কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি

  ২৭ মে, ২০১৮

বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর পথে পরিচালক জীবন রহমান

জীবন রহমান চলচ্চিত্র জগতের এক সুপরিচিত নাম। ৯০ দশকের গোড়ার দিকে চলচ্চিত্র নির্মাণ জগতে তার পদযাত্রা। তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘গহর বাদশা বানেছা পরী’। প্রথম ছবিই সুপারহিট হয়ে সাড়া পড়ে যায় চলচ্চিত্র জগতে। তারপর ‘হুলিয়া, আজকের সন্ত্রাসী, প্রেম যুদ্ধ, আশার প্রদীপ, আলী কেন গোলাম, মহা সংগ্রাম এবং অ্যাকশান ছবি উত্তর-দক্ষিণ’ একের পর এক ছবি নির্মাণ করে চলচ্চিত্র জগতে সে সময় খ্যাতিমান পরিচালক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। এখন চলছে তার দুর্দিন। মেয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। মরতে বসেছেন বিনা চিকিৎসায়।

তার নির্মিত ১৫টি ছবিই ব্যবসা সফল হয়েছে। সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র ‘মহা সংগ্রাম’ নির্মাণ করে ২০০৫ সালে তারুণ্য যুবকল্যাণ সংঘ পরিচালক জীবন রহমানকে শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসাবে ভাসানী স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করেন। এখন তিনি ডায়াবেটিক, কিডনি, লিবার ও ব্রেইন স্টোকে আক্রান্ত হয়ে একমাত্র জামাতার বাড়ি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌর এলাকার কামারকোনা মহল্লায় অবস্থান করছেন। তার শারীরিক অবস্থা এতটাই নাজুক যে স্পষ্ট করে কথা বলতে পারেন না। যত দ্রুত সম্ভব তার উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারলে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হবে এই পরিচালককে।

গত শুক্রবার তার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় উঠে আসে তার সুখ-দুঃখের কথামালা। তিনি ১৯৬৪ সালে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মঠখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পাকুন্দিয়া হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করে ঢাকা কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি এবং বিকম পাস করেন। সে সময় চলচ্চিত্র পরিচালক খসরু নোমানের সঙ্গে পরিচয়। সেই সুবাদে ধীরে ধীরে তিনি প্রবেশ করেন চলচ্চিত্র জগতে।

১৯৮২ সালে খসরু নোমানের সহকারী হিসাবে ‘সোহেল রানা’ ছবি নির্মাণ করেন। তারপর দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, কাজী হায়াৎসহ বেশ কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে চলচ্চিত্র নির্মাণে কাজ করেন এবং পাশাপাশি অভিনয়ও করেন। ৯০ দশকের শুরুর দিকে তার পরিচালনায় ‘গহর বাদশা বানেছা পরী’ চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। এটি তার পরিচালনায় প্রথম চলচ্চিত্র।

প্রথম ছবিতেই তার অভাবনীয় সাফল্য সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় তাকে। ৯০ দশকের শেষ দিকে দেশের চলচ্চিত্র জগতে যখন ধস নেমে আসে ঠিক ওই সময় তিনি সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র ‘মহা সংগ্রাম’ নির্মাণ করে ২০০৫ সালে ভাসানী স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন। এরই মধ্যে তার ১৫টি ছায়াছবি মুক্তি পেয়ে দেশব্যাপী বিভিন্ন পেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হয়েছে। আরো দুইটি ছবি ‘কাকনদাসী’ এবং ‘ঋণশোধ’ মুক্তির অপেক্ষায় আছে। তাছাড়া তিনি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় মুক্তিযুদ্ধের দুইটি ডকুমেন্টারি ‘স্বপ্ন’ এবং ‘সম্মুখ সমর’ নির্মাণ করেন।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নির্বাচনে দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর প্যানেলে কার্যকরী সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালে ডায়াবেটিক, লিবার ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হন। বিগত ৬-৭ মাস আগে ব্রেইন স্ট্রোক হলে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। সামর্থ্যরে সবটুকু দিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করে এরই মধ্যে ৩৫-৪০ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। কিন্তু শারীরিক অবস্থা দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। এখন মেয়ে তানজিনা রহমান মীমের বাড়ি কটিয়াদীতে আছেন। তার শেষ ইচ্ছা একটি ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ করা। তার শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য তার শারীরিক সামর্থ্য অর্জনই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। শারীরিক সামর্থ্য অর্জনের জন্য যে চিকিৎসা প্রয়োজন তার ব্যয়ভার বহন করার ক্ষমতাও তার নেই। তার সুচিকিৎসার জন্য সরকার বা চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি এগিয়ে এলে হয়তো তার শেষ ইচ্ছা পূরণ হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist