নিজস্ব প্রতিবেদক
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অক্ষমতায় আর্থিক খাতে অরাজকতা
সানেম
আর্থিক খাতে চলমান অরাজকতার পেছনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতার অভাব ও অক্ষমতা দায়ী বলে মনে করছে বেসরকারি অর্থনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেম। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং- সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান গতকাল বুধবার রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মত তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে সানেমের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বজলুল হক খন্দকার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ড. সায়েমা হক বিদিশা উপস্থিত ছিলেন। সেলিম রায়হান বলেন, ব্যাংক খাতে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ৮০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে, ব্যাংকিং সেক্টরে একটার পর একটা ‘স্ক্যাম’ হচ্ছে, আমানতকারীরা এখন ব্যাংকে টাকা রাখতে বিশ্বাস পাচ্ছে না। ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে, অনাদায়ী ঋণ সামনের দিনগুলোতে আরো বাড়বে। এটার বড় কারণ হচ্ছে ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্বল নিয়ন্ত্রণ এবং যারা ঋণ খেলাপি হচ্ছে তাদের কোনো শাস্তি হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতার অভাব, বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা নেই; বর্তমান সময়ে অনেক ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে আমরা দেখছি, বাংলাদেশ ব্যাংককে বাইপাস করে। এটা কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংককে একটা সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে ফেলে দিয়েছে যে তার ভূমিকাটা কি? ব্যাংকিং সেক্টরের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের হওয়া উচিত, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আমরা দেখছি সেটা হচ্ছে না। নীতিগত বিষয়ে বড় ধরনের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াটি ‘ভুল’ এবং তা ‘রং সিগনাল’ দিচ্ছে মন্তব্য করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, এই দুটি সিদ্ধান্তই সঠিক উপায়ে নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পিলিসি মেকিংয়ের ইউনিট আছে, তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে, এখানে আমরা কিন্তু তা দেখিনি।
এ ধরনের বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বাংলাদেশ ব্যাংকে বসে তা হয়নি, যা আশ্চর্যের বিষয়-সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোর দাবির মুখে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদ জমা রাখার হার (সিআরআর) কমানো এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে সরকারি আমানতের পরিমাণ বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, যে ব্যাংকগুলো এখন খারাপ পারফর্ম করছে তাদের কাছে যদি আবার টাকা দেওয়া হয় সেই টাকারও অপব্যবহার হবে কি না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অন্যদিকে, সিআরআর আমানতকারীদের সেইফটি হিসেবে কাজ করে, সেখানে বড় ধরনের কমানো সুবিবেচিত হয়নি।
গত রোববার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তা-মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) প্রতিনিধিদের সভায় সিআরআর এবং রেপো সুদহার কমানোর যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল তারই আলোকে মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সিদ্ধান্ত দুটি ব্যাংক খাতে অরাজকতা বৃদ্ধি করবে মন্তব্য করে সানেমের নির্বাহী পরিচালক বলেন, আমরা এক মূল্যায়নে দেখেছি, ব্যাংকিং খাতের অদক্ষতা বর্তমান যে পর্যায়ে তাতে বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ মোট জিডিপির ১ শতাংশ, যা প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।
"