রুমান হাফিজ

  ১৮ আগস্ট, ২০১৭

তোমার চোখে আকাশ আমার

ইদানীং একটা গানের দু-চার লাইন নিজের অজান্তেই মুখ দিয়ে বের হয়ে আসে সাবিতের। হঠাৎ করেই এই অভ্যাসটা কিভাবে হলো বুঝতে পারছে না। প্রতিদিন খুব সকালে রেডি হয়ে অফিসে যেতে হয়। প্রাইভেট একটা কমার্শিয়াল অফিসে আপাতত জয়েন করেছে। পড়ালেখাটা সবেমাত্র শেষ হলো। ভালো কোনো চাকরি পেলে স্থায়ীভাবে জয়েন করবে তার আগ পর্যন্ত এখানেই।

রিকশায় চড়ে অফিসে যেতে যেতে বারবার তার মুখে উচ্চারিত হতে থাকে গানটি, ‘তোমার চোখে আকাশ আমার চাঁদ উজাড় পূর্ণিমা ভেতর থেকে বলছে হৃদয় তুমি আমার প্রিয়তমা ...!’

অফিসের সামনে এসে রিকশা থামতেই সাবিত বুঝতে পারে এতক্ষণ সে গানটাই গেয়ে আসছিল। নিজেকে ঠিক করে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে অফিসে ঢুকে পড়ে। অফিসে এসেই বারবার তার চোখ চলে যায় সহকর্মী রিতির দিকে। রিতিও এই অফিসে নতুন জয়েন করেছে। তবে সাবিতের কিছু পর। রিতি প্রথম যখন সাবিতের কাছে এসে নিজের পরিচয় দিয়ে অফিসের কাজে সহায়তা করার কথা বলছিল, সেদিনই প্রথম সামনাসামনি দেখা হয় দুজনের। টুকটাক কথাবার্তায় যেটুকু জানতে পেরেছে, রিতি একটি প্রাইভেট ভার্সিটি থেকে অনার্স শেষ করেছে কিছুদিন আগে। তার মানে দুজনের অবস্থা মোটামুটি একই। সেদিনের প্রথম দেখাতেই সাবিতের মন দুর্বল হয়ে পড়ে রিতির প্রতি। যেন মনে হচ্ছে রিতির এই চোখ দুটো তার অনেক দিনের পরিচিত। বারবার মনে হতে থাকে রিতির কথা। তাহলে কি রিতির প্রেমে পড়ে গেলাম? আরে নাহ! কি সব উল্টাপাল্টা ভাবছি ...! অফিসের কাজে মন দেয় সাবিত।

প্রতিদিন অফিসের মধ্যে কিংবা বাসায় যাওয়া-আসাতে কিভাবে যে গানটা তার মুখ দিয়ে বের হতে থাকে টেরই পায় না। মাঝেমধ্যে অফিসে রিতির সঙ্গে টুকটাক কথাবার্তাও হয়। রিতিকে দেখলে পরে আপনাআপনি গানটা গেয়ে ওঠে সাবিত। রিতি বিষয়টা আঁচ করতে পারলেও কোনো কথা বলেনি। তাহলে কি সত্যিই রিতির প্রেমে পড়লাম? নিজেকে আবারও প্রশ্ন করে সাবিত। রিতির প্রেমে না পড়লে কার প্রেমে পড়ব? রিতি যেমন দেখতে ভালো; তেমনি তার মেধাও। কদিন আর হবে অফিসে জয়েন করার, এরই মধ্যে সবগুলো কাজ ঠিকঠাকমতো করে যাচ্ছে কোনোরূপ ঝামেলা ছাড়াই। ফলশ্রুতিতে অফিসে সবার মুখে মুখে রিতির প্রশংসা। প্রথম প্রথম সাবিতকেও বেগ পেতে হয়েছে কাজগুলো ঠিকমতো বুঝে উঠতে।

আচ্ছা, রিতিকে কিভাবে ভালোবাসার কথাটা জানানো যায় ...? উল্টো যদি না করে বসে!

আবার এসব অফিসের অন্য কেউ জানতে পারে, তাহলে তো ...!

অফিসের মধ্যে বসেই এসব ভাবছে সাবিত। এ কদিন থেকে কাজের মধ্যেও তেমন একটা মন বসাতে পারছে না।

-এই সাবিত?

হঠাৎ ডাক শুনতে পেয়ে সাবিত ভয় পেয়ে যায়। তার মনে হলো, কাজ রেখে এভাবে বসে থাকাতে হয়তো স্যার বা অন্য কেউ দেখে ফেলেছে। তা না হলে এখন কে ডাকবে?

কিন্তু না, পেছনের দিকে ফিরে থাকাতেই যা দেখল তা তো রীতিমতো অবাক করার মতো। তা হলে কি এসব স্বপ্নের মধ্যে দেখছে? দুহাতে চোখ দুটো ঘষে নিয়ে ফের তাকায়। না, ঠিকই তো দেখছে!

এতক্ষণ ধরে যাকে নিয়ে ভাবছিল, সেই রিতিই তার পেছনে এসে দাঁড়ানো!

-আচ্ছা এতক্ষণ হলো দাঁড়িয়ে আছি, কিছু বলছ না যে?

চেয়ারটা সোজা করে রিতির দিকে মুখ ফেরায়।

-জ্বি জ্বি, বলুন প্লিজ! কি সাহায্য করতে পারি।

সাবিতের ধারণা রিতি হয়তো কোনো দরকারে এসেছে।

-জ্বি, আমার সঙ্গে একটু বাইরে যাবে, একটা কাজ আছে।

-মানে?

-হুম, চলুন।

-আমি বলছিলাম কি ...!

-কি?

-এখন না গেলে হয় না?

-কেন? এখন গেলে সমস্যা?

-না মানে ...

-মানে কী?

-এখন তো অফিস টাইম!

-অফিস টাইম তো কী হয়েছে?

-স্যার যদি ছুটি না দেন!

-হা ...হা ...হা (রিতি মুচকি হাসে), আরে নাহ! এসব নিয়ে একদম চিন্তা নেই, আমি সব ঠিক করে রেখেছি। এবার চলো ...

-তাহলে আপনিই ...

-হুম আমিই।

অফিস থেকে বেরিয়ে দুজন গাড়িতে ওঠে পড়ে। রিতি আর সাবিত একসঙ্গে বেরিয়ে যাওয়া দেখে অফিসের বাকিরা ‘থ’ হয়ে যায়, একজন আরেকজনের দিকে থাকিয়ে থাকে।

রিতি আগে থেকেই গাড়ি ঠিক করে রেখেছে। কিন্তু কোথায় যাবে সাবিত তো কিছুই জানে না।

-আচ্ছা আমরা যাচ্ছি কোথায়?

সাবিতের প্রশ্নে রিতি চোখ ফেরায়। এতক্ষণ আনমনে গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছিল।

-হ্যাঁ, এইতো পার্কে।

-পার্ক মানে? (সাবিতের কণ্ঠে বিস্ময়)

-এত প্রশ্ন কিসের? রিতি একটু বিরক্তিভাব নিয়ে উত্তর দেয়।

ততক্ষণে গাড়ি পার্কের সামনে এসে থামে। গাড়ি থেকে নেমে দুজন ভেতরের দিকে চলে যায়। একসঙ্গে হাঁটছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। সাবিত কোনো কিছু বুঝে উঠতে পারছে না, আসলে কী হতে যাচ্ছে। অজানা এক ভয় তার মনে।

হাঁটতে হাঁটতে দুজন একটা জায়গায় এসে বসে। অনেকক্ষণ ধরে হাঁটার ফলে দুজনের মধ্যেই ক্লান্তি চলে আসে।

-এখানে কী জন্য নিয়ে আসা? আবারও সাবিতের প্রশ্ন।

-(সাবিতের প্রশ্নে হেসে উঠে রিতি) কী জন্য আবার আসব? সবাই যে জন্য আসে আমরাও সেজন্য এসেছি। ঠিক আছে?

রিতির এই রহস্যটা বুঝতে পারছে না সাবিত। একান্ত নিজের আপন কেউ যেভাবে কথা বলে, ঠিক সেভাবেই রিতির কথাগুলো মনে হলো। তাহলে কি রিতি আমাকে ...!

-আচ্ছা সাবিত, তুমি ভালো গান গাইতে পারো, তাই না?

-(রিতির প্রশ্নে সাবিতের ভাবনায় ছেদ পড়ে) আরে না না, এটা কে বলল? আমি তো কখনো গান গাইনি।

-এত লজ্জা কিসে? গাও না একবার প্লিজ! আমার না ভীষণ শুনতে ইচ্ছে করছে।

সাবিত চিন্তায় পড়ে গেল। যে গানটি এ কদিন গেয়ে আসছে, তাহলে কি রিতি সেটি শুনে ফেলেছে? কী অবাক কা-! এ তো বেশ জটিল মনে হচ্ছে বিষয়টা।

-কী চিন্তা করো? সাবিতের একেবারে পাশ ঘেঁষে কথাটা বলে রিতি।

সাবিতের মুখ তখন লজ্জায় লাল হয়ে যায়! তাহলে সত্যি সত্যি রিতি আমার প্রেমে পড়ে গেলো? কী অদ্ভুত ব্যাপারটা! মনের ভেতর সে এক ভিন্ন অনুভূতি কাজ করছে সাবিতের।

তখনই রিতির কণ্ঠে সেই গান। সঙ্গে সঙ্গে সাবিতও কণ্ঠ মেলায়। দুজন একসঙ্গেই গাইতে থাকে-

‘তোমার চোখে আকাশ আমার চাঁদ উজাড় পূর্ণিমা, ভেতর থেকে বলছে হৃদয় তুমি আমার প্রিয়তমা ...!’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist