নিজস্ব প্রতিবেদক

  ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশিষ্টজন

পাকিস্তানের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি

পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আদলে এখনো বিশ্বের অনেক দেশে নৃশংস গণহত্যা-নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সোচ্চার হতে হবে। গত ৪৭ বছরেও পাকিস্তানের আত্মস্বীকৃত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকার করতে হবে একাত্তরের গণহত্যা ঘটেছে। পাশাপাশি এ গণহত্যার জন্য পাকিস্তান সরকারকে ক্ষমাও চাইতে হবে। গতকাল শনিবার রাজধানীর বাংলা একাডেমি মিলনায়তনে ‘১৯৭১ : মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা ও বিশ্ব’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে বিভিন্ন দেশের নামকরা গবেষক ও বুদ্ধিজীবীরা এ আহ্বান জানান।

সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয়বারের মতো দেশে দুই দিনব্যাপী ‘গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র’ এ সেমিনারের আয়োজন করেছে। গত শুক্রবার এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। এবারের সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, মিসর, কম্বোডিয়া ও বাংলাদেশের ২৩ জন গবেষক অংশ নেন। শনিবার এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ। অধিবেশনে বক্তব্য দেন মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক, যুক্তরাজ্যের ড. লাখমুল লুহানা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্যামুয়েল জ্যাফি, ভারতের তৈমুর রাজা চৌধুরী, নেদারল্যান্ডসের ড. থিজস বাউনেট, বেলজিয়ামের পাওলো কাসাকা ও মিসরের মহসিন আরিশি। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের ট্রাস্টি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।

কাজী সাজ্জাদ আলী বীরপ্রতীক বলেন, পাকিস্তান সুযোগ পেলে আবারও গণহত্যায় শামিল হবে। আন্তর্জাতিক উদ্যোগে পাকিস্তানকে বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানান তিনি। লাখুমল লুহানা বলেন, পাকিস্তান শুধু বাংলাদেশেই গণহত্যা করেনি, বেলুচিস্তানে গণহত্যা অব্যাহত রেখেছে। টিক্কা খান বলেছিলেন, তারা মানুষ চান না, মাটি চান। এমন আত্মস্বীকৃত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ৪৭ বছরেও আদায় করা যায়নি। যদিও জাতিসংঘে গণহত্যা সম্পর্কিত স্পষ্ট আইন রয়েছে।

স্যামুয়েল জ্যাফি বলেন, কিছু দিন পরই বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি করবে। এজন্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার বিষয়ে সঠিক ইতিহাস সংবলিত গ্রন্থ রচনা জরুরি। তৈমুর রাজা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ও আসামের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। মুক্তিযুদ্ধের সময় আসাম ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তিশালী আশ্রয় কেন্দ্র। অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তুলতে হলে এখন দুই অঞ্চলের মানুষকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।

পাওলো কাসাকা বলেন, গণহত্যার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সোচ্চার হতে হবে।

থিজস বাউনেট বলেন, গত শতকেই প্রায় ১৯১ মিলিয়ন মানুষ সমষ্টিগত সহিংসতার কারণে প্রাণ হারিয়েছে। এসবের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তেমন কোনো ভূমিকা নিতে পারছে না।

সভাপতির বক্তব্যে সংস্কৃতি সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবার মুক্তিযুদ্ধের চর্চা ও চেতনা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। সরকার গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে সচেষ্ট রয়েছে।

সমাপনী বক্তব্যে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, পাকিস্তান একাত্তরে যেমন, তেমনি এখনো তারা বেলুচিস্তানে গণহত্যা চালাচ্ছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পাকিস্তানি জেনারেলদের দেশ ছেড়ে পালাতে হবে।

অনুষ্ঠানে এ বছর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গ্রন্থ রচনার জন্য তিনজনকে অধ্যাপক ‘সালাহউদ্দিন আহমেদ স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হয়। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন বাংলা একাডেমির গবেষক মামুন সিদ্দিকী চৌধুরী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মুর্শিদা বিনতে রহমান ও চৌধুরী শহীদ কাদের।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close