নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৬ জানুয়ারি, ২০১৯

সরকারে থাকতে না পেরে জাপা নেতারা অখুশি

দলের দু-একজন এও বলছেন, বিরোধী দলে থাকলে একটি দল হিসেবে জাতীয় পার্টির গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। সেটা ভবিষ্যতের জন্য ভালো

সরকারে না থাকার বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সিদ্ধান্তে দলের বেশির ভাগ সংসদ সদস্যই অখুশি। বিরোধী দলে থাকার বিষয়ে তাদের কোনো মতামত না নেওয়ায় দলের চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধও তারা। তাদের অনেকেই ভাবছেন সরকারে থেকে মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী হলে আখেরে দলের জন্যই ভালো হতো।

তবে দলের দু-একজন এও বলছেন, বিরোধী দলে থাকলে একটি দল হিসেবে জাতীয় পার্টির গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। সেটা ভবিষ্যতের জন্য ভালো। আগের সংসদে বিরোধী দলে থেকে আবার সরকারের মন্ত্রী হয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। জাতীয় পার্টির এ অংশ মনে করে, এমন দ্বিমুখী চরিত্রের জন্যই এবার তাদের আসন কমেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় আওয়ামী লীগ। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত ২৯৮টি আসনের ফল অনুসারে, জোটগতভাবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট পেয়েছে ২৮৮ আসন। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট পায় মাত্র ৭টি আসন। আলাদাভাবে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি, জাতীয় পার্টি ২২টি আসন পায়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩৪টি আসন পেয়েছিল। দলের কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার পাশাপাশি চেয়ারম্যান এরশাদ মন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব পালন করেন। কেন্দ্রীয় নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মুজিবুল হক চুন্নু, মসিউর রহমান রাঙ্গা মন্ত্রিসভায় স্থান পান। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর পরই গত বৃহস্পতিবার ঐক্যফ্রন্ট বাদে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নেন। দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ছাড়া শপথ নেন জাতীয় পার্টির বাকি ২১ সদস্যও। ওই দিন নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে সভা করেন। বৈঠক শেষে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আমরা নতুন সরকারের সঙ্গে যোগ দিতে চাই।’ তবে গত শুক্রবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সই করা এক বিবৃতিতে জানানো হয়, জাতীয় পার্টিই হতে যাচ্ছে প্রধান বিরোধী দল। বিরোধীদলীয় নেতা হবেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দলের কোনো সদস্য মন্ত্রী হবেন না।

আর গতকাল শনিবার আবার দলটির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাকে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ করার সিদ্ধান্ত জানান এরশাদ।

সংসদ সদস্যদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত এভাবে পাল্টে ফেলায় অখুশি জাতীয় পার্টির একাধিক সংসদ সদস্য। তাদের একজন কিশোরগঞ্জ-৩ থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এবং শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক। তিনি বলেন, ‘পার্টির দুই কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ ও জি এম কাদের এবং সব সদস্য মিলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল আমরা সরকারে থাকব। কিন্তু পার্টির চেয়ারম্যান নিজেই একটা স্টেটমেন্ট (বিবৃতি) লিখে পাঠিয়ে বললেন যে আমরা বিরোধী দলে থাকব। আর আমাদের কোনো সদস্য মন্ত্রী হবে না।’

মুজিবুল হক বলেন, ‘উনি (এরশাদ) কাউকে ডাকেন নাই। কারো সঙ্গে আলাপও করেন নাই, প্রয়োজনও মনে করেন নাই।’ তবে পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে মনে করেন মুজিবুল হক। কিন্তু সবার সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হতো বলেও মনে করেন তিনি।

সরকারে না যাওয়ায় কণ্ঠে ক্ষোভ ঝরে পড়ে রংপুর বিভাগ থেকে নির্বাচিত এক জাপা এমপির। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টির মন্ত্রীদের সুনাম আছে। এবারও কয়েকজন নির্দ্বিধায় মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী হতেন। এসব দায়িত্বে থাকলে দলেরই সুবিধা হয়।’ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তা দ্রুত পাল্টে ফেলার বিষয়টি বেশ পুরনো। এ নিয়ে দলের মধ্যে ক্ষোভও আছে। এভাবে বারবার সিদ্ধান্ত নিয়ে আবার পাল্টে ফেলার ফলে মানুষের কাছে হেয় হতে হয় বলে দলের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য মন্তব্য করেন। দলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা মনে করেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভালোভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে সেবার জাতীয় পার্টি ষাটের কাছাকাছি আসন পেত। সুযোগটা হাতছাড়া হয়েছে দলের চেয়ারম্যান হঠাৎ করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে। এবার গতবারের চেয়েও আসন কম। তাই এখন সরকার থেকে দূরে থেকে নিজেদের ‘বিরোধী’ ভাব দেখানো কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close