কে এম রুবেল, ফরিদপুর

  ২০ নভেম্বর, ২০১৭

বন্দরে ভিড়তে পারে না নৌযান পদ্মায় আটকে থাকে জাহাজ

নথিপত্রে ‘নদীবন্দর’ উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে নাব্য সংকটে বন্দরেই ভিড়তে পারে না পণ্যবাহী নৌযান। ফলে পদ্মার ভেতরেই আটকে থাকতে হয় তাদের। এই অবস্থা ফরিদপুর নদী বন্দরের। দুই বছর আগে ফরিদপুরের সিএ্যান্ডবি ঘাটকে ‘নদী বন্দর’ ঘোষণা হয়। কিন্তু দুই বছর পার হলেও সেখানে শুরু হয়নি কোনো বন্দরের উন্নয়ন কাজ। ঘাট এলাকায় ড্রেজিংও না হওয়ায় নাব্যতা সংকটে ভুগছে কয়েক কিলোমিটার এলাকা। এতে ঘাটে আসতে পারছে না ২০টি পণ্যবাহী কার্গো ও ট্রলার। অনেকে আবার সপ্তাহকালের অধিক সময় ধরে ঘাট থেকে ৫-৬ কিলোমিটার দূরের আটকে আছে। ফলে বিপাকে পড়তে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।

ঘাট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সিনিয়র সহকারী সচিব মাহফুজা আখতার স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ গেজেট অতিরিক্ত সংখ্যায় ফরিদপুরের সিএ্যান্ডবি ঘাটকে ‘ফরিদপুর নদী বন্দর’ ঘোষণা করা হয়। আর ২০১৭ সালের ০৪ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর নদী বন্দর হিসেবে ইজারা দেয়া হয়। পদ্মা নদীর সংলগ্ন ফরিদপুরের সদর উপজেলার উত্তরের সীমানা ডিক্রির চর ইউনিয়নের টেপুরা কান্দি, দক্ষিণের সীমানা আলীয়াবাদ ইউনিয়নের সাদিপুর মৌজা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।

আটকে থাকা নৌযানের নাবিক ও সহযোগিরা জানান, মাঝারি ধরণের পণ্যবাহী নৌযান চলাচলের জন্যে কমপক্ষে ৮ ফুট নাব্যতা থাকার প্রয়োজন হয়, কিন্তু পদ্মার ওই অংশে কোথাও কোথাও নাব্যতা রয়েছে ৪ ফুটেরও কম। এতে মালবাহী নৌযান নিয়ে ঘাটে পৌঁছান যাচ্ছে না। অনেকে আবার সপ্তাহকালের অধিক সময় ধরে এখানে আটকে আছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়ছেন নৌযান মালিক ও ব্যাবসায়ীরা।

এই নৌপথে গম আমদানীকারক শরিফুল ইসলাম ও সিমেন্ট ব্যবসায়ী হেলাল রহমান জানান, সময় মত মালামাল না আসায় আটকে থাকা কার্গো-ট্রলার থেকে ছোট ছোট নৌযান ব্যবহার করে পণ্য খালাস করে ঘাটে আনা ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা। তাই অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী তাদের।

সাবেক কাউন্সিলর এমএ সালাম লাল মিয়া জানান, এই ঘাটকে ঘিরে রয়েছে ৫-৬ হাজার শ্রমিকের জীবন ও জীবিকা। যাদের একটি বড় অংশ অলস সময় কাটাচ্ছেন। শ্রমিকনেতা ও জনপ্রতিনিধি মনে করেন, এঅবস্থা চলতে থাকলে নৌযানে পন্য পরিবহন কমে যাবে এতে বেকার হয়ে পড়বে শ্রমিকরা।

ঘাট ইজারাদার কর্তৃপক্ষ নাফিজুল ইসলাম তাপস জানান, এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের প্রচেষ্টচায় সিএন্ডবি ঘাট ফরিদপুর নদী বন্দরে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে চট্রগ্রাম, নারায়নগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন বন্দর থেকে সরাসরি পন্য আসে ফরিদপুর নদী বন্দরে। আর ফরিদপুর থেকে প্রতিদিন গরু ও ধান, পাটসহ বিভিন্ন পন্য পরিবহন করা হয় বিভিন্ন এলাকায় এবং বিভিন্ন বন্দর থেকে সিমেন্ট, বালু, কয়লা, রডসহ অন্তত ৫০ ধরণের পন্য আনা-নেওয়া করা হয়। তিনি মনে করেন, নাব্যতা সংকট দূর করা না হলে মালামাল পরিবহন করে যাবে, এতে কমে যাবে রাজস্ব আদায়। এছাড়া ঘাটের পল্টুনসহ উন্নয়ন না করা হলে ঐতিহ্য হারাবে এ ঘাট।

ফরিদপুর চেম্বারের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বরেন, ফরিদপুর নদী বন্দরটি এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। নদীর নাব্যতা সমস্যার নিরসন না হলে ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম কিংবা নারায়নগঞ্চ থেকে মাল আনতে পারছে না। তিনি দ্রুত নদী খননের দাবী জানান।

যদিও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে এরই মধ্যে কাজ শুরু কর্তৃপক্ষ। জরিপ শেষে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে বলে জানান বিআইডব্লিউটিএ এর উপ পরিচালক (সার্ভে) আশফাকুর রহমান। চলতি বছরে ফরিদপুর নদী বন্দর ৩৭ লাখ টাকায় ইজারা দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বন্দরের সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে নদী পথে পন্য পরিবহনে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে, এতে সরকারের রাজস্বও বেড়ে যাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist