হাসমত আলী, গাজীপুর

  ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

জয়দেবপুর-কমলাপুর ডাবল রেললাইন

যানজট মুক্ত হবে মহাসড়ক

রাজধানী ঢাকা আর গাজীপুর পাশাপাশি জেলা। চাকরি, লেখাপড়া, ব্যবসা কিংবা অন্যান্য প্রয়োজনে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ গাজীপুর থেকে ঢাকা কিংবা ঢাকা থেকে গাজীপুর যাতায়াত করেন। এর পাশাপাশি দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমবঙ্গের মানুষও এ জেলার সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথ দিয়ে যাতায়াত করেন। গাজীপুর জেলা শহর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটারের মতো। সাধারণ গতির কোনো পরিবহনে পথের বিভিন্ন স্টপেজে যাত্রাবিরতি দিয়ে এ পথটুকু পাড়ি দিতে এক কিংবা সোয়া ঘণ্টা সময় লাগার কথা। কিন্তু সড়কপথে গণপরিবহনে এখন সময় লাগে প্রায় চার ঘণ্টা। দীর্ঘ যানজটে পড়লে এ সময় আরো বেশি সময় লাগে। তবে রেলপথে এখনো এক থেকে সোয়া ঘণ্টা এ পথ যাওয়া যায়। তাছাড়া বাসের চেয়ে ট্রেনের ভাড়াও কম। তাই রেলপথে গাজীপুরে যাত্রী ক্রমাগতই বাড়ছে।

জয়দেবপুর জংশনের স্টেশনমাস্টার মো. শাহজাহান জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা ডিভিশনের স্টেশনগুলোর মধ্যে জয়দেবপুর জংশন যাত্রী পরিবহনের সংখ্যার দিক থেকে তৃতীয় এবং আয়ের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে।

জানা গেছে, গাজীপুরে কয়েক হাজার শিল্পপ্রতিষ্ঠান, পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ধান গবেষণা, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, টাকশাল, সমরাস্ত্র কারখানাসহ বেশ কিছু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

ঢাকার এয়ারপোর্ট এলাকার ‘ঢাকা রিজেন্সি অ্যান্ড রিসোর্ডে’ অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার পদে চাকরি করেন নকিবুল ইসলাম। তার গ্রামের বাড়ি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের হাড়িনাল এলাকায়। গ্রামের বাড়িতে বসবাস করে তিনি ওই চাকরি করেন। তিনি তুরাগ এক্সপ্রেস ট্রেনের একজন নিয়মিত যাত্রী।

তিনি জানান, চাকরিজীবী ও ক্ষিার্থীদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় তুরাগ এক্সপ্রেস ট্রেনটি। ভাড়া মাত্র ১৫ টাকা। আর মাসিক ভাড়া ৪৫০ টাকা। ট্রেনটি কমলাপুর থেকে জয়দেবপুর জংশনের মধ্যবর্তী সব স্টেশনেই যাত্রাবিরতি দেয়। সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে জয়দেবপুর স্টেশন থেকে এবং বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে কামলাপুর থেকে ট্রিনটি ছাড়ে। ৬টি বগি সংবলিত এ ট্রেনে জয়দেবপুর ও টঙ্গী জংশন এবং ধীরাশ্রম স্টেশন থেকে প্রতিদিনই অন্তত দুই হাজার যাত্রী ঢাকায় প্রবেশ করে এবং কাজ শেষে বাড়ি ফেরেন। স্থান সংকুলান না হওয়ায় দুজনের সিটে তিনজন করে বসে, ট্রেনের ভিতর দাঁড়িয়ে, ছাদে চড়ে গাদাগাদি করে প্রতিদিনই যাত্রীরা যাতায়ত করেন।

একই রকম কথা জানালেন তুরাগ ট্রেনের নিয়মিত যাত্রী সিরাজ দৌল্যাহ ও সাব্বির বিন দারাইন। সিরাজ দৌল্যাহ চাকরি করেন তেজগাঁওয়ের অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স লিমিটেডে ও সাব্বির চাকরি করেন একই এলাকার ডোডি ট্রিম লিমিটেডে। প্রতিদিন তারাও গাজীপুর থেকে অফিস করেন।

তারা জানান, বাসে তেজগাঁও পর্যন্ত যেতে এখন সময় লাগে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা। যানজটে পড়লে সময় আরো বেশি লাগে। এতে সময়মতো অফিসে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। অপরদিকে, ট্রেনে জয়দেবপুর থেকে মধ্যবর্তী ধীরাশ্রম, টঙ্গী, বিমানবন্দর, বনানী ও ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে যাত্রাবিরতি দিয়ে এবং অন্য ট্রেনের ক্রসিংসহ তেজগাঁও পর্যন্ত যেতে সময় লাগে মাত্র এক ঘণ্টা। নির্দিষ্ট সময় ট্রেন ছাড়লে অফিস ধরতে কোনো সমস্যা হয় না।

এদিকে, ট্রেনের পাশাপাশি গাজীপুরের মহাসড়ক দিয়েও যাত্রীরা চলাচল করেন। ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা দিয়ে গাজীপুরের বিভিন্ন রুটের যানবাহনের পাশাপাশি জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ, জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কের যানবাহনগুলো একযোগে ঢাকার দিকে প্রবেশ এবং ঢাকা থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ঢাকার অংশে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। যার কারণে মহাসড়কের এ অংশে যানবাহন সাধারণ গতিতে চলতে পারে না।

গাজীপুর সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এ বি এম সাদ্দাম হোসেন জানান, মহাসড়কগুলোতে গাড়ির সাধারণ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার। জয়দেবপুর চৌরাস্তা দিয়ে প্রতি মিনিটে ২৫টির মতো গাড়ি ঢাকা অভিমুখে প্রবেশ করে। মহাসড়কের এ অংশে পারাপারের নির্দিষ্ট স্থান নেই। গার্মেন্ট শ্রমিকরা যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে মহাসড়ক পারাপার, চালকদের রাস্তায়ই গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানো, বাইপাসে গাড়ি পাসের সময় সিগন্যাল পড়াসহ বেশি যানবাহন চলাচল করার কারণে এ অংশে সাধারণ গতিতে গাড়ি চলাচল করতে পারে না।

জয়দেবপুর জংশনের স্টেশনমাস্টার মো. শাহজাহান জানান, এ জংশন দিয়ে প্রতিদিন চার হাজার টিকেটধারী যাত্রী যাতায়াত করেন। এ ছাড়া বেসরকারি ট্রেনে আরো কয়েক হাজার যাত্রী চলাচল করেন। এ জংশনে যাত্রীর চাপ তুলনামূলক বেশি। লোকাল ট্রেনগুলো সোয়া ঘণ্টায় আর আন্তঃনগর ট্রেনগুলো ৫০ মিনিটে ঢাকা থেকে জয়দেবপুর চলাচল করতে পারে।

তিনি জানান, তুরাগ ট্রেনের আসনসংখ্যা ৪০০-র মতো হলেও জয়দেবপুর জংশন থেকে ৭০০-৮০০ যাত্রী ঢাকায় যান। কমলাপুর থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ডাবল রেললাইন স্থাপিত হলে আরো কম সময়ে যাত্রীরা যাতায়াত করতে পারবেন। এতে এ জংশনে যাত্রীসংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে ও আয়ও বাড়বে। নকিবুল ইসলাম, সাব্বির বিন দারাইন, সিরাজ দৌল্যাহসহ ট্রেনে চলাচলকারী অনেক যাত্রীর অভিমত, ঢাকা থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ডাবল রেললাইন স্থাপিত হলে তখন প্রতিঘণ্টায় জয়দেবপুর-কমলাপুর ট্রেন ছাড়া সম্ভব। এতে ঢাকা-গাজীপুর যাতায়াত করতে সময় লাগবে এক ঘণ্টার কম বা তার চেয়েও কম। সময় ও অর্থ বাঁচাতে অনেকেই ট্রেনে যাতায়াতে আগ্রহী হবেন। আর যখন প্রচার হবে এক ঘণ্টায় ট্রেনে ঢাকা থেকে গাজীপুর যাতায়াত করা যায়, তখন সময় বাঁচাতে হলেও গাজীপুরের যাত্রীদের পাশাপাশি দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম বঙ্গের যাত্রীরাও ট্রেন পথে অন্তত গাজীপুর পর্যন্ত যাতায়াতে আগ্রহী হবেন। এর অন্যতম কারণ গাজীপুরের জয়দেবপুর জংশন থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে জয়দেবপুর চান্দনা চৌরাস্তা। সেখান থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ধরে প্রায় যানজটবিহীনভাবে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমবঙ্গের যেকোনো জেলায় সহজেই আসা-যাওয়া করা যায়। এতে শুধু গাজীপুরের নয় উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমবঙ্গের গাড়ি ঢাকায় প্রবেশ কমে আসবে। অর্থাৎ গাজীপুরের পাশাপাশি ঢাকার যানজটও কমে আসবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist