শাকিল আহমেদ, ঠাকুরগাঁও

  ২৪ নভেম্বর, ২০১৭

পিইসি পরীক্ষায়ও জালিয়াতি!

ঠাকুরগাঁওয়ে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী দিয়ে সমাপনী পরীক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার কথা হরহামেশা শোনা গেলেও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি) এখন পর্যন্ত এই জালিয়াতির আওতামুক্ত ছিল। কিন্তু ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ঢোলারহাট ইউনিয়নে ৭ম শ্রেণির ছাত্রছাত্রী দিয়ে পিইসি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ইউনিয়নের ঢোলারহাট এসসি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইসলাম ধর্ম পরীক্ষা চলাকালীন অবস্থায় গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সদর উপজেলার ঢোলারহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ নওপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাঁচজন শিক্ষার্থী প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দুজন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত, কিন্তু বাকি তিন পরীক্ষার্থী হলো মোছা. মায়মুনা আক্তার, ইমন হায়দার ও পারভীন আক্তার। কিন্তু এরা কেউই ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী নয়। বরং তারা পার্শ্ববর্তী দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণিতে পড়ে।

পিইসি পরীক্ষা অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ছবি নিয়ে দেখালে পার্শ্ববর্তী আখানগর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তপন কুমার বর্মণ তাদের চিনতে পেরে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘৫ম শ্রেণির ছাত্রী হিসেবে দেখান মায়মুনা আক্তার আমার বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ‘ক’ শাখায় ছাত্রী, তার নাম লিনা আক্তার, রোল ৩। পারভীন আক্তারও ৭ম শ্রেণির ‘খ’ শাখার ছাত্রী; নাম সানজিদা আক্তার তিষা, তার রোল নম্বর ১০।’ অন্য এক শিক্ষার্থী মো. ইমন ঠাকুরগাঁও শহরের রোড সুগারমিল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র বলে জানা গেছে।

এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ঢোলারহাট এসসি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র সচিব ক্ষীরত চন্দ্র বর্মণ বলেন, বাংলা পরীক্ষার দিন শুনেছি আমার কেন্দ্রে দক্ষিণ নওপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীর স্থলে ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সমাপনী পরীক্ষা দিচ্ছেন। এমন খবর পাওয়ার পর পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থী মোছা. মায়মুনা আক্তার, ইমন হায়দার ও পারভীন আক্তারকে ডাকা হয়; এরপর তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করাও হয়। কিন্তু তারা বলেছেন, তারা ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আমাদের কিছুই করার নেই; কারণ প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা প্রবেশপত্রে এই ৩ পরীক্ষার্থীর ছবি রয়েছে’ বলে জানান এই কেন্দ্র সচিব।

ঘটনার সত্যতা খুঁজতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী দক্ষিণ নওপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়টি একেবারেই ভাঙা চোরা; রুম রয়েছে ৩টি। দরজা-জানালা বলতে কিছুই নেই। ওপরের দিকে ধারির বেড়া, নিচের দিকে টিন-বাঁশের বেড়া, তাও আগলা। এরমধ্যে একটি রুমের ভেতরে হাতে গোনা কয়েকটা বেঞ্চ আছে; অন্য দুই রুমে জ্বালানি সামগ্রী রাখা হয়েছে।

নওপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আলম বলেন, দক্ষিণ নওপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন ক্যানসার রোগে আক্রান্ত। এ কারণে দীর্ঘ ৬ মাস ধরে বিদ্যালয়টিতে কোনো ক্লাস হয় না। এমনকি বিদ্যালয়টিতে কোনো শিক্ষার্থীও নেই। তারপরও কেমন করে এ বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে বুঝে উঠতে পারছি না।

নওপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের বিধিমালায় থাকা শর্তপূরণ করতেই ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ভাড়া করে ৫ম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইমরান হোসেন।

নওপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন ক্যানসার রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে তাঁর সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে সানজিদা আক্তার তিষার মা মনোয়ারা আক্তার নিশ্চিত করেছেন, তার মেয়ে আখানগর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী।

তবে বিষয়টি অস্বীকার করে নওপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, আমার ভাই প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন অসুস্থ। তার অবর্তমানে আমি দায়িত্ব পালন করছি। তিনি বলেন, আমার বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণির তিনজন শিক্ষার্থী সমাপনী পরীক্ষা দিচ্ছে। তারা ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী নয়। বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়নি, এ কারণে আশপাশের কোনো অভিভাবক তাদের সন্তানদের এ বিদ্যালয়ে ভর্তি করায় না। তাই বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী নেই বলে জানান সভাপতি আব্দুর রশিদ।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লিয়াকত আলী সরকার এই বিষয়ে বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষার্থী সহ ওই বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এই ব্যবস্থায় তার উপজেলায় আর কেউ পরীক্ষা দিচ্ছে কিনা বা ঠিক কতজন দিচ্ছে তার তথ্য জানা যায়নি। এমনকি এই ধরনের ‘প্রক্সি পরীক্ষার্থী’ ধরার জন্য তারা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর করা ছাড়া কোনো অনুসন্ধান নেই বলে তিনি জানান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist