নিজস্ব প্রতিবেদক
‘সেনানিবাস’ নয় : আইনের নামে ‘ক্যান্টনমেন্ট’ই থাকছে
প্রায় শত বছরের পুরনো সেনানিবাস সংক্রান্ত আইন নতুন করে প্রণয়ন করতে সংসদে তোলা ‘সেনানিবাস বিল’ আগের মতো ‘ক্যান্টনমেন্ট বিল’ নামেই রাখতে চায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। ১৯২৪ সালের ‘ক্যান্টনমেন্টস অ্যাক্ট’ নতুন করে প্রণয়ন করতে গত বছরের নভেম্বর মাসে সংসদে ‘সেনানিবাস বিল’ উত্থাপন করেন সংসদ কাজে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। পরে বিলটি পরীক্ষা করতে সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। সংসদীয় কমিটি বিলটি পরীক্ষার জন্য একটি উপকমিটি গঠন করে। উপকমিটির দেওয়া প্রতিবেদন নিয়ে মঙ্গলবার বৈঠক করে স্থায়ী কমিটি। বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী বলেন, ‘আগের যে নাম আছে সেটাই আমরা রাখছি। কারণ ক্যান্টনমেন্ট বললে তিন বাহিনীকেই বোঝায়। আর সেনানিবাস বললে মনে হয় শুধু আর্মিকে বোঝানো হচ্ছে।’ খসড়া আইনে দেশের যেকোনো ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় রাস্তাঘাটে মলমূত্র ত্যাগ, মাতলামি, ভিক্ষাবৃত্তি বা জুয়া খেলার শাস্তি হিসেবে ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, কমিটি সংসদে উত্থাপিত বিলের কিছু জায়গায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করেছে। তবে শাস্তির জায়গাগুলোতে পরিবর্তন আসেনি। সংসদে যে বিলটি তোলা হয় সেটিতে আগের আইনের ২৯২টি ধারা থেকে কিছু বাদ দিয়ে এবং নতুন কিছু সংযোজন করে মোট ২১৮টি ধারা রাখা হয়।
সেনানিবাস এলাকায় অবৈধ নির্মাণের জন্য আগে ৫০০ টাকা জরিমানা থাকলেও প্রস্তাবিত আইনে তা কমপক্ষে ২০ হাজার এবং সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকার করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সড়কের সরকারি ভূমি খনন করলে জরিমানা ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে দুই হাজার এবং সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা করার কথা বলা হয়েছে খসড়ায়। ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করলে তিন থেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করার কথা বলা হয়েছে খসড়া আইনে। আগে এই অপরাধের শাস্তি ছিল ২০০ টাকা। তথ্য দিতে অবহেলা করলে আগে ১০০ টাকা জরিমানার বিধান থাকলেও প্রস্তাবিত আইনে তা সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় ট্রাফিক নিয়ম অমান্য করলে জরিমানা ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে দুই হাজার এবং সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আতশবাজি ফোটালে বা গুলি ছুড়লে আগে ৫০ টাকা শাস্তি ছিল। প্রস্তাবিত আইনে এই শাস্তি কমপক্ষে তিন হাজার এবং সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বসত বাড়ি জরাজীর্ণ থাকলে জারিমানার পরিমাণ ৫০ টাকা বাড়িয়ে সর্বনিম্ন তিন হাজার এবং সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পশুকে আবর্জনা খাওয়ালে জরিমানার পরিমাণ ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা করার কথা বলা হয়েছে। অবৈধভাবে পানি ব্যবহার করলে আগে ৫০ টাকা জরিমানা হত, নতুন আইনে কমপক্ষে তিন হাজার এবং সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেনানিবাস এলাকায় নিবন্ধনের বাইরে কুকুর পুষলে পাঁচ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, মুহাম্মদ ফারুক খান, মো. মাহবুবুর রহমান, দীপু মনি, মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী এবং হোসনে আরা বেগম বৈঠকে অংশ নেন।
"