রেজাউল করিম রেজা, জয়পুরহাট
ট্রাউজার তৈরি করে স্বাবলম্বী জয়পুরহাটের দরিদ্র নারীরা
বাড়িতে বসে সংসারের পাশাপাশি জয়পুরহাটে প্রায় সাত হাজার হতদরিদ্র নারী ট্রাউজার তৈরি করছেন। ট্রাউজার তৈরি করে জয়পুরহাট সদর উপজেলায় নারীরা পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এখন তারা অনেকটাই সচ্ছল। মানসম্মত ও দাম কম হওয়ায় এখানকার উৎপাদিত ট্রাউজার রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, কুমিল্লা, সৈয়দপুর, রাজশাহী, রংপুরসহ দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় নিয়ে যাচ্ছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। জয়পুরহাট সদর উপজেলার শান্তিগনর, তেঘরবিশা, ভাদসা গুচ্ছগ্রাম, দুর্গাদহ, মোহাম্মদাবাদ, নারায়ণপাড়া, প্রফেসরপাড়া, দেওয়ানপাড়া, পাকারমাথাসহ প্রায় চল্লিশটি গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে নিজস্ব সেলাই মেশিন দ্বারা প্রায় সাত হাজার নারী সংসারের পাশাপাশি ঘরে বসেই ট্রাউজার তৈরি করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন। এদের মধ্যে একই পরিবারে অসহায়, অতিনিম্নবিত্ত, স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা ও আদিবাসীর সংখ্যায় বেশি। শহরের প্রায় ৭০-৮০ টার মতো ট্রাউজার কারখানা রয়েছে। কারখানা মালিকরা ট্রাউজার তৈরির থান কাপড়, গজ কাপড়, টুকরা কাপড়, চেন, রাবার, সুতাসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ঢাকার ইসলামপুর, টঙ্গী, সৈয়দপুর থেকে নিয়ে এসে ওইসব হতদরিদ্র নারীদের বাড়িতে সরবরাহ করে চুক্তিভিত্তিতে ট্রাউজার তৈরি করে নেয়। প্রতিটি ট্রাউজার ১৫-২০ টাকা হারে মজুরি দেওয়া হয়। প্রতিদিন একজন ২০-২৫টি ট্রাউজার তৈরি করেন।
জয়পুরহাটের ট্রাউজার তৈরির নারী কারিগর শহরের জানিয়ার বাগানের রাবেয়া বেগম, বিউটি আক্তার, পাকার মাথার রোকসানা, জামালপুরের রেখাসহ অন্যরা জানান, সরকারের আরো ঋণ সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে নিজেরাই গড়ে তুলতে পারবেন ট্র্রাউজার কারখানা। ফলে একদিকে যেমন স্বাবলম্বী হবেন এখানকার হতদরিদ্র, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারী কারিগররা অন্যদিকে সরকারও পাবে রাজস্ব। জয়পুরহাট শহরের দেওয়ান পাড়ার ট্রাউজার কারখানা মালিক আমিনুল ইসলাম মোকন ও শান্তিনগর এলাকার মুনজুরুল ইসলাম মিঠু বলেন, প্রতিদিন আমরা এসব নারী কারিগরদের দ্বারা ৫-৬ হাজার পিচ বিভিন্ন রকমের ট্রাউজার তৈরি করে নেই। এই তৈরি ট্রাউজার রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের প্রায় সব জেলার ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে নিয়ে যান।
জয়পুরহাট বিসিক শিল্পনগরীর উপ-পরিচালক মুহ. শফিকুল আলম বলেন, প্রায় সাত হাজার হতদরিদ্র নারী এ ট্রাউজার তৈরিতে যুক্ত আছেন, এতে তারা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এরই মধ্যে পর্যায়ক্রমে তাদের ৭৯ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে ও ঋণ সহায়তা চলমান রয়েছে এবং কারিগরি প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নে সহযোগিতা করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
"