পাঠান সোহাগ

  ১২ নভেম্বর, ২০১৮

আজ বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস

সচেতনতা ও সঠিক সময়ে চিকিৎসায় নিরাময় সম্ভব

নিউমোনিয়ার সব বয়সের মানুষ আক্রান্ত হলেও শিশুদের মধ্যে মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি। সচেতনতা ও সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নিলে নিউমোনিয়ার নিরাময় সম্ভব। গবেষণায় দেখা যায়, সারা বিশ্বে নিউমোনিয়ার পাঁচ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশেও প্রতি বছর ১৭ হাজারের বেশি শিশু মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে নিউমোনিয়ায় শিশু মৃত্যুর হার ৯৮ শতাংশ। বাংলাদেশে এই শিশু মৃত্যুর হার কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নামিয়ে আনাতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আজ বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘নিউমোনিয়া প্রতিরোধ আমাদের ভাগ্যে নয় এটি আমাদের দায়িত্ব’।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, নিউমোনিয়া ফুসফুসের প্রদাহজনিত একটি রোগে। সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক সংক্রমণের কারণে নিউমোনিয়া হয়। নিউমোনিয়া মৃদু বা হালকা থেকে জীবনহানিও হতে পারে। যারা দীর্ঘদিন রোগে ভুগছেন অথবা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল বা কম এমন বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে নিউমোনিয়া বেশি দেখা যায়। তবে তরুণ, অল্প বয়স্ক, স্বাস্থ্যবান লোকদেরও নিউমোনিয়া হতে পারে।

তারা বলেন, সাধারণত জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, কাপুনি দিয়ে জ্বর, ঘাম হওয়া, বুকে ব্যথা যা শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে উঠা-নামা করে মাথাব্যথা, মাংসপেশীতে ব্যথা, ক্লান্তি অনুভব করলে সাধারণত নিউমোনিয়া হয়েছে বলে আমরা ধরে নেই। নিউমোনিয়া সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় শিশু। তবে বয়স্কদের মধ্যে যারা ধূমপান করেন, ফুসফুসে কোনো আঘাত পেয়েছেন, যাদের কেমোথেরাপি (ক্যানসারের চিকিৎসা) অথবা অন্য কোনো ওষুধ খাওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে এসেছে, তারা আক্রান্ত হন বেশি।

সরেজমিনে রাজধানীর ঢাকা শিশু হাসপাতালের একাধিক শিশুরোগ বিশেজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১৩ হাজার ৯৫৫ জন শিশুর মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু ছিল তিন হাজার ৩৭৮ জন। চিকিৎসা নিতে এসব শিশু ও তাদের অভিভাবকদের গড়ে পাঁচ দিন করে হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। একই সময়ে হাসপাতালটিতে ১৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুধুমাত্র অ্যান্টিবায়োটিকের জন্য রোগী প্রতি গড়ে এক হাজার ৯০০ টাকা করে খরচ হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, নিউমোনিয়া নিরাময়যোগ্য রোগ। এই রোগে শিশু মৃত্যুর মূল কারণ হলো অভিভাবকদের অসচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসকের কাছে না যাওয়া। এমনকি উন্নয়নশীল দেশে শতকরা ৫৪ শতাংশ এবং বাংলাদেশে মাত্র ৩৭ শতাংশ নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে আসা হয়।

শিশুদের নিউমোনিয়া রোগের কারণ, সম্পর্কে ঢাকা শিশু হাসপাতালের অ্যাজমা সেন্টারের প্রধান ও রেসপেরিটরি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যপক ডা. কামরুজ্জামান বলেন, শ্বাসনতন্ত্রের যেকোনো অংশে হঠাৎ সংক্রমণ হতে পারে। এর ফলে সর্দি, কাশি ও জ্বর হয়। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা বা যতœ না নিলে নিউমোনিয়া হতে পারে। তিনি বলেন, নিউমোনিয়া হলে শিশু দ্রুত দম নিয়ে থাকে। তখন শ্বাস নেওয়ার সময় বুকের নিচের অংশে দেবে যায়। তরল খাবার পান করতে কষ্ট হয় এবং মায়ের বুকের দুধ টেনে খেতে পারে না। শিশু অনেক সময় নেতিয়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে, এ ছাড়াও খিচুনি দেখা দিতে পারে।

শিশুদের নিউমোনিয়ার প্রতিকার বিষয়ে এই বিশেষজ্ঞ জানান, বাংলাদেশে মাত্র ৪৩ শতাংশ মা শিশুকে শুধু বুকের দুধ খাওয়ান। প্রত্যেক মা জন্মের প্রথম ছয় মাস মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে ১৫ থেকে ২৩ ভাগ পর্যন্ত এ প্রকোপ কমানো যায়। এ ছাড়া পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখা ও সময়মতো নিউমোনিয়ার টিকা দিয়ে আক্রান্ত ও মৃত্যুরোধ করা যেতে পারে। তিনি বলেন, নিউমোনিয়া রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে। প্রচুর তরল খাবার, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। রোগীর প্রতি যতœ নিতে হবে। সুষম খাবার দিতে হবে। ধূমপানের অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। অন্যের সামনে হাঁচি/কাশি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সিএইচআরএফ’র সিনিয়র রিসার্চ কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহিদুল ইসলাস বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে যে স্বাস্থ্যসেবা চালু হয়েছে, সেখানেও শিশুদের নিউমোনিয়া রোগ শনাক্ত করার ব্যবস্থা রয়েছে। নিউমোনিয়া প্রতিরোধে বিনামূল্যে টিকা প্রদান করছে সরকার। ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতি হাজার শিশুর মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশু মৃত্যুহার তিনজনে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তা অর্জন করা সম্ভব হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close