ভোলা প্রতিনিধি
আসছে ঝড়ের মৌসুম
দুর্যোগ ঝুঁকিতে ভোলার চরাঞ্চলের মানুষ
আসছে ঝড়ের মৌসুম। আর ঝড় জলোচ্ছ্বাস হলো উপকূলীয় বাসিন্দাদের আতঙ্ক। আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলীয় জেলা ভোলার চরাঞ্চলের লাখো মানুষ। কারণ সেখানে পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নেই। দুর্যোগ ঝুঁকি মাথায় নিয়েই বসবাস করতে হচ্ছে তাদের। যে কয়েকটি সাইক্লোন সেল্টার রয়েছে সেগুলো দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নেই সেখানে। বিশেষ করে ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর মধ্যবর্তী চরাঞ্চলে প্রায় ২ লাখ মানুষের বাস। তারা মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন। এসব চরের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ দুর্যোগকালে অরক্ষিত থাকে। নিরাপদে শেল্টারে আশ্রয় নেওয়ার জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থাও নেই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিক বলেন, চরাঞ্চলের মানুষের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য নতুন করে ২১টি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া মুজিব কেল্লা নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানালেন তিনি। সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, অব্যাহত নদী ভাঙনে ভোলার বিচ্ছিন্ন চরগুলোতে দিন দিন জনবসতির সংখ্যা বাড়ছে। উল্লেখ্য, ১৯৭০ সালে জলোচ্ছ্বাসের সময় গবাদি পশুপাখি সুরক্ষার জন্য মাটি দিয়ে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এক ধরনের আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছিল, যার নাম দেওয়া হয়েছিল মুজিব কেল্লা।
জানা গেছে, কলাতলীর চর, মাঝের চর, চর জহির উদ্দিন, চর নিজাম, মদনপুর, নেয়ামতপুর, হাজিপুর, চর নাসরিন, ডালচর, চর মোজাম্মেলসহ জনবসতি সম্পন্ন এমন ২০টি চরে পর্যাপ্ত কোনো আশ্রয় কেন্দ্র (সাইক্লোন শেল্টার) বা মাটির কেল্লা নেই। এসব চরে লাখো মানুষ যুগ যুগ ধরে ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে। ধনিয়া ইউনিয়নের জলিল মাস্টার জানায়, জনসংখ্যার অনুপাতে পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার কেন্দ্র নির্মাণ না করায় আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমান সাইক্লোন শেল্টার কেন্দ্রগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। দ্রুত এগুলো তালিকা করে সংস্কার করা উচিত। আর যেখানে জনবসতি বেশি সেখানে আরো সাইক্লোন শেল্টার স্থাপন করা উচিত।
মদনপুরের লতু পাটারী জানায়, উপকূলের ওপর দিয়ে সিডর, আইলা, রেশমি, মহাসেন, রোয়ানুসহ অসংখ্য ঝড় বয়ে গেলেও উপকূলবাসীর জন্য আজও নির্মিত হয়নি পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার।
কলাতলীর পল্লী চিকিৎসক মামুন জানায়, সিডরের পর বিভিন্ন এলাকায় সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু সেগুলোর ধারণক্ষমতা খুব কম। একটি সাইক্লোন শেল্টার গড়ে ছয়-সাতশ লোক ধারণ করতে পারে।
কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক সংকেত ঘোষণা হলে এই কেন্দ্রগুলোতে আড়াই থেকে তিন হাজার মানুষ গাদাগাদি করে থাকে। আবার কিছু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় কোনো সাইক্লোন শেল্টার নেই। অনেক সাইক্লোন শেল্টার আবার রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেক এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্র যাওয়ার রাস্তা খুব খারাপ। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) উপপরিচালক মোঃ সাহাবুদ্দিনও স্বীকার করে জানালেন, চরাঞ্চল যে পরিমাণ সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। জনসংখ্যার অর্ধেককেই শেল্টারের বাইরে থাকতে হয়। তাই আরো প্রায় ২০০ সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা দরকার।
ভোলা জেলা প্রশাসক মো. মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিক সাংবাদিকদের জানায়, চরাঞ্চলের বিপদগ্রস্ত মানুষদের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে আনার জন্য আমাদের ৬০০ মতো সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন চরে মুজিব কেল্লা তৈরি করা হবে। জনসংখ্যার অনুপাতে পর্যায়ক্রমে জেলায় আরো ২১টি নির্মাণ করার হচ্ছে।
"