খুলনা প্রতিনিধি
কুয়েটে রাষ্ট্রপতি
বিশ্ববিদ্যালয় বুদ্ধিভিত্তিক চর্চার শ্রেষ্ঠ কেন্দ্র
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, পাঠ্যপুস্তকভিত্তিক শিক্ষা এবং শুধু সনদ প্রদান বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য নয়; বরং মেধাবিকাশ, উন্মুক্ত চিন্তা-চেতনার উন্মেষ, বুদ্ধিভিত্তিক চর্চা প্রয়োগের শ্রেষ্ঠ কেন্দ্র হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। নতুন জ্ঞান সৃষ্টি, গবেষণা এবং সৃজনশীল কর্মকা-ে যাতে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যুগোপযোগী পাঠ্যক্রম এবং উন্নত পাঠদানের ব্যবস্থা করতে হবে। গতকাল বুধবার বিকাল ৪টায় ২৫ মিনিটে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সুনির্দিষ্ট পর্যায়ক্রমের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধন ও ব্যবহার এবং আবিষ্কার সম্পর্কে নিজস্ব কর্মসূচি থাকতে হবে। সময়ের সঙ্গে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে ব্যর্থ হলে তা যুগের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গবেষক, ইউসিজিসহ সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। শিক্ষার্থীরা যাতে বিশ্বমানের শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে দক্ষ এবং নৈতিক মূল্যবোধ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতি গঠনে প্রকৌশল শিক্ষার গুরুত্ব অত্যধিক। প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষা একটি জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করে। প্রকৌশলীদের মেধা, মনন ও সৃজনশীল চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসে টেকসই উন্নত মানের রূপরেখা। তাই প্রকৌশলীদের চিন্তা চেতনায় থাকবে দূরদৃষ্টির সুস্পষ্ট প্রতিফলন। বিশ্বায়নের এই যুগে প্রতিনিয়তই প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধিত হচ্ছে এবং নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তাই আমাদের জ্ঞান ও দক্ষতাকে আন্তর্জাতিকমানের উন্নীত করে এবং নতুন উদ্ভাবনে উদ্যোগী হয়ে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। বিশেষ করে আমাদের শিক্ষার প্রতিটি স্তরে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার বাড়াতে হবে। আমি আশা করি, আজকের এই নবীন প্রকৌশলীরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে উপলব্ধি করবে এবং তাদের সৃজনশীল চিন্তা ও প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞানের বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর। এতে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলী আসগর। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান।
সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ স্নাতক পর্যায়ে ভালো ফলের ভিত্তিতে ৩৮ জন কৃতী গ্রাজুয়েটকে ‘বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক’ প্রদান করেন। এছাড়া যেসব শিক্ষার্থী ২০১০-২০১১ থেকে ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিইউআরপি এবং ২য় সমাবর্তনের পর থেকে এ পর্যন্ত পিএইচডি, এমফিল, এমএসসি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেছেন তাদের সনদ প্রদান করা হয়। ২ হাজার ৭৯৫ জনকে স্নাতক ও ২২৮ জনকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এর মধ্যে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ২ হাজার ৬৫৭, বিইউআরপি ১৩৮, এমএসসি ৬৯, এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ১০৩, এমফিল ৪৮ এবং ৮ জনকে পিএইচডি সনদ প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠান শুরুর আগে ময়মনসিংহের ভালুকায় বিস্ফোরণে নিহত কুয়েটের চার শিক্ষার্থীর স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
"