নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৩ জানুয়ারি, ২০১৯

জিন এক্সপার্ট মেশিনে যক্ষ্মা নির্মূলের আশা

যক্ষ্মার রোগী শনাক্ত করার জন্য আগে শুধু কফ এবং এক্সরের ওপর নির্ভর করা হতো। কিন্তু সেই পরীক্ষায় ৫০ ভাগ রোগী শনাক্তের বাইরে থেকে যেত। এই অবস্থা পরিবর্তনে দেশে এখন জিন এক্সপার্ট মেশিনের মাধ্যমে যক্ষ্মা রোগী শনাক্তের কার্যক্রম চলছে। বেশির ভাগ রোগীই শনাক্ত হচ্ছেন এই পদ্ধতিতে। এটি চলমান থাকলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে যক্ষ্মা দূর করা সম্ভব হবে এমনটিই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারি হিসাবে, ২০১৮ সালে দেশে প্রতি লাখে ২২১ জন যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয় এবং ৩৬ জন মৃত্যুবরণ করে। প্রতি বছর নতুন করে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ৩ লাখ ৬৪ হাজার জন। গত ১৭ বছরে ২৬ লাখ ৯৬ হাজার ৭১ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে ১ হাজার ১৫০টি কেন্দ্রে যক্ষ্মারোগের জীবাণু (কফ) পরীক্ষা করা হয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমবিডিসি অ্যান্ড টিবি-লেপ্রসি অ্যান্ড এএসপি প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. সামিউল ইসলাম বলেন, ‘জিন এক্সপার্ট মেশিনে আর্টিফিশিয়ার, মলিক্যুলার ডায়াগনোস্টিক করা হয়। আমরা কফ থেকেই করি। যদি আমরা মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে করতে পারি তাহলে ৯২ ভাগ কনফার্ম করতে পারি। সেনসিটিভিটিটা অনেক বেশি হয়।’

একই কথা বলেন আইসিডিডিআর, বির সিনিয়র সায়েনটিস্ট ডা. সায়রা বানু। তিনি বলেন, ‘যেহেতু শুধু স্পুটাম পরীক্ষার মাধ্যমে সব যক্ষ্মা শনাক্ত করা যায় না। তাই আমরা জিন এক্সপার্ট মেশিনের মাধ্যমে যক্ষ্মা শনাক্ত করতে যাচ্ছি।’

অধ্যাপক ডা. মো. সামিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা টিবি রোগী কি না সেটা পরীক্ষা করতে পারি আর তিনি ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগী (ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি) কি না সেটাও নির্ণয় করতে পারি। যেহেতু দুটোর চিকিৎসা ভিন্ন এবং খরচ ভিন্ন তাই আমাদের এটা জানা দরকার। ড্রাগ সেনসিবল টিবি এবং ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি দুটোই আমরা ডায়াগনোসিস করতে পারছি। সেজন্য আমরা এই জিন এক্সপার্ট মেশিনটিকে দিচ্ছি।’

তিনি জানান, ২০১৪ সাল থেকে তারা যক্ষ্মা নিয়ে কাজ শুরু করেন। তখন মেশিন কম ছিল। যেসব রোগীকে মনে করা হতো ওষুধ প্রতিরোধী অথবা যক্ষ্মা আছেই মনে করা হতো কেবল তাদের জন্য এই পরীক্ষাটা করানো হতো। এখন সব রোগীর ক্ষেত্রেই এই টেস্ট দিচ্ছেন।

দিনে দিনে টিবি শনাক্তের হার বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গত বছর পর্যন্ত সারা দেশের ৭৪ ভাগ যক্ষ্মা রোগী আমরা ডায়াগনোসিস করতে পারছি। যেটা তার আগের বছরেও ৬৪ ভাগ ছিল।’ নতুন মেশিনগুলো চালুর ফলে এই হার বেড়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অধ্যাপক ডা. মো. সামিউল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের টিবি রোগ প্রতিরোধের হার ইতোমধ্যেই কমেছে, আগে ৪০০-এর ওপরে ছিল, এখন ২৭০। আশা করছি, ইনফেকশন রেট যেটা আমরা বলি ইনসিডেন্ট রেট সেটাও আমরা কমাতে পারব। বাংলাদেশসহ যেসব দেশে টিবি রোগীর সংখ্যা বেশি সেসব দেশে ইনফেকশন কমানোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে, আমরা যে পরিবারে যক্ষ্মা রোগী আছে সেই পরিবারে শিশুদের পাশাপাশি বড়দেরও প্রতিরোধমূলক মেডিসিন দেওয়ার কথা ভাবছি। কারণ, বাংলাদেশে এখনো ৫০ ভাগ মানুষ টিবি রোগে আক্রান্ত বলে ধরে নেওয়া হয়। আমরা ইনফেকশন কমাতে না পারলে তো টিবি রোগী কমাতে পারব না।’

অধ্যাপক ডা. মো. সামিউল ইসলাম জানান, শুরুতে তাদের ১৯৩টি মেশিন ছিল। এখন উপজেলা পর্যায়ে যাচ্ছেন। আরো ৮৮টি মেশিন নতুন করে চালু করছেন। সব মিলিয়ে ২৭৬টি মেশিন থাকবে সারা দেশে। আইসিডিডিআরবির মিডিয়া ম্যানেজার এ কে এম তারিফুল ইসলাম খান জানান, তাদের ১০টি যক্ষ্মা স্ক্রিনিং সেন্টারে জিন এক্সপার্ট মেশিন রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close