নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ জানুয়ারি, ২০১৯

পায়রা বন্দরের গভীরতা বাড়ছে ব্যয় ৮৬৪৩ কোটি টাকা

বেলজিয়ামের সঙ্গে ড্রেজিং চুক্তি

পায়রা বন্দরকে ‘পূর্ণাঙ্গরূপে’ চালু করার লক্ষ্যে রাবনাবাদ চ্যানেলের গভীরতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বেলজিয়ামভিত্তিক ড্রেজিং কোম্পানি ইয়ান দে নুলের সঙ্গে গতকাল সোমবার চুক্তি করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জোয়ারের সময় সর্বোচ্চ ১২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ সরাসরি বন্দর জেটিতে ভিড়তে পারবে। সেক্ষেত্রে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বিদেশ থেকে আনা ২ কোটি মেট্রিক টন কয়লা প্রতি বছর এ বন্দরে খালাস করা যাবে।

পায়রা ড্রেজিং কোম্পানি লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে ইয়ান দে লুনের মাধ্যমে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৮ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের পাশাপাশি ১২ বছর রাবনাবাদ চ্যানেলের রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং করবে ইয়ান দে নুল।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর এম জাহাঙ্গীর আলম এবং ইয়ান দে লুনের চেয়ারম্যান ডেভিড জনচিরি নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এই চুক্তিতে সই করেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুস সামাদসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের ফলে ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পথে, ১০০ থেকে ১২৫ মিটার প্রশস্ত এবং সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ৫ মিটার গভীরতা পাবে রাবনাবাদ চ্যানেল। তাতে ২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে ৩ হাজার কনটেইনারবাহী জাহাজ এবং ৪০ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার বাল্কবাহী জাহাজও বন্দরের জেটিতে সরাসরি ভিড়তে পারবে।

কমডোর এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৮ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। যা বেলজিয়াম এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সির সহায়তায় এইচএসবিসি এবং এর কনসোর্টিয়াম ব্যাংক থেকে পায়রা ড্রেজিং কোম্পানি লিমিটেড গ্রহণ করবে। প্রাথমিক রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং শেষ হওয়ার ৬ মাস পর থেকে ২০টি সমপরিমাণ অর্ধবার্ষিক কিস্তিতে সুদসহ এ অর্থ পরিশোধ করবে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ।

তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জোয়ারের সহায়তায় সর্বোচ্চ ১২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ, ৩ হাজার কনটেইনারবাহী জাহাজ ও ৪০ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার বাল্কবাহী জাহাজ বন্দরের জেটিতে সরাসরি ভিড়তে পারবে। ফলে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বছরে ২০ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লা বন্দরে সরাসরি খালাস করা যাবে। যা দেশের পশ্চিমাঞ্চলের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপকরণ চাহিদা পূরণ করবে। এছাড়া বন্দর অবকাঠামোসহ অন্যান্য কম্পোনেন্ট যেমন- কনটেইনার, বাল্ক ও এলএনজি টার্মিনাল ইত্যাদি স্থাপনা নির্মাণের লক্ষ্যে আগ্রহী দেশ ও প্রতিষ্ঠান পায়রা বন্দরে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে। বন্দরকেন্দ্রিক দেশের দক্ষিণাঞ্চলে শিল্প অবকাঠামো গড়ে উঠবে এবং আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে।

অনুষ্ঠানে জনানো হয়, পায়রা বন্দরকে গভীর সমুদ্রবন্দর আকারে গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাবনাবাদ চ্যানেলকে ভবিষ্যতে ১৪.৫ মিটার গভীর করা হবে। এ নতুন গভীর সমুদ্রবন্দর দেশের উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলে অর্থনৈতিক করিডোর প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে দক্ষিণের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে রূপান্তরিত হবে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এ প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ারিং সমীক্ষার জন্য ১৪ মাস এবং ক্যাপিটাল ড্রেজিং করতে আরো ১৪ মাস সময় লাগবে। এরপর ৬ মাস প্রাথমিক রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং এবং ৯ বছর ২ মাস রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং হবে।

২০১৩ সালের নভেম্বরে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় লালুয়া ইউনিয়নে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর হিসেবে পায়রা বন্দরের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর তিন বছরের মাথায় ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট পায়রা বন্দরের বহির্নোঙর থেকে পণ্য খালাসের মাধ্যমে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close