর বিয়ে বন্ধ করার চেষ্টা করে
হয়রানির মুখে পড়েছেন ওই এলাকার একজন মাদ্রাসা শিক্ষক। পুলিশের হেল্পলাইনে (৯৯৯) ফোন করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাহায্য নিয়ে বিয়ে থামানোর পর হাতিয়ার দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষক তরিকুল ইসলাম শারীরিক নির্যাতনেরও শিকার হন বলে তিনি জানিয়েছেন।
তরিকুল জানান, তিনি যেই মাদ্রাসার শিক্ষক, সেখানকার তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়ে হচ্ছে জানতে পেরে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হন।
গত সোমবার মাদ্রাসায় গিয়ে জানতে পারি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া এক ছাত্রীর বিয়ে ঠিক হওয়ায় সে ক্লাসে আসেনি। তার অভিভাবকদের আমি বুঝিয়ে বিয়ে থামানোর চেষ্টা করি, বলেন তরিকুল।
তাতেও কাজ না হওয়ায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তরিকুল। ‘শুরুতে আমি পুলিশের হেল্পলাইন ৯৯৯-এ ফোন করে ঘটনার বিস্তারিত জানাই। তারপর তাদের কাছ থেকে নম্বর নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করি।’
তরিকুল বলেন, গত মঙ্গলবার দুপুরে বিয়ের অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হাতিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে সেদিন বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়নি।
তরিকুল জানান, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের পর মসজিদ থেকে তাকে এবং মসজিদের ইমামকে কয়েকজন যুবক ডেকে নিয়ে যায়। ওই যুবকরা ছেলেপক্ষের লোক বলে ধারণা প্রকাশ করেন তরিকুল। ‘কয়েকজন যুবক এক পর্যায়ে আমাদের দুজনের ওপর আক্রমণ করে। তারা রড এবং লাঠিসোঁটা দিয়ে আমাদের মারধর করে।’
পরে দুজনকে ধরে ওই ছাত্রীর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেও বেঁধে রেখে মারধর করা হয় বলে জানান তরিকুল।
আমাদের চিৎকার শুনে এক পর্যায়ে এলাকার লোকজন আসে এবং আমাদের উদ্ধার করে এরপর দুই দিন নোয়াখালী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তরিকুল।
গত শুক্রবার সকালে হাতিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন তিনি। এ ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, হাতিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-ই-আলম জানান, অভিযোগ পাওয়ার পরে তিনি গ্রামপুলিশ পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। ‘প্রাথমিকভাবে পুলিশি হস্তক্ষেপে বিয়ে সাময়িকভাবে বন্ধ হলেও পরে আবার অন্য জায়গায় অনুষ্ঠিত হয়।’
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা, ইউনিসেফের ২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৫২ শতাংশ মেয়েরই বিয়ে হয় ১৮ বছর হবার আগেই। এশীয় দেশগুলোর মধ্যে বাল্যবিয়ের হার বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি।
"