জীবনযাপন ডেস্ক
সাদিয়ার বর্ণিল পোশাক
চট্টগ্রামের মেয়ে ইসরাত সাদিয়া চৌধুরী। ইংরেজি মাধ্যমের এই মেধাবী ছাত্রীর হয়তো কোনো করপোরেট হাউস কিংবা ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা হওয়ারই কথা ছিল। কিন্তু চাকরি কিংবা বাবার ব্যবসা- কোনোটাই আকর্ষণ করেনি তাকে। নিজে কিছু করার স্বপ্ন এবং ইচ্ছার ওপর ভর করে ইসরাত সাদিয়া আজ সফল নারী ব্যবসায়ী। বুটিকের পোশাক তাকে এনে দিয়েছে এই সাফল্য। সাদিয়ার ডিজাইন করা তৈরি পোশাক বিক্রি হয় অস্ট্রেলিয়ার বড় বড় শপিং মলে। পোশাক যায় জাপান, ইউএসএ এবং মধ্যপ্রাচ্যেও। শুধু ফেসবুক পেইজে ভর করেই সাদিয়া তার ব্যবসার পসার ঘটিয়েছেন। সাদিয়া শুরু করেছিলেন নিজের বাসা থেকে মাত্র একজন কর্মী সঙ্গে নিয়ে। এখন চট্টগ্রাম ইপিজেডে তার নিজস্ব ফ্যাক্টরি। তিন বছর আগে লোকসান গুনে বুটিকের ব্যবসা শুরু করলেও এখন প্রতি মাসে কর্মীদের বেতনই দেন দেড় লাখ টাকা। এরপরও প্রতি মাসে মুনাফা থাকে এক-দেড় লাখ টাকা। মাত্র তিন বছরেই ইসরাত সাদিয়া বন্দরনগরী চট্টগ্রামের একজন সফল বুটিক ডিজাইনার এবং ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন।
ইসরাত সাদিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আমি সব সময় নিজে কিছু করার স্বপ্ন দেখেছি। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আকাক্সক্ষা থেকেই আমি শূন্য থেকে শুরু করেছি। ব্রিটিশ কাউন্সিলে এসিসিএ করতে করতেই পোশাক ডিজাইন এবং বুটিকসের ব্যবসার বিষয়টি মাথায় আসে। ২০১৪ সালের শুরুর দিকে শুধু একজন কর্মী নিয়ে ঘরে বসেই পোশাকে এমব্রয়ডারির কাজ শুরু করি। ওই সময় ছোটখাটো অর্ডারের কিছু কাজ পেলেও বাণিজ্যিকভাবে ততটা সাড়া ছিল না।’
সাদিয়া বলেন, “২০১৫ সালে ফেসবুকে ‘সাদিয়া’স এমব্রয়ডারি কালেকশন’ নামের একটি পেইজ খুলে আমার তৈরি পোশাক বাণিজ্যিকভাবে উপস্থাপন এবং বিক্রির কার্যক্রম শুরু করি। পেইজ চালুর কয়েক মাসের মধ্যেই দেশের ভেতরে এবং বাইরে থেকেও ব্যাপক অর্ডার আসতে শুরু করে।’
চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম ইপিজেডে একটি ফ্লোর নিয়ে কারখানা চালু করেন সাদিয়া। প্রথমে ৪-৫ জন কর্মী নিয়ে ওই কারখানা চালু হলেও বর্তমানে সাদিয়ার কারখানায় কাজ করেন ১৫ জন কর্মী। ঢাকা এবং চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অর্ডার সরবরাহের পাশাপাশি সাদিয়ার তৈরি করা পোশাক সরবরাহ হয় জাপান, অস্ট্রেলিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউএসএসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে একটি শপিং মলে সাদিয়ার বুটিক ও এমব্রয়ডারি করা পোশাক বিক্রি হচ্ছে গত দুই বছর ধরে। জাপান, অস্ট্রেলিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশি এবং স্থানীয়দের মধ্যেও সাদিয়ার তৈরি করা পোশাকের চাহিদা বেশ ভালো। সাদিয়ার ৬০-৭০ ভাগ পোশাকের ক্রেতা দেশের বাইরের।
মাত্র ২৫ বছর বয়সেই সাফল্য অর্জনকারী ইসরাত সাদিয়া বলেন, ‘আমি প্রতি মাসে কর্মীদের বেতন পরিশোধ করি প্রায় দেড় লাখ টাকা। এরপরও প্রতি মাসে আমার সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। গার্মেন্টসের অর্ডারের ক্ষেত্রে ১০ হাজার পিসের ঊর্ধ্বে ৫০ হাজার পিস পর্যন্ত পোশাকের অর্ডার নিয়ে থাকি। ব্রাইডাল ড্রেস তৈরির ক্ষেত্রে প্রতি মাসে একটির বেশি অর্ডার নেই না। ব্রাইডাল প্রতিটি পোশাকের দাম হয় সর্বনিম্ন ৩০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত।’
সাদিয়া বলেন, ‘আমার আরো বহুদূর যাওয়ার স্বপ্ন। আমি মাত্র শুরু করেছি। আমি আমার একটা ব্র্যান্ড তৈরি করতে চাই দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও। বড় শোরুম করতে চাই। আমি আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আরো দৃঢ় মনোবলে কাজ করে যেতে চাই।’
"