চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯

চট্টগ্রামে দিনের বেলায় অবাধে চলছে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান

চট্টগ্রামে অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও দিনের বেলায় অবাধে চলাচল করছে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান। এতে দুর্ঘটনায় প্রাণহাণির ঘটনা ঘটছে। বাড়ছে যানজট। গত বুধবার নগরীর কোতয়ালী থানা মোড়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে কাভার্ডভ্যান চাপায় মারা গেছেন সরকারি সিটি কলেজের সুমা বড়–য়া নামের এক ছাত্রী। ফলে আলোচনায় আসে দিনের বেলা নিষেধাজ্ঞা থাকা যানবাহনের অবাধ চলাচল নিয়ে।

সিএমপি সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নগরে দিনের বেলায় ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্তের কারণে নগরবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারের শুরুর দিকে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কঠোর নজরদারি রাখে ট্রাফিক পুলিশ। তবে ধীরে ধীরে তা শিথিল হয়ে গেলে নগরের ছোট-বড় সব সড়কে অবাধে পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল শুরু হয়। বর্তমানে নগরীতে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল করছে।

জানা যায়, নগরীর তিনটি সড়ক ২৪ ঘণ্টা ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। বন্দর থেকে বারিক বিল্ডিং হয়ে সদরঘাট, কোতয়ালী ও লালদীঘির পাড় হয়ে খাতুনগঞ্জ এবং শাহ আমানত সেতু দিয়ে দিনের বেলায় ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চলাচল করতে পারবে। এ ছাড়া পোর্ট কানেকটিং সড়ক হয়ে অলংকার মোড় দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে, বন্দরের ভেতর থেকে উড়ালসড়ক হয়ে টোল সড়ক এবং ফৌজদারহাট হয়ে ঢাকা-চট্টগাম মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচলে বাধা নেই। এর বাইরে নগরের অন্য সড়কে জরুরি রফতানি পণ্য, ওষুধ ও পচনশীল পণ্য পরিবহনের জন্য বিশেষ বিবেচনায় ট্রাক চলতে পারবে। তবে এর জন্য পুলিশের কাছ থেকে আগেই লিখিত অনুমতি নিতে হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগরীতে প্রায় সব রুটে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবাধে চলাচল করছে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, লরিসহ সব ধরনের ভারী যানবাহন। অবাধে প্রতিনিয়ত কয়েকশ ট্রাক নগরীতে প্রবেশ করছে। একে খান গেট দিয়ে ঢুকে জিইসি মোড় দিয়ে বন্দরের দিকে যায় শত শত ট্রাক। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ট্রাক প্রবেশ করছে অহরহ। বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক দিয়েও ট্রাক প্রবেশ করছে নগরীতে। অক্সিজেন থেকে সোজা দুই নম্বর গেট হয়ে বিভিন্ন দিকে যাচ্ছে ট্রাক। বিশেষ করে ব্যস্ততম সড়ক জিইসি মোড় দিয়ে দিনের বেলায় শত শত ট্রাক নগরে প্রবেশ করছে। সকাল থেকেই ট্রাক-কাভার্ডভ্যান প্রবেশ শুরু হয়। ২৪ ঘণ্টাই প্রবেশ করে ট্রাক। শাহ আমানত ব্রিজ দিয়ে বহদ্দারহাট বা মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে কোতয়ালী মোড় হয়ে ট্রাক চলাচল করছে। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ থেকে পণ্য নিয়ে নগরীর মধ্য দিয়ে জেলা ও দেশের বিভিন্ন এলাকায় পণ্য যাচ্ছে দিন-রাত।

চট্টগ্রাম জেলা ট্রাক-কাভার্ডভ্যান অ্যান্ড মিনি ট্রাক মালিক গ্রুপের সভাপতি মো. আবদুল মান্নান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, দিনের বেলায় ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চলাচল নিষিদ্ধ থাকলে কিভাবে চলে সেটা আমার জানা নেই। তবে ট্রাফিক আইনের কঠোর প্রয়োগ হলে তাহলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করতে কেউ পারবে না। পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশ আরো সজাগ ও সচেতন হতে হবে যাতে কোনোভাবে কেউ আইন অমান্য করে পার না পায়। একমাত্র আইনের প্রয়োগ যথাযথ হলে সম্ভব সড়ক দুর্ঘটনা ও যানযট নিরসন বলে দাবি করেন তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করেই ট্রাক চলাচল করে দিনে। প্রতিটি ট্রাক বা কাভার্ডভ্যান চলাচলের বিপরীতে টাকা দিতে হয়। এতে দিনে লাখ টাকা লেনদেন হয়। টেন্ডাররা এ টাকা তোলে।

সিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) কুসুম দেওয়ান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, দিনের বেলায় যাতে নগরীতে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ঢুকতে বা চলাচল করতে না পারে এজন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া আছে। সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নির্দিষ্ট রুট ছাড়া এগুলো চলাচল করতে পারবে না। সড়ক দুর্ঘটনাও যানযট নিরসনে জনসচেতনা এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কোনো ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে দিনে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান চলাচলের কারণে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া যানজট নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে জাকির হোসেন রোড, জিইসি থেকে আগ্রাবাদ-ইপিজেড হয়ে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত সড়কে সার্বক্ষণিক যানজট সৃষ্টি হয়। পোর্ট কানেকটিং সড়কেও যানজট লেগে থাকে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close