গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

  ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮

গৌরীপুরে ইউপি সদস্যের মৃত্যুর জেরে

শ্রমিক লীগের কার্যালয়সহ ৫৬ ঘরে আগুন, ভাঙচুর, লুটপাট

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে শাহেদ বাহিনীর হামলায় আহত ইউপি সদস্য মো. মোস্তাকিমের মৃত্যুর ঘটনার জের ধরে উপজেলা মহিলা শ্রমিক লীগের কার্যালয়সহ ৪ গ্রামের ২৫ বাড়ির ৫৬ ঘরে আগুন, ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। গতকাল শুক্রবার সকালে বিক্ষুব্ধ জনতা কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে দফায় দফায় এই হামলা চালায়। খবর পেয়ে ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছালে হামলাকারীরা তাদের আগুন নেভাতে বাধা দেয়।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ফায়ার সার্ভিস টিম আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। অভিযোগ আছে, হামলার সময় বিক্ষুব্ধ জনতা অনেক আসামিপক্ষের বাড়ি ছাড়াও নিরপরাধ ও অসহায় মানুষের ঘরবাড়িও পুড়িয়েছে। ঘরবাড়িহারা এই লোকগুলো এখন পরিবার নিয়ে শীতের রাতে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে।

ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মাহফুজুর রহমান মাহফুজ জানান, শুক্রবার ভোরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে বিক্ষুব্ধ জনতা রামদা ও লাঠিসোটা নিয়ে আমাদের দিকে তেড়ে আসে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মো. মোস্তাকিম উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। পূর্বশত্রুতার জের ধরে গত ৬ ডিসেম্বর প্রতিপক্ষ একই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য স্বপন মিয়া একদল সন্ত্রাসী নিয়ে মোস্তাকিমকে রড দিয়ে পিটিয়ে দুপা ও ডান হাত ভেঙে গুরুতর আহত করে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোস্তাকিমের মৃত্যু হয়।

এর আগে হামলার ঘটনায় মোস্তাকিমের স্ত্রী আসমা আক্তার বাদী হয়ে ৭ ডিসেম্বর গৌরীপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামি করা হয় ইউপি সদস্য স্বপন ও তার বাবা শাহেদ আলীসহ ৮ জনকে। এর মধ্যে পুলিশ শাহেদ আলীকে গ্রেফতার করেছে।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে মোস্তাকিমের মৃত্যুর খবর গ্রামে পৌঁছালে তার পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার ভোরে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী বালুচড়া গ্রামে শাহেদ আলীর ও তার ছেলে স্বপনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ৮টি ঘরে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এরপর পর্যায়ক্রমে নিজামাবাদ, মানিকদি ও বাসাবাড়ি গ্রামে শাহেদ আলীর আত্মীয়স্বজনের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ৩৫ ঘরবাড়িতে আগুন ও লুটপাট চালায়। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় স্বল্প পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলরুবা ইয়াসমিন, উপজেলা মহিলা শ্রমিক লীগের সভাপতি তাসলিম ইয়াসমিন কলির বাড়িসহ ১৩ ঘরবাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় উপজেলা শ্রমিক লীগের দলীয় কার্যালয়টিও ভাঙচুর করা হয়।

বালুচড়া গ্রামের গৃহবধূ কামরুন্নাহার ও নূরজাহান জানান, মোস্তাকিমের ওপর হামলার ঘটনায় আমাদের পরিবার কেউ জড়িত নয়। শুধু শাহেদ আলীর প্রতিবেশী হওয়ায় আমাদের ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে ওরা। হামলার সময় আমরা তাদের হাতে-পায়ে ধরে কান্নাকাটি করেও কোনো কাজ হয়নি। উপজেলা মহিলা শ্রমিক লীগের সভাপতি তাসলিমা ইয়াসমিন কলি বলেন, মোস্তাকিমের মৃত্যুর ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে জামায়াত-বিএনপির লোকজন আমার দুটি ঘর লুটপাট করে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে। ভাঙচুর করেছে মহিলা শ্রমিক লীগের দলীয় কার্যালয়টি। পুলিশ কোনো ভূমিকা নেয়নি। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হামলার দৃশ্য দেখেছে।

গৌরীপুর থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, মোস্তাকিমের মৃত্যুর ঘটনার জের ধরে ৪টি গ্রামে ২৫ বাড়ির প্রায় ৫০ থেকে ৫৬টি ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। তবে এ বিষয়ে থানায় এখনো কোনো পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আসেনি। অন্যদিকে মোস্তাকিমের স্ত্রীর দায়ের করা মামলাটি হত্যা মামলা রূপান্তর করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close