অরূপ তালুকদার

  ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

একুশকে যেন ভুলে না যাই

আমাদের জাতীয় জীবনে একুশ ফেব্রুয়ারি অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। নির্দ্বিধায় বলা যায়, যত দিন যাচ্ছে ততই যেন সেটি আরো উজ্জ্বলতায় ভাস্বর হয়ে উঠছে। এর কারণ হচ্ছে, সেই রায়ান্নর পরে আমরা পার হয়ে এসেছি অনেকগুলো বছর, যার মধ্যে রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যার পেছনে রয়েছে ভাষা আন্দোলনের অনুপ্রেরণা।

বীরের জাতি বাঙালি সেই বায়ান্নতে ভাষা আন্দোলনের প্রেরণায় যেভাবে উজ্জীবিত হয়েছে, সেই উজ্জীবনের ধারা বহমান রয়েছে পরবর্তী দিনগুলোতেও। ফলে যত বাধাই আসুক না কেন কোনো বাধাই আর রুখতে পারেনি তাদেরকে। তার বড় প্রমাণ পেয়েছি আমরা ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান আর একাত্তরের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সময়। সেসব আজ ইতিহাস।

এখন আমরা একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক এবং আমাদের বুকের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতায় বিশ্বাসী একটি সরকার এখন ক্ষমতাসীন। তাই আমাদের মাতৃভাষা এবং প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতার অমøান চেতনা যাতে পূর্ণ মর্যাদায় আমাদের জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়, সেটাই আশা করব।

আমরা ফেব্রুয়ারিকে বলি ভাষার মাস। এই মাসের প্রতিটি দিন আমরা ভাষা আন্দোলনের মহিমাকে স্মরণ করি নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে, যার মধ্যে রয়েছে সভা, সেমিনার, সংগীতানুষ্ঠানসহ আরো কত আয়োজন আর এর পাশাপাশি চলতে থাকা অমর একুশে গ্রন্থমেলা।

বাংলা একাডেমি আয়োজিত ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ দিনে দিনে এখন সব মানুষের প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে। সারা দেশের মানুষ যেন এই ফেব্রুয়ারি মাসটির দিকে তাকিয়ে থাকেন মহা উৎসাহে, উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন কবি সাহিত্যিক আর প্রকাশকরা। প্রকাশিত হয় বইমেলা উপলক্ষে হাজার হাজার নতুন বই, নানা ধরনের। এমনটা কিন্তু বিগত ১০ বছর আগেও ছিল না, এখন বিশাল এক আনন্দযজ্ঞে পরিণত হয়েছে ভাষা আন্দোলনের হাজারো স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রুয়ারি মাসটি।

কিন্তু এত সবের পরও পুরনো সেই প্রশ্নটিই যেন এখনো বারবার উঠে আসছে বিভিন্ন স্থানের আলাপ-আলোচনায়। প্রশ্নটি হচ্ছেÑ সর্বস্তরে বাংলা ভাষা এখনো কি আমরা চালু করতে পেরেছি? পারিনি বা সম্ভব হয়নি। কেন পারিনি বা চালু করা সম্ভব হয়নি, তার কারণ অনেক। সেই কারণগুলোকে আমরা কেন নির্মূল করতে পারিনি এত দিনে?

আমরা ইতিহাস থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। কিন্তু সেই ইতিহাসকে অনেক ক্ষেত্রেই তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না বলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের মহান ইতিহাস সম্পর্কে এখনো অনেক কিছুই জানছে না। আর হয়তো সেজন্যই এবারে বইমেলা উদ্বোধনের সময় প্রধানমত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সবাইকে বাংলাদেশের ইতিহাস ও বাংলা ভাষা সম্পর্কে জানতে হবে।’

আমাদের পাঠ্যসূচিতে কমবেশি মুক্তিযুদ্ধসহ ইতিহাসের বিষয়াবলি অন্তর্ভুক্ত থাকে শুধু কলা ও মানবিক বিদ্যা বিভাগে। কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়।

অন্যদিকে, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বাংলাদেশের ইতিহাস এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়কে তেমনভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় বলে মনে হয় না। তাছাড়া কলেজে শুধু কলা ও মানবিক বিদ্যা বিভাগেই স্নাতক পর্যায়ে পড়ানো হয় বাংলা। অন্য বিভাগগুলোতে নয় কেন?

তবে আশার কথা, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তি নিরসনে এবং বাংলা ভাষা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে আরো মনোযোগ আকর্ষণের জন্য কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন গত বছর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবশ্য পাঠ্য হিসেবে দুটি বিষয় পড়তে হবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তার একটি হচ্ছে, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং অন্যটি বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস। তবে এ ধরনের দুয়েকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেই হবে না, প্রয়োজনে আরো সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং তা নিতে হবে জরুরিভিত্তিতে। পাশাপাশি লক্ষ রাখতে হবে, যাতে গৃহীত এসব সিদ্ধান্ত যথাসময়ে বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়।

অন্যদিকে আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, একুশে ফেব্রুয়ারি এখন ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই আজ বিশ্বের প্রতিটি বাংলা ভাষী অন্যদের কাছেও আমাদের মাতৃভাষা ও আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close