বাকৃবি প্রতিনিধি

  ২৫ জানুয়ারি, ২০১৯

বাকৃবি ছাত্রলীগের সিট বাণিজ্যে ভোগান্তি

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) আবাসিক হলগুলোতে ছাত্রলীগের সিট বাণিজ্যের কারণে আবাসন সংকটে পড়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এছাড়া দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করতে আসা শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকের কাছ থেকে গড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার বিনিময়ে হলে সিট দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে।

হল সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আবাসিক ৯টি হল ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সবুজ কাজী ও সাধারণ সম্পাদক মিয়া মোহম্মাদ রুবেলের অনুসারী দুইটি গ্রুপ রয়েছে। এর মধ্যে শাহজালাল হলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পক্ষের দুটি গ্রুপই একইসঙ্গে অবস্থান করছে। প্রত্যেক গ্রুপই সিট বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও টাকার বিনিময়ে সিট দেওয়া ও নিজেদের সুবিধামতো সিটে থাকায় হলে সিট সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। তবে সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হলে বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের হয়রানি, হলের সুযোগ সুবিধা গ্রহণ ও সিট বণ্টনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ রুবেলের অনুসারী শাহজালাল হলের সভাপতি আবু সাঈদ, সহ-সভাপতি সাকিবুল হাসান ও গোলাম মোর্শেদ (মুরাদ) এবং সভাপতি সবুজ কাজীর অনুসারী হলের সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

আবু সাঈদ অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করতে আসা ১০ জন শিক্ষার্থীর প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা করে এবং মিরাজুল ইসলাম ২১ জন শিক্ষার্থীর প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রায় ৫ হাজার টাকা করে নিয়ে হলে তুলেছে। হলে পিএইচডি শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা ব্লক থাকলেও দুটি কক্ষে ছাত্রলীগের নেতারা অবস্থান করছেন। এছাড়া সেখানে কিছু ¯œাতক ও ¯œাতকোত্তর বিদেশি শিক্ষার্থীকে সিট দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও টাকার বিনিময়ে ডাইনিংয়ের একটি অতিরিক্ত কক্ষে একজন পিএইচডি ও একজন মাস্টার্সের শিক্ষার্থীকে সিট দিয়েছে নেতারা। ওই হলের আটটি ব্লকের চারটি সভাপতি পক্ষ অপর চারটি সাধারণ সম্পাদক পক্ষের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এছাড়া হলে আরো দুটি পিএইচডি ব্লক রয়েছে। এসব ব্লকে নিজেদের মতো করে সিটের বণ্টন করছে ছাত্রলীগ কর্মীরা।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সামসুল হক হলে বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. তামজিদ ইসলাম জেনিথ ৩য় বর্ষের ছাত্রলীগ কর্মীদের মাধ্যমে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় হতে আসা শিক্ষার্থীদের হলে তুলতে জনপ্রতি গড়ে সাড়ে ৭ হাজার টাকা তোলেন। এছাড়াও আশরাফুল হক হল সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান পিয়াল ও সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিব জনপ্রতি গড়ে ৩ হাজার টাকা, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে বাকৃবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আকিল আফতাব দুর্বার ও হল সাধারণ সম্পাদক রাহাত আশরাফ জনপ্রতি গড়ে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা, শহীদ জামাল হোসেন হলে প্রচার সম্পাদক মো. নাজমুল হক খান গড়ে ৪ হাজার টাকা, ফজলুল হক হল সভাপতি মো. হাসান আলী ও সাধারণ সম্পাদক সজীব চন্দ্র সরকার প্রতি মাসে জনপ্রতি ১৫০০ টাকা, শহীদ নাজমুল আহসান হল সভাপতি আল আমিন এবং সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম জনপ্রতি গড়ে ৫ হাজার টাকা, বঙ্গবন্ধু হলের সভাপতি দেবপ্রিয় রায় সুস্ময় ও সাধারণ সম্পাদক সৌরভ আল হাসান জনপ্রতি এককালীন ১০ হাজার টাকা এবং ঈশা খাঁ হল সভাপতি আতিকুল হক, সাধারণ সম্পাদক মোফাক্কারুল ইসলাম মিশু গড়ে ৭ হাজার করে টাকা নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ টাকা ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মী নিজেদের মাঝে বণ্টন করেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘কিছুদিন আগেও হলে সিট সংকট এত প্রকট ছিল না। ছাত্রলীগের সিট বাণিজ্য এবং গ্রুপিংয়ের কারণে আমরা ভোগান্তিতে আছি। এছাড়া পরীক্ষা চলাকালীন আমাদের সিট পরিবর্তন করতে বাধ্য করছে ছাত্রলীগের নেতারা।’

অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সভাপতি সবুজ কাজী এবং সাধারণ সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ রুবেল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে যদি আইন করে বাইরে থেকে আসা মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের হলে থাকা নিষিদ্ধ করলে এ ধরনের ঘটনা ঘটার সুযোগ থাকবে না। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে শক্ত পদক্ষেপ নিলে হলে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটও থাকবে না।’ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুল হক বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে সিট দেয়ার তথ্য আমার জানা নেই।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close