বদরুল আলম মজুমদার

  ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮

শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকার ঘোষণা ঐক্যফ্রন্টের

কোনো একটি দাবিও আদায় হয়নি বিএনপি বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের। তারপরও নির্বাচনের মাঠে আছেন তারা। দলগুলো থেকে বলা হচ্ছে আন্দোলনের অংশ হিসেবে এবারের নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকতে চান। ধানের শীষের প্রার্থীরা সারা দেশে প্রতিরোধে মুখে মাঠে নামতে পারছেন না বলে অহরহ অভিযোগ আসছে। কিন্তু শেষ অবধি বিএনপি জোট নির্বাচনে থাকতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় তাদের নির্বাচনে থাকা নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনেও রয়েছে গুঞ্জন। তবে জোটের সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অস্তিত্বের লড়াই হিসেবে দেখছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। যেকোনোভাবে ভোটের মাঠে টিকে থাকার কৌশলকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন নেতারা।

জানা গেছে, হামলা, মামলা, নির্যাতন এবং গ্রেফতার এড়িয়ে শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে টিকে থাকার লড়াইয়ের ছক কষছে দলটির হাইকমান্ড। তাদের টার্গেট টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতাসীনদের বিজয় ঠেকানো। বিএনপির বিশ্বাস ভোটের মাঠে টিকে থাকলেই দলের জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে। দলের বেশ কয়েকজন প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেও এমন আভাস পাওয়া গেছে। তাই সর্বোচ্চ কৌশলে প্রচারণায় মাঠে থাকতে ওপর থেকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

বিএনপির একটি সূত্রের দাবি, ক্ষমতাসীন বিরোধী সব শক্তিকে হাতে রেখেছে বিএনপি। ড. কামালের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিতর্কিত দল জামায়াতকে সবচেয়ে বেশি আসন দিয়ে সমঝোতায় এসেছে। ঐক্যফ্রন্টের মাধ্যমে বিএনপি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক গতি ধরে রাখবে আর দলের নেতাকর্মী ও জামায়াতের মাধ্যমে মাঠে অবস্থান টিকিয়ে রাখবে। নির্বাচনের শুরুতে বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সব আসনে নিজেদের প্রার্থী টিকিয়ে রাখা। আর এখন দলের নেতাদের কাছে পরবর্তী চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত মাঠে টিকে থাকা। দলের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো প্রার্থীরা স্বাধীনভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাওয়া।

এ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজধানীসহ সারা দেশে প্রচার-প্রচারণায় বাধা এবং প্রতিপক্ষের আক্রমণের শিকারও হয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। অধিকাংশ প্রার্থী এলাকায় গেলেও ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। প্রতিদিন গ্রেফতার হচ্ছেন নেতাকর্মী-সমর্থকরা। নতুন নতুন মামলা হচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন, আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ অধিকাংশ নেতাই হামলার শিকার হয়েছেন। ঢাকাসহ সারা দেশে নৌকার প্রার্থীদের পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেলেও ধানের শীষের পোস্টার ও প্রচারণা চোখে পড়ছে না।

এ অবস্থায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, ভয়াবহ এক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আছি আমরা। নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসন, সিভিল প্রশাসন সরকারের সঙ্গে একজোট বেঁধে সারা দেশে ধানের শীষের প্রার্থী এবং সমর্থকদের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। এ অবস্থায় আমরা কী করতে পারি। আমরা জানি এসব করা হচ্ছে এই কারণে যে, আমাদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিয়ে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চায় আওয়ামী লীগ। কিন্তু সেই অশুভ স্বপ্ন আর এবার বাস্তবায়িত করতে পারবে না তারা। আমরা শেষমুহূর্ত পর্যন্ত দেখব।

ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা জয়লাভের পথে আছি, কোনো অবস্থাতেই ভোটের মাঠ ছেড়ে যাব না। সারা দেশে ঐক্যফ্রন্টের ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। যত হামলা গ্রেফতার করুক কোনো লাভ নেই। ১৫ দিন পরই এই সরকারকে বিদায় নিতে হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নির্বাচনের মাঠে আমরা আছি এবং ৩০ তারিখ পর্যন্ত মাটি কামড়ে পড়ে থাকব। যতই নির্যাতন, অত্যাচার হোক আমাদের সরানো যাবে না। ঐক্যফ্রন্ট ভোটের মাঠে আছে এবং শেষ পর্যন্ত থাকবে।

এদিকে গতকাল থেকে ঐক্যফ্রন্টের উদ্যেগে রোর্ড মার্চের আয়োজন করা হয়েছে। রোর্ড মার্চটি উত্তরা সেক্টরের আ স ম আবদুর রবের বাসা থেকে দুপুর ২টায় রওনা হয়ে টঙ্গীতে প্রথম পথসভা করেন জোটের শীর্ষ নেতারা। গাজীপুর-২ আসনের প্রার্থী সালাউদ্দিন সরকারের সমর্থনে এ পথ সভায় জাসদের সভাপতি আ স ম রব বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভয় পেয়েছেন। নির্বাচন বন্ধ করার সুযোগ খুঁজছেন। তিনি নির্বাচন থেকে পালিয়ে যেতে চান। ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপত্তা দেওয়ার নিশ্চয়তা দেন তিনি। এমনকি প্রধানমন্ত্রী বিদেশে যেতে চাইলেও দেওয়া হবে বলে জানান। রব বলেন, বিরোধী দলকে নিয়েই তারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন।

নির্বাচনী প্রচারে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা প্রটোকল নিয়ে চলছে অভিযোগ করে রব বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য তাদের প্রটোকল দিতে হবে। ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সব ধরনের মামলা-হামলা বন্ধ করার আলটিমেটাম দিয়ে বলেন, এসব বন্ধ না হলে জনগণ রুখে দাঁড়াবে। তখন সব কিছুর দায় প্রধানমন্ত্রীকে নিতে হবে।

ঐক্যফ্রন্টের আরেক নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘যুদ্ধে নেমেছি। ওদের কাছে অস্ত্র আছে, আমাদের নেই। আমাদের আছে ব্যালট। এ লড়াইয়ে আমরাই জিতব।’ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঘরে ঘুমানোর দরকার নেই। মার খেলেও জবাব না দেওয়ার জন্য বলেন। সব জবাব ৩০ ডিসেম্বর দেওয়া হবে উল্লেখ করে বলেন, ‘এমন জবাব দেব যে আওয়াজও করতে পারবে না।’

এ পর্যন্ত বিএনপির ৮ জন প্রার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, অপকর্মের জবাব দেওয়ার ভয়ে সরকার ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে দেশের অস্তিত্বের, দুঃশাসন হটানোর ও খালেদা জিয়ার মুক্তির নির্বাচন বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, জেতার কোনো বিকল্প নেই। ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাটি কামড়ে পড়ে থাকার আহ্বান জানান এই বিএনপি নেতা।

ঐক্যফ্রন্টের এ রোড মার্চে জোটের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের উপস্থিত থাকার কথা জানানো হলেও তিনি রোড মার্চে অংশ নেননি। এরপর গাজীপুর চৌরাস্তা, ময়মনসিংহের ভালুকা, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ, ফুলপুর ও শেরপুরে বেশ কয়েকটি পথসভা হওয়ার কথা রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close