সংসদ প্রতিবেদক

  ১২ জানুয়ারি, ২০১৯

সংসদে এবার ‘সাদাকে সাদা’ই বলবে জাপা

এবার জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টি (জাপা) শুধু বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকতে চায়। যদিও নির্বাচনের পর দলটির কয়েকজন সংসদ সদস্য দশম সংসদের মতো একাদশ সংসদেও সরকারে থেকে বিরোধী দলে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সিদ্ধান্ত নেন, জাতীয় পার্টির কোনো সদস্য মন্ত্রিপরিষদে থাকবে না। তারা শুধু বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকবে। সত্যিকার বিরোধী দলের যে ভূমিকা জাতীয় পার্টি এবার সংসদে সেটি করে দেখাতে চায়। জনস্বার্থের প্রয়োজনে সংসদে সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলবে ‘সত্যিকার’ বিরোধী দল। সংসদে জনস্বার্থবিরোধী কোনো আইন যাতে না হয়; সেজন্য বিরোধী দল কঠোর নজরে রাখবে আইন প্রণয়নের নানাদিক। সংসদে সরকারি দলের মাধ্যমে জনস্বার্থবিরোধী কোনো আইন বা সিদ্ধান্ত হলে জাতীয় পার্টি সংসদ থেকে প্রয়োজনে ওয়াকআউট করবে। তবে সংসদ বর্জনের মতো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত দলটি নেবে না বলে জাপা সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে, পার্টির চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের ফলে এবার জাপা থেকে নির্বাচিত ২২ সংসদ সদস্যের কেউই নতুন মন্ত্রিপরিষদে নেই। গতবার একই সঙ্গে সরকার ও বিরোধী দলে থাকায় জাপার ভূমিকা নিয়ে অতীতে সমালোচনা হয়েছে। সংসদে জাতীয় পার্টির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এবার নিজের হাতে গড়া দলকে সমালোচনার মুখে দেখতে চান না চেয়ারম্যান এরশাদ। এ কারণে তিনি সংসদে বিরোধী দলে থাকার সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি মনে করেন, এর মাধ্যমে এবার দলটি জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে। সত্যিকার বিরোধী দল হিসেবে সংসদে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি রাজপথেও থাকতে চায় জাতীয় পার্টি। সংসদের পাশাপাশি বিভিন্ন ইস্যুতে রাজপথে বিক্ষোভ-সমাবেশ করবে। তবে জনগণের ভোগান্তি হয়Ñ এমন কোনো কর্মসূচি দেবে না জাতীয় পার্টি। প্রয়োজনে নির্ধারিত কোনো স্থানে এসব দলীয় কর্মসূচি পালন করবে দলটি।

সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকার পাশাপাশি জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে যাতে উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেওয়া হয়; সে বিষয়টিও আওয়ামী লীগের কাছে দাবি জানানো হবে। এ ছাড়া জাতীয় সংসদে নিজেদের দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানাবে জাতীয় পার্টি।

এ বিষয়ে পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ‘আমাদের দাবিদাওয়া আমরা আওয়ামী লীগকে জানাব। শিগগিরই এ বিষয়ে লিখিত চিঠি দেওয়া হবে। আশা করি আমাদের দাবির যৌক্তিকতা বিবেচনা করে আওয়ামী লীগ সেগুলো মেনে নেবে।’ শুধু বিরোধী দলে থাকার বিষয়ে কেন জাতীয় পার্টির এই অবস্থান, জানতে চাইলে জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা মহাজোটে আছি। এখন যদি সরকারেও থাকি; তাহলে সংসদে সত্যিকার বিরোধী দল থাকে না। সেই চিন্তা থেকেই জাতীয় পার্টি এবার সংসদে সত্যিকার বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকতে চায়। আমরা আশা করি, এবার জাতীয় পার্টি সত্যিকার বিরোধী দল হতে পারবে।’ সংসদে বিরোধী দলের সত্যিকার ভূমিকার স্বরূপ কেমন হবেÑ জানতে চাইলে বিরোধীদলীয় সংসদ উপনেতা জিএম কাদের বলেন, ‘বিরোধী দল মানেই অবরোধ, ভাঙচুর, নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়। বিরোধী দল জাতীয় সংসদে জনগণের কল্যাণের পক্ষে কথা বলবে। সরকারের ভালো কাজের প্রশংসা করবে আর সরকারের কোনো অসঙ্গতি থাকলে তুলে ধরব।

আমরা জনগণের পক্ষে কথা বলব, জনস্বার্থ নিয়ে কথা বলব।’

প্রসঙ্গত, গত সংসদেও জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে ছিল। কিন্তু তাদের দল থেকে আবার তিনজন মন্ত্রীও ছিলেন সরকারে। তারা হলেন পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা। আর এরশাদ মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।

জাপা সূত্র জানিয়েছে, আগের মেয়াদে মন্ত্রিপরিষদে থাকা নেতারা চাইছেন সরকারে থেকেই বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকতে। কারণ তারা মনে করছেন, সরকারে থাকতে না পারলে রাজনৈতিকভাবে জাতীয় পার্টি খুব সুবিধা করতে পারবে না। তারা নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।

এর আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আওয়ামী মহাজোটের হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়। ওই সংসদে জাতীয় পার্টি থেকে জিএম কাদেরকে মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে একই সঙ্গে সরকারি দল ও বিরোধী দলে ভূমিকা রাখে জাতীয় পার্টি।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব এখন মশিউর রহমান রাঙ্গা। নির্বাচনের আগে রুহুল আমিন হাওলাদারকে এই পদ থেকে সরিয়ে রাঙ্গাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। জাপার নতুন মহাসচিব চেয়েছিলেন জাতীয় পার্টি একই সঙ্গে সরকারি দল ও বিরোধী দলে থাকুক। কিন্তু এবার সেই দ্বৈত ভূমিকায় নেই জাতীয় পার্টি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close