নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৬ জানুয়ারি, ২০১৯

ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ

মামলা হলেও শৃঙ্খলা ফিরছে না সড়কে

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সারা দেশ কাঁপিয়ে দিয়েছিল। আন্দোলনের মুখে দোষী ব্যক্তিরা আইন মেনে চলার অঙ্গীকার করলেও পরবর্তী অবস্থা আগের মতোই। পরিবহনচালক ও পথচারীরা মানছেন না ট্রাফিক আইন। দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও সচেতনতার অভাবে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরার কোনো সুখবর নেই। পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, শুধু মামলা দিয়ে নয়Ñ সমন্বিত কর্মসূচি গ্রহণ না করলে সড়কে শৃঙ্খলা আসবে না। তবে পুলিশ বলছে, শৃঙ্খলা একদিনে ফিরবে না, ধীরে ধীরে আসবে সফলতা।

ডিএমপি সূত্র জানায়, ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, ট্রাফিক আইনের কঠোর প্রয়োগ, জনসচেতনতা এবং সড়কে ট্রাফিক শৃঙ্খলা আনার লক্ষ্যে ১৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ’। এ কার্যক্রম চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। ট্রাফিক পক্ষের গত ৯ দিন রাজধানীজুড়ে ট্রাফিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ৪৬ হাজার ৪৪টি মামলা করেছে ট্রাফিক পুলিশ। জরিমানা করা হয়েছে ২ কোটি ২৫ লাখ ৯৪ হাজার ৮৫০ টাকা। মামলা সবচেয়ে বেশি হয়েছে মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে। মোট ২০ হাজার ৯৯০টি মামলা ছাড়াও ৯৭০টি মোটরসাইকেল আটক করা হয়েছে। এছাড়া উল্টোপথে চলাচলের অপরাধে ৮ হাজার ২০৪টি মামলা হয়। এসব মামলায় মোট ২ কোটি ২৫ লাখ ৯৪ হাজার ৮৫০ টাকা জরিমানাও করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।

এছাড়াও সড়কে অভিযানকালে ২০৭টি গাড়ি ডাম্পিং ও ৬ হাজার ১৮৫টি গাড়ি রেকার করা হয়। হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারের দায়ে ৯৫২টি, হুটার ও বিকনলাইট ব্যবহারের কারণে ৬০টি, স্টিকার ব্যবহারের জন্য আটটি এবং মাইক্রোবাসে কালো গ্লাস ব্যবহারে ১১৭টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়। গাড়ি চালানোর সময় মোবাইলফোনে কথা বলার অপরাধে ১৪৯ জন চালকের বিরুদ্ধেও মামলা দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাফিক পক্ষে কেবল মামলাই দেওয়া হচ্ছে। সড়কে ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফেরাতে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এজন্য সব পর্যায়ে ট্রাফিক সচেতনতামূলক জোরালো প্রচারণা চালাতে হবে। আইন ভঙ্গকারীর জরিমানার হার দ্বিগুণ করতে হবে। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করলেই কেবল সড়কে শৃঙ্খলা ফিরতে পারে।

নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন গণমাধ্যমকে বলেন, সড়কে আইন অমান্য করার দায়ে মানুষ (চালক, পথচারী) যখন ক্ষতিগ্রস্ত হবে ঠিক তখনই তারা আইন মানতে বাধ্য হবে। শুধু চালকদেরই নয়, পথচারীদেরও দোষ আছে। তারাও আইন মানেন না। তবে পথচারীদের বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। সড়কে গণপরিবহনের বেপরোয়া চলাচল ও ট্রাফিক আইন অমান্য করলে তিনি জরিমানার হার বৃদ্ধি করারও দাবি জানান। জোরালো প্রচারণার কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতদিনেও সড়কে কেউ আইন মেনে চলেনি। এখন মানুষকে আইন মানাতে হলে কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। আমার সাজেশন হচ্ছেÑ তিনমাস দেশের সব স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে এবং বিভিন্ন কমিউনিটিতে গিয়ে ট্রাফিক সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে। তিন মাস পর কেউ যদি ট্রাফিক আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করে তবে তার এবং তার কর্মরত প্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা বলছেন, সড়কে যারাই ট্রাফিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছে তাদেরই আমরা মামলা দিচ্ছি। কিন্তু এরপরও চালক-পথচারীরা আইন মানছেন না। রাজধানীর বিভিন্ন সিগন্যালে ট্রাফিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মাইকিং করে বলা হচ্ছে এবং বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিক সদস্যরা আইন মেনে চলার অনুরোধও করছেন। কিন্তু মনে হচ্ছে, মানুষের মধ্যে আইন মানার প্রবণতা যেন কমে গেছে।

রাজধানীর উত্তরা হাউসবিল্ডিং এলাকায় ফুটওভার ব্রিজ থাকার পরও পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পারাপার হচ্ছেন। গণপরিবহণগুলো চলন্ত অবস্থায় দরজা খোলা রাখছে। অপরদিকে উত্তরা আজমপুর এলাকায় ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে সড়কের আইল্যান্ড টপকে পথচারীদের পার হতে দেখা গেছে। সেই সঙ্গে সড়কের মাঝখানে গণপরিবহন থামিয়ে যাত্রী উঠানামাও চলছে।

হাউসবিল্ডিং এলাকায় ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার হওয়া একজন পথচারী ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করার কারণ জানান। তিনি বলেন, ‘হাউস বিল্ডিংয়ের ফুটওভার ব্রিজটি অনেক সরু, একসঙ্গে দুইজন ওঠা যায় না। আর ফুটওভার ব্রিজে উঠতে-নামতে সময় বেশি লাগে। মূলত সময় বাঁচাতে নিচ দিয়ে হেঁটে পার হয়েছি।

কারওয়ান বাজারে দেখা যায়, সড়ক ছেড়ে ফুটপাতের ওপর দিয়ে গণপরিবহন চলাচল করছে। এছাড়া মোটরসাইকেল চালকরা একটু বেশি সুবিধা নিতে ফুটপাতেই তুলে দিয়েছেন নিজেদের বাহনটি।

ফুটপাতের ওপর দিয়ে গাড়ি চালানোর কারণ জানতে চাইলে একটি গণপরিবহনের চালক বলেন, আগের গাড়িটা গেছে বলে আমিও পেছন পেছনে আসছি। ভুল হয়ে গেছে। ট্রাফিক আইন মানেন না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানি, মাঝে মধ্যে একটু ভুল হয়ে যায়।

আইন না মেনে যত্রতত্র চলছে যাত্রী উঠানামার কাজ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল আলম গণমাধ্যমকে জানান, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আমরা চেষ্টা করছি। তবে এটা একদিনে হবে না, ১৫ দিনেও হবে না। ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। ধীরে ধীরে এর সফলতা আসবে। এছাড়াও শহরে বিভিন্ন জায়গাতে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে, তাই সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পরিবহন মালিক-শ্রমিক, সরকারের বিভিন্ন পক্ষ এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সমন্বয় জরুরি বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। তিনি জানান, ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ কার্যক্রমে শুধুমাত্র মামলাই দেওয়া হচ্ছে, এর বেশি কিছু হচ্ছে না। সত্যিকার শৃঙ্খলা ফেরাতে সব পক্ষের সমন্বয় প্রয়োজন, যা আসলে হচ্ছে না। সমন্বিত কর্মসূচি গ্রহণ না করলে সড়কে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব নয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close