নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৭ অক্টোবর, ২০১৮

রাজধানীর ২০ পয়েন্টে পরীক্ষামূলক ‘স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল’

রাজধানীর ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যালগুলোর মধ্যে ২০টি সিগন্যালে পরীক্ষামূলকভাবে ‘স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যালে’ গাড়ি চলছে। দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকা সিগন্যাল বাতিগুলো মেরামত করে যানবাহন চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার নগরীর বেশ কয়েকটি জায়গা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই সিগন্যালগুলো ট্রাফিক পুলিশ বক্স থেকে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। নগরীর বাংলামোটর, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, শাহবাগ, রাজারবাগ, ফকিরাপুল, গুলিস্তান, দৈনিক বাংলা, পল্টন, কাকরাইল, নাইটিঙ্গেল মোড়, বিচারপতির বাসভবন, মৎস্য ভবন, কদম ফোয়ারা, বেইলি রোড, ধানমন্ডি-২৭, রাসেল স্কয়ার, ধানমন্ডি ১০ ও ধানমন্ডি-৭ । তবে উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার একটি সিগন্যাল বাতিও মেরামত করা হয়নি। প্রশাসনিক জটিলতার কারণে কাজটি আটকে আছে বলে জানা যায়।

যানজট নিরসনে ২০০১-০২ অর্থবছরে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট’ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৮টি সড়ক মোড়ে আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি বসানো হয়। নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেইস) প্রকল্পের মাধ্যমে সিগন্যাল বাতিগুলো স্থাপন করে সিটি করপোরেশন। কিন্তু নানা ধরনের ত্রুটির কারণে নির্মাণ শেষে এর ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়নি। এতে যে সময় নির্ধারণ করে দেওয়া আছে তার সঙ্গে বাস্তব যানবাহনের পরিসংখ্যানের কোনো সামঞ্জস্য ছিল না। সে কারণে বেশ কয়েকবার পরীক্ষামূলক চালু করার পর সফলতা না পাওয়ায় তা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ।

২০০৮ সালের শেষের দিকে প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়। সে সময় উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে পুরো ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আরো ভেঙে পড়ে। শহরে দেখা দেয় ভয়াবহ যানজট। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে কিছু সময় পরই কাউন্টডাউন বন্ধ করে আগের মতো হাত দিয়ে সিগন্যাল ব্যবস্থায় ফিরে যায় ট্রাফিক পুলিশ। পরে ২০১০ সাল থেকে পাঁচ বছর মেয়াদী প্রকল্পটির দ্বিতীয় দফায় অর্থায়ন করা হয়। মেয়াদ শেষ হয় ২০১৪ সালের জুনে। কিন্তু আজ পর্যন্ত প্রকল্পটির সফলতা পায়নি নগরবাসী।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশে এই সিগন্যাল বাতিগুলো চালু করার উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন। তবে এতে সময়ের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা থাকবে সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক পুলিশের কাছে। রিমোটের মাধ্যমে এটি কন্ট্রোল করা হবে। আপাতত স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালের মাধ্যমে নগরীর ২০টি স্থানে ট্রাফিক কন্ট্রোল চালু করে যানবাহন চালকদের জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

তবে বিষয়টি পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হলেও ছুটির দিন ছাড়া অন্য দিন এই সিগন্যালের মাধ্যমে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশের সদস্য। পরীক্ষামূলকভাবে ‘স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যালে’ গাড়ি চলাচলে এবার যন্ত্রগুলোর মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্তমানে দুই সিটি করপোরেশনের ৮৮টি সড়ক মোড়ের মধ্যে ৬২টি ইন্টারসেকশনকে রিমোট কন্ট্রোল অটোমেটিক বৈদ্যুতিক সিগন্যালের আওতায় আনা হচ্ছে। যন্ত্রের মাধ্যমে সময় নির্ধারণ রিমোট কন্ট্রোল ব্যবস্থার মাধ্যমে ট্রাফিক পুলিশ বক্স থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ জন্য কন্ট্রোলারের ডায়াগ্রামের পরিবর্তন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে যে কনফিগারেশন নির্ধারণ করা রয়েছে তার সঙ্গে রিমোট সিস্টেমের সামঞ্জস্য নেই। সে কারণে রিমোট সিস্টেমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডায়াগ্রামের পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক অবস্থায় দুটি ইন্টারসেকসন নির্ধারণ করা হয়েছে। এ দুটি হচ্ছে বাংলামোটর ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়। এ দুটি ইন্টারসেকশনের ডায়াগ্রামের পরিবর্তন আনা হবে। এরপর রিমোর্টে কন্ট্রোলের মাধ্যমে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হবে। এ জন্য ভারত থেকে একটি দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারিং টিম আগামী রোববার দেশে আসার কথা রয়েছে। তারা যন্ত্রগুলো পরীক্ষা করে সব সিস্টেম ডিএসসিসির কাছে হস্তান্তর করবে। সফলতা আসলে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে এ কার্যক্রম। পর্যায়ক্রমে বাকি সবগুলো ইন্টারসেকশনে এই রিমোর্ট কন্ট্রোল অটোমেটিক বৈদ্যুতিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনা চালু করা হবে।

এর আগে, গত ১৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটের ‘ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন’ সংক্রান্ত এক সভায় সিটি করপোরেশন কর্তৃক বাস্তবায়িত ট্রাফিক সিগন্যালে স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনা পুলিশকে হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত হয়। সভার রেজুলেশন অনুযায়ী, শহরের ট্রাফিক সিগন্যালগুলোতে রিমোট কন্ট্রোল অটোমেটিক বৈদ্যুতিক সিগন্যাল চালু করতে হবে। এ জন্য পরবর্তী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডিএনসিসি ও ডিএমপিকে সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে সময়ের মধ্যে সংস্থা দুটি বিষয় কার্যকর করতে পারেনি। পুরো ব্যবস্থাপনাটি একটি প্রকল্পের আওতায় থাকায় প্রকল্পের মাধ্যমে বিদেশ থেকে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ আমদানি করতে সময় লেগে যায়।

ঢাকার রাস্তায় অসহনীয় যানজট কমাতে ট্রাফিক সিগন্যাল ইন্টারসেকশনে ‘কাউন্টডাউন টাইমার’ বসায় ঢাকা সিটি করপোরেশন। সড়কে বর্তমানের চেয়ে অন্তত ১০ ভাগ ট্রাফিক মোবিলিটি (সচলতা) বৃদ্ধি, ঢাকা মহানগরীর বায়ু দূষণ কমানোসহ ট্রাফিক ব্যবস্থা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। কোন ট্রাফিক সিগন্যালে গাড়ি কতক্ষণ থামবে তা ওই সিগন্যালের পুলে স্থাপিত কাউন্টডাউন টাইমার নির্দেশ করবে। সে অনুযায়ী চলবে ট্রাফিক সিগন্যাল। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে এই ব্যবস্থাটি চালু করতে পারেনি পুলিশ।

জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ ও কেইস প্রকল্পের পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা পুরো ব্যবস্থাপনাটি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করতে যাচ্ছি। এরই মধ্যে ২০টি স্থানে অটো সিগন্যালিংয়ের মাধ্যমে পুলিশ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছে।’ ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার ট্রাফিক (দক্ষিণ) মো. মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ডিএসসিসির কেইস প্রকল্পের আওতায় ৮৮টি সিগন্যাল করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০টি ঠিক করা হয়েছে। বাকিগুলো ঠিক করার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। আমরা বিভিন্ন স্থানে টেস্ট কেস হিসেবে চালিয়েছি। এর মাধ্যমে চালকদের অভ্যস্ত করা হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close