রাজীবুল হাসান, শ্রীপুর (গাজীপুর)

  ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

পোলট্রি বর্জ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ২০০ পরিবার

গাজীপুরের শ্রীপুরে উন্মুক্ত স্থানে পোল্ট্রি বর্জ্য ফেলায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে এক গ্রামের ২০০ পরিবারের মানুষ। গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিক, মাদরাসা ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। ঘটনাটি উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামের। এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুম রেজা। গতকাল শুক্রবার সরেজমিন ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আমান বিল্ডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান নয়াপাড়া বাজারের পাশে মুরগির মাংস, ডিম ও বাচ্চা উৎপাদন করছে। প্রতিষ্ঠানটি থেকে বেশ দূরে একটি উন্মুক্ত পতিত জমিতে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। বর্জ্যরে মধ্যে রয়েছে পচা ডিম, মরা মুরগি, নষ্ট খাদ্য ও অন্যান্য পচনশীল দ্রব্য। বর্জ্য ফেলার স্থানের পাশেই অবস্থিত একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, মাদ্রাসা ও বাজার। বর্জ্য অপসারণের স্থানের আশপাশে এক কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত ২০০ পরিবারের বসবাস। দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে বয়স্ক ও শিশুসহ অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীরা। তাছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক ও মাদরাসার অবস্থান খুব কাছে হওয়ায় দুর্গন্ধ ও স্বাস্থ্যঝুঁকির অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে যুক্তরা।

নয়াপাড়া গ্রামের শাহাদাত হোসেন বলেন, পোলট্রির দূষিত বর্জ্যরে কারণে এলাকায় টেকা দায়। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এলাকার মঞ্জুরুল নামের এক ব্যক্তি কারখানার সঙ্গে চুক্তি করে বর্জ্যগুলো এখানে এনে ফেলে বলেও গ্রামের কয়েকজন অভিযোগ করেন।

সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিককর্মী আবুল কালাম বলেন, সকাল থেকে ক্লিনিকে আসা রোগীরা বর্জ্যরে গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে যান। অনেক বয়স্ক রোগী দুর্গন্ধে বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। একই এলাকার আব্দুর রাজ্জাক অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে দুর্গন্ধের যন্ত্রণা সহ্য করে যাচ্ছি। কারখানার বর্জ্য উন্মুক্ত স্থানে ফেলার কোনো নিয়ম নেই। অথচ এখানে ময়লা ফেলে এলাকার ২০০ পরিবাকে হুমকির মধ্যে ফেলছেন তারা।

স্থানীয় গার্মেন্টকর্মী ফাতেমা বেগম বলেন, এলাকার অনেক গরু, ছাগল মারা গেছে। শিয়ালের কামড়ে সিরাজ, নবিরন, জামিরনসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। বর্জ্যরে স্তূপের আশপাশে দিনরাত শত শত শেয়াল ঘোরাফেরা করে। সুয়োগ পেলেই মানুষজনকে কামড় দেয়। স্থানীয় সবদুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমরা এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে উপজেলা অফিসে স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে বাঁচতে লিখিত অভিযোগ করেছি।

এ বিষয়ে মোর্শেদ মঞ্জুরুল বলেন, কারখানার ইটিপি নাই, আমি কী করবো। আর আমি একলা ময়লার ব্যবসা করি না।

আমান পোলট্রি ও হ্যাচারির সহকারী মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বর্জ্য ফেলার জায়গাটি হ্যাচারি কর্তৃপক্ষ লিজ নিয়েছে। আমরা মঞ্জুরুলের মাধ্যমে আমাদের প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ওইখানে অপসারণ করি। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের অনুমতি নিয়েই তা করা হচ্ছে। শুরুতে এখানে জনবসতি ছিল না কিন্তু বর্তমানে অনেক বাড়িঘর হওয়ায় আমরা বর্জ্য অপসারণের জন্য অন্য একটি জমি দেখেছি। খুব শিগগিরই বর্জ্যগুলো লোকালয়ের বাইরে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা হবে।

গাজীপুর ইউনিয়নের ৩নং ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, আমার অনুরোধে কয়েক মাস প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ফেলা থেকে বিরত ছিল। আবার শুরু করেছে। এলাকাবাসীর সঙ্গে আমিও একাত্মতা প্রকাশ করে এমন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলার উপযুক্ত বিচার দাবি করছি।

শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুম রেজা বলেন, এলাকাবাসীর অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্তদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। দুয়েকদিনের মধ্যে শুনানি হবে। পরিবেশ দূষিত করার সঙ্গে জড়িত থাকলে তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist