নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ জুন, ২০১৮

চাল আদমানিতে শুল্ক বাড়ছে ধানের দাম

নতুন অর্থবছরের বাজেটে চাল আমদানিতে ফের শুল্ক আরোপের পর দেশে ধানের দাম বাড়তে শুরু করেছে। ঈদের পরে বিক্রি কম থাকায় এবং আমদানি কমে আসায় চালের বাজারে শুল্কের প্রভাব এখনো সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। তবে ধানের দাম বাড়ার কারণে মোটা চালের পাশাপাশি ভালো মানের সরু চালের দাম বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সরকারি গুদামে খাদ্যশস্যের পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় সরকার এবার আমদানি না করে দেশের ভেতর থেকেই চাল সংগ্রহ করবে বলে জানিয়েছেন খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক। জুনের শুরুতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের সময় চাল আমদানির ওপর আবারও ২৮ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কৃষকের উৎপাদিত ধান চালের ‘ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে’ চাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করে এই শুল্ক আরোপ করেন তিনি। গত বছর এপ্রিলের শুরুতে আগাম বৃষ্টি ও বন্যার কারণে ফসলহানি ও মজুদ তলানিতে নেমে আসায় চাল আমদানিতে শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে দুই শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছিল।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিশেনের সাধারণ সম্পাদক কে এম লায়েক আলী বলেন, ‘সরকার চায় কৃষক ধানের দাম পাক, কৃষক দাম পেলে চালের দাম তো বেশি হতেই পারে। নতুন করে শুল্ক আরোপের পর আর চাল আমদানি হচ্ছে না জানিয়ে লায়েক আলী বলেন, এই সময়ে ধানের দাম মণ প্রতি ১০০-১৫০ টাকা বেড়েছে।

কুষ্টিয়ার আটতারা রাইস মিলের মালিক রেজন আলী বলেন, আমদানির চালে শুল্ক আরোপের পর থেকে প্রতি মণ ধানের দাম দেড় শ টাকার মতো করে বেড়েছে। ধানের দাম বাড়লে চালের দাম তো বাড়াতেই হবে।

ধানের দাম যে হারে বেড়েছে, তাতে চাল কেজিতে দাম ২Ñ১ টাকা বাড়তে পারে।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা নাজিরশাইল ২৮০০-৩০০০ টাকা, মিনিকেট ২৭০০-২৮০০ টাকা এবং বিআর-২৮ চাল ২১০০-২২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

আর চালের পাইকারি আড়ত বাবুবাজারের কয়েকটি দোকানে নাজিরশাইলের বস্তা ২৭৫০-২৯০০ টাকা, মিনিকেট ২৬০০-২৭৫০ টাকা, বিআর-২৮ চাল ২১০০-২১৫০ টাকা এবং বিআর-২৯ হাসকি (অর্ধসিদ্ধ বিআর-২৮ চাল) ২০০০-২১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। রোজার ঈদের আগেও একই দামে চাল বিক্রি করেছেন বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন।

টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার ঢাকায় নাজিরশাইল ও মিনিকেট চাল ৫৮-৬৬ টাকা, পাইজাম ও লতা ৪৮-৫৪ টাকা এবং স্বর্ণা ও চায়না ইরি ৩৮-৪২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

কারওয়ান বাজারের চালের দোকান ফিরোজ অ্যান্ড সন্সের মালিক ইসমাইল হোসেন খোকন বলেন, ‘জুন মাসে চালের দামে কোনো পরিবর্তন হয়নি। চালের দাম বাড়বে কি না, কতটা বাড়বে তা আগামী সপ্তাহে হয়তো বোঝা যাবে।’

বাবুবাজারের আলোক চান রাইস এজেন্সির দোকানি মো. সেলিমের ধারণা, চাল আমদানিতে শুল্ক আরোপ হওয়ায় ভারতসহ বিদেশ থেকে আসা চালের দাম বাড়বে। তিনি বলেন, ‘এখন তো আগের কেনা চালই বিক্রি করছি। ঈদের খরা কাটলে মোকাম থেকে চাল কেনার পর আসল বাজার বোঝা যাবে।’

তবে কারওয়ান বাজারের হাজী ইসমাইল অ্যান্ড সন্সের মালিক জসিম উদ্দিন মনে করেন, জাতীয় নির্বাচনের বছরে চালের দাম অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখবে সরকার।

শুল্ক আরোপ হওয়ায় চাল আমদানি কিছুটা কমবে জানিয়ে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আরিফুর রহমান অপু বলেন, ‘ভালো খবর হচ্ছে আমদানি কমলেও দেশে চালের অভাব নেই। চাল আমদানিতে ট্যাক্স বসিয়েছে বলে ধানের দাম একটু বাড়াতে হবে, সে হিসেবে হয়তো ২-১ টাকা দাম বেড়েছে।’

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সরকারি গুদামে ১৩ লাখ ২৩ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে। এর মধ্যে ১০ লাখ ৬৬ হাজার টন চাল এবং ২ লাখ ৫৭ হাজার টন গম। এ ছাড়া খালাসের অপেক্ষায় বন্দরে আছে ৫২ হাজার টন খাদ্যশস্য। সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১ জুলাই থেকে গত ১১ জুন পর্যন্ত বেসরকারিভাবে ৮৩ লাখ ২০ হাজার টন খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ২৯ লাখ ৪৪ হাজার টন চাল এবং ৫৩ লাখ ৭৬ হাজার টন গম।

এই সময়ে সরকারিভাবে আমদানি হয়েছে ১৫ লাখ ৯২ হাজার টন খাদ্যশস্য। এর মধ্যে ১১ লাখ ১৬ হাজার টন চাল এবং ৪ লাখ ৭৬ হাজার টন গম।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist