রাকিবুল রাকিব, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)

  ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮

শাকিলের আফসোস

মন চায় ঝাড়ু ফেলে কলম ধরি

শাকিলের বয়স দশ কিংবা এগারো। পরনে কালো প্যান্ট, গায়ে জড়ানো আর্জেন্টিনার জার্সি। মাথায় ঝাড়–র বোঝা নিয়ে সে হেঁটে চলেছে এক মনে। মাঝে মাঝে বলে উঠছেÑ ‘এই ঝাড়– লাগবে, ঝাড়’। পথে কোনো ক্রেতা ঝাড়– কিনতে চাইলে থামছে সে। ঝাড়– বিক্রি করে টাকা নিয়ে আবার সে হেঁটে চলেছে নতুন ক্রেতার খোঁজে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে গৌরীপুর পৌর শহরের হাতেম আলী রোডে এই দৃশ্য ধরা পড়ে। তার আফসোস, এই কাজ করি পেটের দায়ে। মন চায় মাথা থেকে ঝাড়–র বোঝা ফেলে আবার স্কুলে ভর্তি হই। ঝাড়– বিক্রি ছেড়ে কলম ধরি।

কাছে গিয়ে কথা হয় ছেলেটির সঙ্গে। এ প্রতিনিধিকে সে জানায়, তার নাম শাকিল মিয়া। বাড়ি উপজেলার মইলাকান্দা ইউনিয়নের শ্যামগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন কান্দাপাড়া গ্রামে। বাবার নাম খোকন মিয়া। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে সে তৃতীয়। অভাব-অনটনের কারণেই সে ঝাড়– বিক্রির পেশায় এসেছে।

কথা বলতে বলতে হাতেম আলী সড়কের পুকুর ঘাটে এসে বসে শাকিল। মাথা থেকে ঝাড়–র বোঝা নামিয়ে এ প্রতিনিধির সঙ্গে গল্প জুড়ে দেয় সে। শাকিল বলে, তার বড় বোন শরীফার বিয়ে হয়ে গেছে। বড় ভাই রাজিব এবার জেএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। ছোট বোন আরিফা স্থানীয় প্রতিবন্ধী স্কুলে পড়ে। তার বাবা শ্যামগঞ্জ এলাকায় একটি গ্যারেজে কাজ করে। কিন্তু দরিদ্র বাবার একার আয়ে সংসার এবং ভাই, বোনদের পড়াশোনার খরচ চালাতে কষ্ট হতো। তাই এক বছর আগে তৃতীয় শ্রেণিতেই তার পড়াশোনার ইতি ঘটে। এরপর জীবিকার তাগিদে সে শহরে ঘুরে ঘুরে ঝাড়– বিক্রি করে। বাঁশ কেটে চিকন ‘ফলি’ তৈরি করে ঝাড়– বাঁধেন শাকিলের মা রাবেয়া আক্তার ও দাদি জাহের বেগম। এরপর গৌরীপুর, ফুলপুর, তারাকান্দা, পূর্বধলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ঝাড়– বিক্রি করেন শাকিল। প্রতিটি ঝাড়– ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০টি ঝাড়– বিক্রি হলে দিন শেষে তার আয় হয় ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা। শাকিল বলেন, আমি ছোট মানুষ বলে অনেকই ঝাড়– কেনার সময় দরদাম করে না, যা চাই তা দিয়ে দেয়। তবে কিছু কাস্টমার দাম শোনেই আমাকে বকা দেয়। তখন খুব খারাপ লাগে। প্রতিদিন সকালে শাকিল যখন ঝাড়– বিক্রির উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। তখন তার পুরোনো সহপাঠীরা স্কুলে যায়। পথিমধ্যে দেখা হলে দু-একজন ঝাড়ুওয়ালা, ঝাড়ুওয়ালা বলে কটূক্তি করে তাকে। মনে কষ্ট পায় শাকিল। বাড়ি ফিরে কান্না করে সে। এর পরও শাকিল আশায় বুক বাঁধে। তার চোখে স্বপ্ন, সে আবার স্কুলে যাবে, পড়াশোনা করবে। শাকিল জানায়, ঝাড়– বিক্রি করতে আমার ভালো লাগে না। আমি আবার স্কুলে যেতে চাই। পড়াশোনা করে ডাক্তার হতে চাই। কিন্তু আমার বাবার তো টাকা নেই। পড়াশোনার খরচ দেবে কে?

এরই মধ্যে বিকেলের সূর্য পশ্চিমে হেলেছে। ক্রমেই অন্ধকার হয়ে আসছে চারদিক। পুকুরঘাটে এক ক্রেতা এসে জিজ্ঞাস করলেন এই পিচ্ছি ঝাড়– কত করে? শাকিল বলে প্রতি পিস ২৫ টাকা। দরদামের পর ২০ টাকা করে দুটি ঝাড়– বিক্রি করে শাকিল। টাকা পকেটে ভরে নিজের ঝাড়–র বোঝা মাথায় তুলে নেয় শাকিল। এ প্রতিনিধিকে বলে ভাইজান রাত হয়ে যাচ্ছে, জারিয়ার ট্রেনে বাড়ি ফেরব। গৌরীপুর স্টেশনে যাওয়ার রাস্তাটা কোন দিকে?

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close