জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট

  ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

শুধু সাইনবোর্ডেই ব্যয় অর্ধকোটি টাকা

লালমনিরহাটের অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কর্মসৃজন প্রকল্পের বেশির ভাগ অর্থই লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। শুধু ভাউচার বানিয়ে জায়েজ করা হয়েছে লাখ লাখ টাকা।

জানা গেছে, অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকার সারা দেশে কর্মসৃজন প্রকল্পে ৪০ দিনের কর্মসূচি চালু করে। যার ধারাবাহিকতায় লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় দুই পর্যায়ে ৮০ কর্মদিবসে ছিন্নমূল শ্রমিকরা রাস্তাঘাট, খেলার মাঠ, বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মাঠে মাটি ভরাটের কাজ করেন। দৈনিক ২০০ টাকা মজুরিতে সাধারণ শ্রমিকরা ও ২৫০ টাকা মজুরিতে সর্দাররা কাজের সুযোগ পান।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় দুই পর্যায়ে ৫৫৮টি প্রকল্পের বিপরীতে ১৪ কোটি ১৫ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। যার মধ্যে আট হাজার ৭৪৭ সাধারণ শ্রমিকের মজুরি ১৩ কোটি ৯৯ লাখ ৫২ হাজার ও ৫৫৮ শ্রমিক সর্দারের মজুরি ধরা হয়েছে ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। এসব প্রকল্পে একটি করে সাইনবোর্ড সাঁটানোর জন্য পৃথক ৭৭ লাখ ৩৯ হাজার ১৯৫ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিটি প্রকল্পের জন্য একটি সাইনবোর্ড সাঁটানো বাধ্যতামূলক। এসব সাইনবোর্ড তৈরির ভাউচারে লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় বিস্তার ব্যবধান লক্ষ করা গেছে। কাঠের ফ্রেমে প্রতিটি ডিজিটাল সাইনবোর্ড তৈরিতে পাটগ্রাম উপজেলায় খরচ দেখানো হয়েছে ৭০০ টাকা। অথচ ওই একই সাইনবোর্ড তৈরিতে সদর ও আদিতমারীতে দুই হাজার ৯৫০ টাকা এবং কালীগঞ্জ উপজেলায় দুই হাজার ৮৫০ টাকার খরচ দেখানো হয়েছে। জেলার ভেতরে সাইনবোর্ড তৈরির খরচের এমন ব্যবধান লুটপাটকে প্রমাণ করে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইনবোর্ডের আট হাজার ১০০ টাকা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ে ফেরত পাঠালেও অন্যদের এমন তথ্য নেই। অর্থবছর শেষ হওয়ায় প্রকল্পের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়সহ ঊর্ধ্বতন দফতরে পাঠিয়েছে সংশ্লিষ্ট উপজেলা কমিটি।

শুধু তাই নয়, প্রতিটি প্রকল্পের চেয়ারম্যানদের আনুষঙ্গিক খরচের জন্য বরাদ্দ থাকলেও কেউ কেউ আংশিক পেয়েছেন। আবার অনেকে কোনো টাকাই পাননি। প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস কাগজ-কলমে ঠিক রেখে লোপাট করেছে এসব অর্থ। ইউনিয়ন কমিটির খরচ দেখানো হলেও বাস্তবে ইউনিয়ন কমিটি কোনো খরচ পায় না বলে দাবি করেছেন একাধিক জনপ্রতিনিধি।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একাধিক ইউপি সদস্য ও জনপ্রতিনিধি জানান, জেলার ৫টি উপজেলার শুধু সাইনবোর্ড ও তার ভাউচার মেলালে বেড়িয়ে আসবে এসব প্রকল্পের লুটপাটের আসল তথ্য। এ জন্য তারা বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।

কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রাশেদুল ইসলাম প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, তার উপজেলার ১১৪টি প্রকল্পে ১১৪টি সাইনবোর্ড তৈরি করা হয়। যার প্রতিটির মূল্য ধরা হয়েছে দুই হাজার ৮৫০ টাকা। প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল তাই খরচ দেখানো হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই উপজেলার একাধিক ইউনিয়নের সদস্য জানান, এই জেলায় কর্মসৃজন প্রকল্পে সব থেকে বেশি টাকা লোপাট হয়েছে এই উপজেলায়।

সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল মতিন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ইউনিয়ন কমিটিকে খরচ দিলেও তারা শ্রমিকদের হাজিরা বইসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি প্রস্তুত রাখেন না। তাই এ বছর ইউনিয়ন কমিটিকে কোনো খরচ করতে দেওয়া হয়নি।

জেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার সুজা উদ দৌলা জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist