নিজস্ব প্রতিবেদক
বিনম্র শ্রদ্ধায় ভাষা শহীদদের স্মরণ
ভাষা শহীদদের অমলিন স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জাতি পালন করল মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাতে রাত থেকেই মানুষের মিছিল গিয়ে মিশে ছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। হাতে গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল হাতে ছোট শিশু, কিশোর, তরুণ-তরুণী থেকে বৃদ্ধরাও দলবেঁধে এসেছিলেন। গত বুধবার রাত ১২টা ১ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব। এরপর সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সরকারি-বেসরকারি, রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ঢল নামে সাধারণ মানুষের। ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় শহীদ বেদি। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে পুনরায় পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এরপর শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও পরে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এছাড়াও বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ দলীয় নেতাদের নিয়ে শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এছাড়াও মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপি, রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে ওয়ার্কার্স পার্টি, হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের নেতৃত্বে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, খালেকুজ্জামান ভ‚ইয়ার নেতৃত্বে বাসদ, অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জমানের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খানের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও সিনেট সদস্য, সেক্টরস কমান্ডার্স ফোরাম, গণফোরাম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, আওয়ামী যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, বাংলা একাডেমি, সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিনের নেতৃত্বে জাতীয় প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিল, শিল্পকলা একাডেমি, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, গণতন্ত্রী পার্টি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ভাষা শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
একুশের প্রথম প্রহরেই ঢাকার বাইরে, চট্টগ্রামসহ সারা দেশের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় সর্বস্তরের মানুষ। মানচিত্রে যুক্ত সাবেক ছিটমহলগুলোতেও শহীদ দিবস পালিত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সীমানার বিভেদ-রেখা ভুলে বেনাপোল আর পেট্রাপোলের শূন্য রেখায় মিলিত হয়েছেন দুই বাংলার মানুষ। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের সব মিশনেই আয়োজন করা হয় বিশেষ অনুষ্ঠানের। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল, এফএম রেডিও দিনভর বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে পালিত হয়েছে অমর একুশে।
আমাদের চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে সর্বস্তরের মানুষ বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছেন ভাষা শহীদদের। শ্রদ্ধা জানানোর কাতারে ছিল রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতি কর্মী, সাংবাদিক, প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অনেকেই। সবার অভীষ্ট লক্ষ্য ও মিলনমেলা ছিল চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। শহীদ মিনারে গোলাপ ফুল নিয়ে এসেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ নাগরিকও। শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন তারা।
রাজশাহী প্রতিনিধি জানায়, যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে রাজশাহীতে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। একুশের প্রথম প্রহরে নগরে নেমেছিল সর্বস্তরের মানুষের ঢল। নগরীর বিভিন্ন শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।
এছাড়াও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বিএনপি, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড জেলা ইউনিট, রাজশাহী প্রেস ক্লাব, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন, রাজশাহী জেলা যুবলীগ, জেলা জাতীয় পার্টি, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন, বাসদ, ন্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতারা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় (রুয়েট) ও রাজশাহী কলেজে পালিত হয়েছে অমর একুশে।
"