জুয়েল কবির

  ১৯ মে, ২০১৭

গল্প

তরুণীর কঙ্কাল

: হ্যালো, কালাম ভাই?

: ভোরবেলা আয়া পড়েন ছোড ভাই। ডেড বডি এহন সিদ্ধ করতাছি, সকাল সকাল ডেলিভারি নিতে পারবেন।

: কী বলেন? কাঁচা কাঁচা থাকবে না তো?

: অল্প সময়ে শুকানোর ব্যবস্থাও আছে। আমি সব ঠিকঠাক কইরা রাখবো। টাকা-পয়সা একটু বাড়ায়া দিয়েন। অল্প বয়সী তরুণীর বডি জোগাড় করতে কষ্ট হইছে ম্যালা।

: সত্যি সত্যিই তরুণীর কঙ্কাল তো কালাম ভাই? আমি কিন্তু পেলভিস দেখলেই বুঝতে পারবো। ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের পেলভিস ছোট আর গোলাকৃতির হয়।

: বিশ্বাস না অইলে নগদে আয়া পড়েন কারখানায়। এহনো বডি পুরাডা সিদ্ধ হয় নাই। নিজের চোখে দেইখা লন।

: না না, দেখতে হবে না। নারী-পুরুষের কঙ্কালের আর যেসব পার্থক্য থাকে, তাও আমি জানি।

: তাইলে আর কী, দেখলেই বুঝতে পারবেন।

: আমি সকাল সকালই আসবো তাহলে।

: ঠিক আছে।

আব্দুস সালেকীনের দেরিতে ঘুমানোর অভ্যাস। ওঠারও অভ্যাস দেরিতে। কিন্তু এদিন তার ঘুম ভেঙে গেল আগেভাগে। সকাল সকাল মাল ডেলিভারি নেওয়ার টেনশনেই সম্ভবত এই প্রত্যুষ জাগরণ। শহরের কাকগুলোও হার মেনেছে আজ সালেকীনের কাছে। যখন সে উঠলো, তখন সবেমাত্র পার্শ্ববর্তী মসজিদের মুয়াজ্জিন ফজরের আজান দেবে বলে মাইক পরীক্ষা করছে। ফু...ফু...ফু...।

সালেকীন তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে তার কাঁধের বড় ব্যাগটা নিয়ে বাইক স্টার্ট দেয়। দারোয়ান বলে-

: এত সকাল সকাল কই যান স্যার?

: কঙ্কাল কিনতে।

: কঙ্কাল! কী কন? মাইনষের কঙ্কাল?

উত্তরের অপেক্ষায় হা করে থাকে দারোয়ান। সালেকীন বুঝতে পারে, ফজলু দারোয়ানের বিস্ময়ে হা হয়ে থাকা কমপক্ষে আগামী দশ মিনিট ধরে থাকবে। অবশ্য তার চেয়ে বেশিও হতে পারে। ফজলু মিয়ার হা হয়ে থাকার সর্বোচ্চ রেকর্ড ঊনপঞ্চাশ মিনিট। সেদিন সকালবেলা তার এক ভাস্তে ফোন করলো গ্রাম থেকে-

: বিরাট বড় সুখবর কাকা, বিরাট সুখবর...

: কিয়ের সুখবর?

: তাই নাকি! বাচ্চা কেমন আছে?

: বাচ্চা না কাকা, বাচ্চা না, বলেন বাচ্চাগুলা।

: মানে?

: একলগে তিনটা নাতি হইছে আপনের। দুইডা পোলা, একটা মাইয়া। মা আর বাচ্চাগুলা সুস্থ আছে। মিষ্টি খাওয়ার টাকা পাঠান।

ফজলু মিয়া হা করে থাকে। মুখ আর বন্ধ হয় না। অবশ্য এমন সংবাদে সবাই অবাক হবে, সন্দেহ নেই। তবে ফজলু মিয়ার মতো হা করে হয়তো থাকবে না কেউ। একেকজন মানুষ একেকভাবে অনুভূতি প্রকাশ করে। কেউ বেশি কথা বলে, কেউ কম কথা বলে। ফজলু মিয়া অনুভূতি প্রকাশ করে হা করে। সময় চলে যায়, যেতেই থাকে, কিন্তু ফজলু মিয়ার হা করা মুখ আর বন্ধ হয় না। এক পর্যায়ে সবাই ভয় পেয়ে যায়- স্ট্রোক করেনি তো ফজলু মিয়া? অবশেষে সাতচল্লিশ মিনিট পর তার হা-মুখ বন্ধ হয়, চলন-বলন হয় স্বাভাবিক।

দারোয়ানের দরজা খোলার অপেক্ষা না করে সালেকীন নিজেই কলাপসিবল গেট খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে।

প্রত্যাশা সার্থক হয়েছে সালেকীনের। সত্যি সত্যিই একটা তরুণীর কঙ্কাল পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত সতর্কতাস্বরূপ প্রমাণ হিসেবে ডেড বডি সিদ্ধ করার আগে কালাম ডোম তার মোবাইল ফোনসেটে একটা ছবি তুলে রেখেছিল। মেয়েটি দেখতে খুবই সুন্দর। গায়ের রং ফর্সা, কোঁকড়ানো চুল। ঠোঁটের কাছে একটা তিলও আছে। মাটির প্রতিমা যেমন হয়, মেয়েটি তেমনই নিখুঁত। সালেকীন লোভ সামলাতে পারে না। ব্লুটুথে করে ছবিটা নিজের মোবাইল ফোনসেটে নিয়ে নেয়।

: লাশটা কোথায় পাওয়া গেছে?

: লঞ্চডুবিতে। বেওয়ারিশ মাল।

: আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামে দেন নাই যে।

: ওসব জিগায়েন না ছোড ভাই। সব লাশ ওইখানে দিয়া দিলে আপনেরা কঙ্কাল পাইবেন কই?

: তা ঠিক। আচ্ছা এবার বলেন, কত দিতে হবে কালাম ভাই?

: দাম নিয়া সমস্যা হইবো না ছোড ভাই, তাছাড়া দাম তো আপনে জানেনও। দিয়েন পাঁচ হাজার।

: কী বলেন! পাঁচ হাজার টাকা?

শুরু হয় দরাদরি। এ যেন যাত্রাবাড়ীর মাছবাজার। কালাম একটা দাম বলে, তো সালেকীন আরেকটা। শেষ পর্যন্ত দুই হাজার আটশ’ টাকায় বনিবনা হয়।

: এত সস্তায় এই রহম ফেরেশ মাল অন্য কোনো জায়গায় পাইবেন না।

: সস্তায় আর কই? সবাই তো দেহি দুই-আড়াই হাজার টাকায় কেনে। আমার বন্ধু সাকিব কিনছে আঠারোশ’ টাকায়।

: আরে ওইগুলা ডিফেক্ট মাল। অ্যাক্সিডেন্টের লাশে হাড়মাড় ভাঙ্গা থাকে। ওরা জোড়াতালি দিয়া বেচে ফেরেশ মালের দামে। তাছাড়া চাহিদামতো খাঁটি তরুণীর কঙ্কাল পাইবেন কই। বুড়ি বেডির কঙ্কাল ধরায়া দিবো জোয়ান ছেরির কঙ্কাল কইয়া।

: সে আপনি ভালো বুঝবেন কালাম ভাই। আমি কি আর অত কিছু বুঝি নাকি।

: ছোড ভাই, এহনো সময় আছে। পছন্দ না হইলে রাইখা যাইতে পারেন। ফেরেশ মাল কেনার লোকের অভাব হইব না।

: আরে না না, কালাম ভাই। আমিই নেবো। দিন, ব্যাগে ভরে দিন।

কালাম ডোম সুন্দরভাবে ভাঁজ করে সালেকীনের ব্যাগে ঢুকিয়ে দেয় পুরো কঙ্কালটি।

(চলবে)

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist