মো. সবুজ হোসেন, নওগাঁ

  ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের পথে নওগাঁর দুবলহাটি রাজবাড়ি

নওগাঁ জেলা শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী দুবলহাটি রাজবাড়ি। প্রায় দুইশ বছরের প্রাচীন এই রাজবাড়িটি নওগাঁবাসীর কাছে আকর্ষণের কেন্দ্র। মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব ও যথাযথ সংস্কারের অভাবে শেষ পরিণতির পথে দুবলহাটি রাজবাড়িটি। এরই মধ্যে দুর্বৃত্তরা প্রাসাদের লোহার রড, ইট, দরজা-জানালা, কড়ি-বর্গা খুলে নিয়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকায় বহু সংবাদ প্রকাশও হয়েছে। তবু প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পথে ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি।

ইতিহাস থেকে জানা গেছে, পাঁচ একর এলাকাজুড়ে বিশাল প্রাসাদ। আর প্রসাদের বাইরে ছিল দীঘি, মন্দির, স্কুল, দাতব্য চিকিৎসালয়, ১৬ চাকার রথসহ বিভিন্ন স্থাপনা। রাজপ্রাসাদের সামনে রোমান স্টাইলের বড় পিলারগুলো রাজাদের রুচির পরিচয় বহন করে। ১৮৬৪ সালে রাজপরিবারের উদ্যোগে একটি স্কুল স্থাপন করা হয়। পরবর্তী সময়ে স্কুলটির নামকরণ হয় রাজা হরনাথ উচ্চ বিদ্যালয়। প্রধান শিক্ষক ছিলেন একজন ইংরেজ। রাজা হরনাথ রায় চৌধুরীর জনহিতকর ও সামাজিক কাজের অবদান আছে অনেক। স্টেটের খরচে গরিব ও মেধাবী ছাত্রদের লেখাপড়ার ব্যবস্থাও ছিল। এ ছাড়া, দুবলহাটি রাজপ্রাসাদে ৩৫০ ঘর ছিল। ছিল ৭টি আঙিনা। রাজবাড়িটির ভিতরে কোনোটি ৩ তলা আবার কোনোটি ৪ তলা ভবনও ছিল। দুবলহাটি ইউনিয়নের দুই বাসিন্দা লিয়াকত আলী ও শাহাজান আলী জানান, আজ থেকে ৩০ বছর আগেও এ রাজবাড়িটি চোখে পড়ার মতো ছিল, দূরদূরান্ত থেকে মানুষ দেখতে আসতো কিন্তু আজ আর দেখার মতো কিছুই নেই। রাজবাড়িটি রক্ষায় উচিত ছিল উওরসূরিদের এবং কর্তৃপক্ষের সঠিক প্রদক্ষেপ নেওয়ার।

রাজা কৃঙ্করীনাথ রায় চৌধুরীর নাতি ও কুমার অমরেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরীর ছেলে রাজপরিবারের ৫৪তম পুরুষ রবীন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী জানান, হরনাথ রায় চৌধুরী প্রথম রাজা খেতাব পেয়েছিলেন। একটি গোল্ডেন সিলভার ও একটি আইভরির তৈরি সিংহাসনও ছিল। কিন্তু পরবতী সময়ে ব্রিটিশরা সিংহাসন দুটি নিয়ে যায়। রাজা কৃঙ্করীনাথ রায় চৌধুরী পিতা রাজা হরনাথ রায় চৌধুরী অবসাদ যাপনের জন্য ‘রনবাগ’ নামে একটি বাগানবাড়ি তৈরি করেছিলেন। প্রাসাদের ভিতরে ও বাইরে ছিল নাটক এবং যাত্রামঞ্চ। নিয়মিত নাটক, গান ও যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হতো। দুবলহাটির জমিদারি এলাকা ছিল বগুড়া, সিলেট, দিনাজপুর, পাবনা, রংপুর ও ভারতের কিছু অংশে। দুবলহাটি রাজবাড়িটির সংস্কার ও এটি রক্ষার বিষয়টি নিয়ে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুশতানজিদা পারভীনের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, দুবলহাটি রাজবাড়িটির মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা আছে বলে শুনেছি, মামলা নম্বর জানা নেই, মামলাটি নিষ্পত্তি না হলে রাজবাড়িটি যথাযথ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব নয়।

এদিকে, দুবলহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান আজম বলেন, দুবলহাটি রাজবাড়িটি আমাদের অহঙ্কার কিন্তু সংস্কারের অভাবে ঐতিহ্যবাহী দুবলহাটি রাজবাড়ি আজ ধ্বংসের পথে। এটির সংস্কার ও রক্ষায় আমরা অনেকবার ঊর্ধ্বতন মহলে জানিয়েছি কিন্তু আজ পর্যন্ত রাজবাড়িটি রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist