আদালত প্রতিবেদক

  ২৩ জানুয়ারি, ২০১৮

নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ফেব্রুয়ারিতে!

আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। কে হচ্ছেন দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে জানা না গেলেও বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নাম তালিকার শীর্ষে আছে বলে বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে। তবে বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার পাশাপাশি আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নামও তালিকায় আছে। আপিল বিভাগে বর্তমানে পাঁচজন বিচারপতি আছেন। তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬৭ বছর। বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর অবসরে যাবেন। বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর এবং বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাবেন। সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করিবেন।’

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে কে নিয়োগ পাচ্ছেন এটি শুধু প্রধানমন্ত্রী বলতে পারেন। একই অভিমত প্রকাশ করেছেন আইন মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাও। তবে সৈয়দ মাহমুদ হোসেন আলোচনায় সবার আগে আছেন বলে জানান তারা। পদত্যাগ করা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) মেয়াদ আগামী ১ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা ছিল। নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা যতক্ষণ না প্রয়োগ করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কাজ হবে। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব পালন করছেন। কোনো শূন্যতার সৃষ্টি হয়নি। তবে আমি আশা করি শিগগিরই এ নিয়োগ প্রক্রিয়া হতে পারে। দীর্ঘ প্রায় চার মাস ধরে শূন্য আছে প্রধান বিচারপতির পদ। দেশের ৪৬ বছরের ইতিহাসে এত দীর্ঘ সময় ধরে এ পদটি খালি পড়ে থাকেনি। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞরা। তবে আগামী মাসে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হলে এ আলোচনার অবসান হবে বলে মনে করেন আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

জ্যেষ্ঠতা প্রসঙ্গ : প্রধান বিচারপতির পদ থেকে বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগের পর এখন দেশের সর্বত্রই প্রধান আলোচ্য বিষয় পরবর্তী ২২তম প্রধান বিচারপতি কে হচ্ছেন? প্রথা অনুযায়ী পরবর্তী জ্যেষ্ঠ বিচারপতির প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার কথা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সে নিয়ম মানা হবে কি না তা নিয়ে আলোচনায় সরগরম রাজনৈতিক মহলসহ সর্বত্র। একজন প্রধান বিচারপতির এভাবে পদত্যাগের ঘটনা স্বাধীনতার ৪৬ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম। জ্যেষ্ঠতার ক্রম অনুযায়ী দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা এক নম্বরে, দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ বিচারক হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং তৃতীয় অবস্থানে আছেন বিচারপতি মো. ইমান আলী। এ ছাড়া ক্রম অনুযায়ী আছেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। জ্যেষ্ঠতার ক্রম অনুযায়ী এক নম্বর ব্যক্তিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রথা আগেই ভাঙার নজির রয়েছে।

আগে শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানকে ডিঙিয়ে প্রধান বিচারপতি করা হয় বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে। বিচারপতি মোমিনুর রহমান ছিলেন বিএনপির প্রয়াত স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আ স ম হান্নান শাহর ভাই।

জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার ঘটনা বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও ঘটেছে। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. রুহুল আমিন ও বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিমকে ডিঙিয়ে যথাক্রমে বিচারপতি কে এম হাসান ও বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছের হোসেনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও বিচারপতি এম এম রুহুল আমিনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয় জ্যেষ্ঠ বিচারক বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিমকে ডিঙিয়ে।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিমকে ডিঙিয়ে বিচারপতি তাফাজ্জাল ইসলামকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। যদিও পরে বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিমকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে নিয়োগ দেওয়া হয় বিচারপতি এম এ মতিন ও বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানকে ডিঙিয়ে।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এত দিন দীর্ঘ সময় প্রধান বিচারপতির পদ খালি থাকেনি। এটি বিচার বিভাগের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে আস্থা হরিয়ে যাচ্ছে। অতীতে এত দীর্ঘদিন এই পদ খালি থাকেনি। প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানে জ্যেষ্ঠতা নিয়ে কোনো নিয়ম নেই। তবু আপিল বিভাগের দীর্ঘদিনের প্রথা অনুযায়ী আমরা চাইব জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে যেন নিয়োগ দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতি তার বিবেক দিয়ে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন সেটাই প্রত্যাশা করি।’

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘সংবিধানে জ্যেষ্ঠতার কথা উল্লেখ নেই। রাষ্ট্রপতি চাইলে আপিল বিভাগের যে কাউকে নিয়োগ দিতে পারেন।’

গত বছরের ১০ নভেম্বর প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন বিচারপতি এস কে সিনহা। তিনি সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি দূতাবাসের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে তার পদত্যাগপত্র পাঠান। পরে রাষ্ট্রপতি এ পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন।

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি সিনহার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি এস কে সিনহা শপথ নেন। ওই দিন থেকে এ পদে তিনি প্রায় তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist