বিশেষ প্রতিনিধি, রাজশাহী

  ২১ নভেম্বর, ২০১৮

রামেকে চিকিৎসক প্রহৃত

অভিযুক্ত যুবলীগ নেতার শাস্তির আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার চিকিৎসকদের

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে যুবলীগ নেতার হাতে প্রহৃত হওয়ার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ চিকিৎসকদের কর্মবিরতি অভিযুক্তকে শাস্তি প্রদানের আশ্বাসে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসককে মারপিট করেন যুবলীগ নেতা সুমনুজ্জামান সুমন। এ ঘটনার পর প্রায় আধা ঘণ্টা চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে বিক্ষোভ করেন চিকিৎসকরা। পরে ওই যুবলীগ নেতার শাস্তির আশ্বাসে কাজে যোগ দেন চিকিৎসকরা।

এর আগে গত সোমবার রাতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পুঠিয়ার বেলপুকুর এলাকায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় সুমনুজ্জামান সুমন রামেক হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা বদিউজ্জামানের ছেলে এবং পুঠিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। সুমন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী বলে জানা গেছে। পুঠিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারার সমর্থনে নিজ এলাকা ছাড়াও একের পর এক বিতর্কিত কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছেÑএমন অভিযোগ ওই দলেরই অনেক ত্যাগী নেতার।

জানা গেছে, গত সোমবার সুমনের নেতৃত্বে তাদের কর্মী-সমর্থকরা বেলপুকুর রেলগেট সংলগ্ন দলের ওয়ার্ড কার্যালয়ে হামলা চালায়। এ সময় কার্যালয়ে অবস্থানরত পুঠিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি তুহিনুজ্জামান তুহিন ও তার সমর্থকরা প্রতিরোধ করতে গেলে উভয় গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ওয়ার্ড কার্যালয়সহ কয়েকটি দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) বেলপুকুর থানা পুলিশের সঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে লাঠিচার্জ করে দুই পক্ষকেই ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১৫-২০ জন আহত হয়। তাদের মধ্যে আহত যুবলীগ নেতা সুমন ও তার অনুসারী মনিরুল ইসলামকে রাতেই রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু মনিরুলের চিকিৎসা হচ্ছে না অভিযোগে সুমন মঙ্গলবার সকালে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের রেজিস্ট্রার আহসানুজ্জামান টিংকুর সঙ্গে বাগবিত-ায় জড়ান। একপর্যায়ে ওই চিকিৎসককে মারপিট করেন সুমন। এর পরপরই সুমনের শাস্তির দাবিতে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন চিকিৎসকরা।

এ তথ্য নিশ্চিত করে রামেক হাসপাতাল পুলিশ বক্সের ইনচার্জ (সহকারী উপপরিদর্শক) রফিকুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে সুমনকে আটক করে হাসপাতাল পরিচালকের দফতরে নিয়ে যায়। এরপর সুমনের শাস্তির দাবিতে লিখিত অভিযোগ দেন চিকিৎসকরা। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ শাস্তির আশ্বাস দিলে কাজে ফেরেন চিকিৎসকরা।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী কমিশনার মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, ‘সংঘর্ষের পর বেলপুকুর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি।’

উল্লেখ্য, এর আগেও সুমন গত ১৮ মে রাবির ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের মাস্টার্সের দুই শিক্ষার্থী রতন আলী ও মানিক আলীকে মারপিট করেন। এ ঘটনায় গত ২২ মে সুমনুজ্জামান সুমনের শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ মিছিল ও মানববন্ধন করে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close